ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

বসুন্ধরা হতে চায় দেশীয় ফুটবলের কিং

রুমেল খান

প্রকাশিত: ২৩:৪৫, ২৩ নভেম্বর ২০২৪

বসুন্ধরা হতে চায় দেশীয় ফুটবলের কিং

বসুন্ধরা কিংস

দেশের অন্য সব ক্লাবকে যোজন দূরত্বে পেছনে ফেলে অনেক এগিয়ে গেছে বসুন্ধরা কিংস। সময়ের পরিক্রমায় তারাই এখন সময়ের সেরা ফুটবল ক্লাব। ঘরোয়া ফুটবলে একের পর এক চোখ ধাঁধানো সাফল্য কুড়িয়ে ক্রমেই নিজেদের নিয়ে যাচ্ছে আরও উঁচুতে। দেশের ৭৫ বছরের লিগ-ইতিহাসে প্রথম ক্লাব হিসেবে টানা ৪ বার লিগ শিরোপা অর্জনের পর গত মৌসুমে তাদের ক্লাব ইতিহাসের প্রথম ঐতিহাসিক ট্রেবল জিতে নিজেদের সাফল্যের মুকুটে যোগ করেছিল আরও কিছু স্বর্ণালি পালক।

দিন দিন তারা হয়ে উঠছে আরও অপ্রতিরোধ্য। যা অন্য ক্লাবগুলোর কাছে ঈর্ষার বিষয়। ঘরোয়া ফুটবলের সাফল্যের শীর্ষে আরোহণের পথে শুক্রবার তারা জিতেছে আরেকটি ট্রফি। নতুন ফরম্যাটের এক ম্যাচের টুর্নামেন্ট ‘বাংলাদেশ ২.০ চ্যালেঞ্জ কাপ’-এ তারা মোহামেডানকে ৩-১ গোলে হারিয়ে এই কৃতিত্ব দেখায়।
বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলে একেক সময় একেক ক্লাব সাফল্যের শিখরে অবস্থান করেছে। ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাব, ইস্ট পাকিস্তান জিমখানা, বেঙ্গল গভর্মেন্ট প্রেস, আজাদ স্পোর্টিং ক্লাব, ইস্ট পাকিস্তান আইডিসি ঢাকা ওয়ান্ডারার্স, মোহামেডান স্পোর্টিং, আবাহনী ক্রীড়া চক্র, বিজেএমসি, ব্রাদার্স ইউনিয়ন, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র, শেখ জামাল ধানমন্ডি, শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র প্রভৃতি। এই সময়ে আবির্ভাব ঘটে আরেকটি ক্লাবের, যারা গত সাত বছরে মোট ১২টি শিরোপা জিতে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছে। ক্লাবটির নাম বসুন্ধরা কিংস। কিংস ঘরোয়া ফুটবলের সব ধরনের ট্রফিই জিতেছে। 
দেশের বহুল আলোচিত ফুটবল ক্লাব বসুন্ধরা কিংস প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১৩ সালে। ক্লাবটি ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত। ক্লাবটি বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকানাধীন। ২০১৩ সালে ক্লাবটি গঠিত হলেও প্রথমদিকে খুব বেশি সক্রিয়তা ছিল না ক্লাবটির। ২০১৬ সালে পাইওনিয়ার লিগ জয়ের পর দলটি তৃতীয় স্তরের লীগের জন্য উত্তীর্ণ হয়। তবে দলটি দ্বিতীয় স্তরের বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে (বিসিএল) খেলার ইচ্ছা প্রকাশ করে এবং ২০১৭-১৮ মৌসুমে কোচ এসএম আসিফুজ্জামানের অধীনে বিসিএলে চ্যাম্পিয়ন হয়ে বিপিএলে খেলার জন্য উত্তীর্ণ হয়। 
২০১৮ সালের ৫ সেপ্টেম্বর স্পেনের অস্কার ব্রুজোনকে নতুন ও ক্লাবের প্রথম বিদেশী কোচ হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। তার হাত ধরেই কিংস একের পর এক সাফল্য কুড়িয়ে নিয়েছে (১১টি শিরোপা)। কিংসে ২০১৮ ফিফা বিশ্বকাপে কোস্টারিকার হয়ে খেলা ড্যানিয়েল কলিন্ড্রেস এবং আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের হয়ে খেলা হারনান বার্কোস খেলেছেন। খেলেছেন রবসন রবিনহোর মতো ব্রাজিলিয়ান দক্ষ ফরোয়ার্ডও।  
এত অল্প সময়ে কিংস কিভাবে দেশের সেরা ফুটবল ক্লাব হয়ে উঠল? উত্তর হচ্ছেÑ প্রচুর অর্থ, সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা ও তার সার্থক বাস্তবায়ন, দলবদলের সময় দেশের সেরা খেলোয়াড় ও দক্ষ-কুশলী বিদেশী ফুটবলার সংগ্রহ, খেলোয়াড়দের লোভনীয় পারিশ্রমিক ও সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা প্রদান, কঠোর অনুশীলন করা, সম্পূর্ণ পেশাদারি মনোভাব নিয়ে ক্লাব পরিচালনা করা, টিম ম্যানেজমেন্ট ও কোচিং স্টাফদের স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেয়া, কঠোর নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে চলা প্রভৃতি। কিংস যেভাবে ‘মাস্টারপ্ল্যান’ করে অগ্রসর হয় এবং এবং সেটার সার্থক বাস্তবায়ন ঘটায়, তা যেমন অন্য ক্লাবগুলোর জন্য ঈর্ষার, তেমনি শিক্ষা নেওয়ারও বিষয়। 
অস্কার ব্রুজোনের পর কিংসে নতুন কোচ হয়ে এসেছেন রোমানিয়ার ভ্যালেরিউ তিতা। ৫৮ বছর বয়সী এই কোচকে আপাতত এক মৌসুমের জন্য চুক্তিবদ্ধ করা হয়েছে। কোচ হিসেবে তিতার সাফল্য মন্দ নয়। ২০১০ সালে সিরিয়ার আল ইত্তিহাদ এসসি আলেপ্পোকে এএফসি কাপ জিতিয়েছেন তিনি। মূলত এ কারণেই তাকে নিয়েছে কিংস। এ ছাড়াও একাধিক দফায় সিরিয়া জাতীয় দলেরও কোচের দায়িত্ব পালন করেছেন। আরও কাজ করেছেন রোমানিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, ইরাক, কুয়েত, লেবানন ও জর্দানের বিভিন্ন ক্লাবে। শুক্রবার চ্যালেঞ্জ কাপ জিতে তিতা পেলেন সাফল্যের মিঠা স্বাদ!

×