শিরোপাজয়ী বসুন্ধরা কিংস।
ঘরোয়া ফুটবলে সর্বশেষ ট্রেবলজয়ী বসুন্ধরা কিংস আরেকটি শিরোপা জিতে মৌসুম শুরু করেছে। গত জুলাই-আগস্টে কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেওয়া আন্দোলনে শহীদ হন শত শত ছাত্র-জনতা। সেই আন্দোলনে পতন হয় স্বৈরাচারী সরকারের, বিজয় হয় ছাত্র-জনতার। সেই শহীদদের স্মরণে আজ শুক্রবার (২২ নভেম্বর) বসুন্ধরা কিংস এ্যারেনায় অনুষ্ঠিত হয়েছে নতুন ফরম্যাটের মাত্র এক ম্যাচের আসর, ‘বাংলাদেশ ২.০ চ্যালেঞ্জ কাপ’।
এদেশের ঘরোয়া ফুটবলের ইতিহাসে ব্যতিক্রমধর্মী এই ম্যাচের মধ্য দিয়ে শুরু হলো ২০২৪-২৫ মৌসুম। গত মৌসুমের ফেডারেশন কাপের চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংস এবং রানার্সআপ মোহামেডানকে নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় শুক্রবারের এক ম্যাচের এই আসরের ‘অঘোষিত ফাইনাল’। যাতে আগে গোল করেও হারে মোহামেডান। তাদেরকে ৩-১ গোলে হারিয়ে শিরোপা জিতে নেয় ‘দ্য কিংস’ খ্যাত বসুন্ধরা। বিজয়ী দলের তপু বর্মণ, ফয়সাল আহমেদ ফাহিম ও মিগুয়েল ফেরেরা এবং বিজিত দলের সুলেমান দিয়াবাতে ১টি করে গোল করেন।
ক্লাব ইতিহাসে এটা তাদের দ্বাদশ শিরোপা। সেই সঙ্গে কিংসের হয়ে এটা তাদের রোমানিয়ান কোচ ভ্যালেরিও তিতার-ও প্রথম শিরোপা। কদিন আগেই দলের দায়িত্ব নেয়া এই ‘হাই প্রোফাইল’ কোচ ব্যর্থ হন কিংসকে এএফসি কাপের নকআউট পর্বে নিয়ে যেতে। তিন ম্যাচের প্রতিটিতেই হারের স্বাদ পেয়েছিলেন। শুক্রবার চ্যালেঞ্জ কাপ জিতে কিংসের হয়ে প্রথম জয়েরও ‘মিঠা’ স্বাদ পেলেন তিনি!
ম্যাচের প্রথমার্ধে মোহামেডান ও দ্বিতীয়ার্ধে দু’দলই সমানতালে খেলেছে। তবে সার্বিকভাবে বল নিয়ন্ত্রণ, আক্রমণ, বিপজ্জনক আক্রমণ, গোলমুখে শুটিং, গোলের সুযোগ তৈরি-সবকিছুতেই এগিয়েছিল কিংস। ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় ছিলেন কিংসের অধিনায়ক ও ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার মিগুয়েল ফেরেরা। সাবেক স্বদেশী সতীর্থ রবসন রবিনহোর অভাব (ক্লাব তার সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করেনি) বুঝতেই দেননি। ম্যাচে এক গোল ও দুই এ্যাসিস্ট করার পাশাপাশি খেলেছেনও জবরদস্ত। যদিও বিস্ময়করভাবে ম্যাচসেরার পুরস্কার পান ডিফেন্ডার তপু বর্মণ ও বিজিত দলের সুলেমান দিয়াবাতে ১টি করে গোল করেন।
বিজয়ী দলের হাতে ট্রফি, মেডেল ও ২০ লাখ টাকার চেক তুলে দেন ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। আরও উপস্থিত ছিলেন বাফুফের সিনিয়র সহসভাপতি ইমরুল হাসানসহ আরও অনেকেই। মোহামেডান পায় রানার্সআপ মেডেল ও ৫ লাখ টাকার চেক।
৬২ মিনিট। খেলা চলাকালে হঠাৎ করেই মোহামেডানের গোলপোস্টের পেছনে থেকে দুটি এবং অন্য দিক থেকে আরও দুটি— মোট ৪টি ‘স্মোক ফ্লেয়ার’ মাঠে এসে পড়ে। লাল ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে মাঠের বেশিরভাগ অংশ। ফলে নিরাপত্তার কারণে খেলা থামিয়ে দিতে বাধ্য হন রেফারি। ধোঁয়া সরে গেলে ৯ মিনিট পর আবারও শুরু হয় খেলা। তার দুই মিনিট পরেই গোল করে সমতায় ফেরে কিংস। সেটাকেই ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট মনে করেছেন মোহামেডান কোচ আলফাজ আহমেদ। ম্যাচ শেষে তিনি বলেন, ‘স্মোক ফ্লেয়ারের কারণে খেলা বন্ধ হওয়াতে আমাদের মনোসংযোগ বিঘ্নিত হয়েছে। খেলার ছন্দও নষ্ট হয়েছে। ফলে এগিয়ে থেকেও গোল খেয়েছি। পরে আরও দুই গোল খেয়েছি। তাছাড়া কিংসের মাঠে তাদের হারানো বেশ কঠিন। মাঠ একটু অন্যরকম। প্রয়োজনের চেয়ে একটু বেশিই পানি ছিটানো হয়েছিল। তারপরও আমরা ভাল খেলার চেষ্টা করেছি।’
ভুটানের রেফারি বীরেন্দ্র রাই খেলা শেষের বাঁশি বাজালে ঐতিহাসিক চ্যালেঞ্জ কাপের প্রথম আসরের প্রথম শিরোপা জিতে আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে ওঠে কিংস। আর হতাশায় ভেঙ্গে পড়ে সাদাকালো শিবির।
রুমেল/এমএম