ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১

দেশকে বার বার শিরোপা এনে দিলেও ভাগ্য বদল হয়নি মনিকা চাকমাদের

নিজস্ব সংবাদদাতা, খাগড়াছড়ি

প্রকাশিত: ০৯:৫৪, ৫ নভেম্বর ২০২৪; আপডেট: ১০:০৬, ৫ নভেম্বর ২০২৪

দেশকে বার বার শিরোপা এনে দিলেও ভাগ্য বদল হয়নি মনিকা চাকমাদের

মণিকা ও ঋতুপর্ণা ঋতুপর্ণা চাকমা

সারাদেশের ন্যায় সাফ ফুটবল জয়ের আনন্দ ছড়িয়ে পড়েছে পাহাড়ের অজ পাড়া গায়েও। সে আনন্দ আর কোথাও নয়  মনিকা চাকমার গ্রামের বাড়ী খাগড়াছড়ি জেলার লক্ষীছড়ি উপজেলার দুর্গম সুমন্ত পাড়া গ্রামে। যে গ্রাম থেকে মনিকা চাকমা এখন জাতীয় নারী ফুটবল দলের তারকা খেলোয়ার।তবে বার বার শিরোপা এনে দিয়ে বাংলাদেশেকে বিশ্ব দরবারে,ভাগ্য বদল হয়নি মণিকা চাকমাদের।প্রতিবারই প্রতিশ্রতির বন্যায় ভাসলেও মনিকাদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয়নি। এবার মনিকা চাকমা ও ঋতুপর্ণা চাকমার গোলে শিরোপা ধরে রাখলেন লাল-সবুজের মেয়েরা। তবে প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা রাস্তা,ব্রিজ,বিদ্যুৎ সংযোগসহ অনান্য প্রতিশ্রতি দিলে তা রক্ষা না হতাশ মনিকার পরিবার ও প্রতিবেশীরা। 
গত ৩০ অক্টোবর কাঠমান্ডু দশরথ স্টেডিয়ামে নেপালকে ২-১ গোলে হারিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট জিতেছে বাংলাদেশের মেয়েরা। এবার মনিকা চাকমা ও ঋতুপর্ণা চাকমার গোলে শিরোপা ধরে রাখলেন লাল-সবুজের মেয়েরা।
 

এদিকে  সাফ ফুটবল গেইমসে নারী দল নেপালকে ২-১ গোলে হারানোর পর বাংলাদেশ জয় লাভ করলে যখন সারা দেশে আনন্দের বন্যা বইছে। সেই আনন্দ ছড়িয়ে পড়েছে খাগড়াছড়ি জেলার লক্ষীছড়ি উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দুরে দুর্গম সুমন্ত পাড়া গ্রামেও । যে গ্রামে বেড়ে উঠেছিলো মনিকা চাকমা। মনিকা চাকমার বেড়ে উঠা সহজ ছিলো না। তার বাবা বিন্দু কুমার চাকমা বলেন সাফ ফুটবলে বাংলাদেশ জয় লাভ করায় আমিও খুশি গ্রামবাসীরাও খুশী হয়েছে। এ জয়ে খুশী পুরো উপজেলা তথা জেলাবাসী। মনিকা চাকমা বাড়ীতে না থাকলেও পাহাড়ীদের পাশাপাশি অনেক বাঙ্গালীও তার বাবা-মার কাছে ছুটে গেছেন আনন্দ ভাগাভাগি করার জন্য। স্থানীরা বলেন মনিকা চাকমা যেন আগামী সাফ নারী ফুটবলে খেলে টানা তৃতীয় বারের মতো যেন বিজয় চিনিয়ে আনতে পারেন সেই প্রত্যাশাও করেন। মনিকা এখন তাদের এলাকার মডেল তাকে দেখে এখন অনেক ছেলে মেয়ে ফুটবল খেলায় আগ্রহী হয়েছে। এবং মনিকার মতো যাতে আরো ফুটবলার গড়ে উঠবে সে চেষ্টাও করছেন তারা। সে অনেক কষ্টে উঠে এসেছে, সে যেন ভবিষ্যতে ভালোভাবে চলতে পারে সরকার যেন সে ব্যবস্থা দেনএ প্রত্যাশা এলাকাবাসীর। তবে মনিকার চাকমার গ্রামে যেতে হলে দুর্গম কাচা রাস্তা ও সাঁকো পার হয়ে যেতে হয়। বিশেষ করে বর্ষাকালে অনেক কষ্টে যেতে হয়। নেই কোন সুপেয় পানির ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক। ২০২২ সালে প্রথম বার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর বিগত সরকার মানিকার চাকমা বাড়ীতে যাওয়ার জন্য রাস্তা ,একটি সেতু, বিদ্যুৎ,  ঘর করে দেয়ার কথা দিলেও  একটি ঘর ছাড়া আর কোন কিছু করে দেননি। স্থানীয়দের প্রত্যাশা ও দাবী দেশের সুনাম বয়ে আনা  মনিকা চাকমার  সব সমস্যা গুলো যেন বর্তমান সরকার বাস্তবায়ন করেন। 
২০০৩ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ির লক্ষীছড়ি উপজেলার প্রত্যন্ত এক গ্রামে মণিকা চাকমার জন্ম। মনিকার এ পর্যায়ে আসার পথটা ছিলো বন্ধুর। এগিয়ে চলার পথে বারবার বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলো, পরিবার ও সমাজ। তারপরও দমে যাননি। এগিয়ে গেছেন স্বপ্ন পূরণে।কৃষক পরিবারে জন্ম নেওয়া মনিকা চাকমা এখন সকলের পরিচিত মুখ। ফুটবলের প্রতি মনিকার চাকমার বাবা বিন্দু কুমার চাকমা ও মা রবি মালা চাকমার পছন্দ ছিল না। তাই বাবার চোখ ফাঁকি দিয়ে চুরি করে ফুটবল খেলতেন। ২০১১'তে বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ ফুটবল দিয়ে জেলা ক্রীড়া সংস্থার নজরে আসেন।২০১২ সালে শ্রীলংকায়  অনুষ্ঠিত এএফসির টুর্নামেন্টে অংশ নিয়ে মনিকা গোল করেছিল তিনটি।এর পরের গল্পটা শুধুই মনিকা চাকমার এগিয়ে যাওয়ার।২০১৩ থেকে পেশাদার ফুটবলে যাত্রা শুরু করা মণিকা বয়সভিত্তিক ফুটবলের ধাপ পেড়িয়ে ২০১৯ এ প্রথম সুযোগ পান জাতীয় দলে। দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট ছিনিয়ে আনতে পারায় সারাদেশের মানুষের মতো খুশি মণিকার চাকমার পরিবারের সদস্যরাও। তবে বিগত দিনের কিছু বাস্তবায়ন না হওয়ায় ক্ষোভ মণিকা চাকমার পরিবারে।

নেপালকে কাঁদিয়ে বাংলাদেশ সাফ চ্যাম্পিয়ান হওয়ায় আবারও মণিকার চাকমার বাড়ীতে ফুল-মিষ্টি নিয়ে ছুটছেন প্রশাসনের কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিসহ সমাজের নানা শ্রেনী-পেশার মানুষ। আগের প্রতিশ্রতি বাস্তবায়িত না হলেও আবারও বাসাচ্ছেন প্রতিশ্রতির বন্যায়।তবে লক্ষীছড়ি  উপজেলার  নির্বাহী কর্মকর্তা  ছেনমং রাখাইন বলেন বিগত জেলা প্রশাসক রাস্তা  করে দেয়ার কথা বলেছিলেন  সেটা চেষ্টা করা হবে। এছাড়া জেলা প্রশাসকের সাথে আলাপ আলোচনা করে মনিকার চাকমার সমস্যা গুলো সমাধানের ব্যবস্থা করা  হবে।
এদিকে লক্ষীছড়ি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সুপার জ্যোতি চাকমা জানান মণিকা চাকমা কৃর্তিতে¦ খুশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রতিবেশিরা। বিগত দিনের জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের প্রতিশ্রতি বাস্তবায়ন চান তারা। 

 

জাফরান

×