শনিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাফজয়ী বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল
একটা সময় মহান শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত ছিলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সেখান থেকে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন গ্রামীণ ব্যাংক। গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে নিয়ে অসাধারণ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ গ্রামীণ ব্যাংককে সঙ্গে নিয়ে তিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। তিনি আবার দারুণ খেলাপ্রমীও। সেই মানুষটি এখন বাংলাদেশ সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এমন খেলাপ্রেমী একজন সরকারপ্রধান হওয়ায় বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনও লাভবান হচ্ছে। যার প্রমাণ ইতোমধ্যে পাওয়া যাচ্ছে।
সদ্যই সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দল। এর ফলে টানা দ্বিতীয়বার রাজসিক সংবর্ধনা পেয়েছেন বাংলার বাঘিনীরা। শনিবার রাষ্ট্রীয় অতিথিশালা যমুনায় শিরোপাজয়ী বাংলাদেশের মেয়েদের সংবর্ধনা দিয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সেখানে দেশের নারী ফুটবলারদের বেতন কাঠামো, অনুশীলন ও আবাসন নিয়ে বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে ব্যক্তিগতভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি ফুটবলারদের কাছে এসব সমস্যা লিখিত আকারে চেয়েছেন বলে জানিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
অধিনায়ক সাবিনা খাতুনের নেতৃত্বে শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় যমুনায় প্রবেশ করে নারী ফুটবল দল। অনুষ্ঠানের ফাঁকে মেয়েরা প্রধান উপদেষ্টার কাছে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বললে, তিনি সমস্যার সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টা দলের সব সদস্যের ফুটবল ও স্বাক্ষর করা জার্সি উপহার দিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন ক্রীড়া উপদেষ্টা।
সংবর্ধনা শেষে নারী ফুটবল দল বেরিয়ে যাওয়ার পর উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। তিনি বলেন, নারী ফুটবল দলের সদস্যরা আবাসন সমস্যা, অনুশীলন, বেতন কাঠামোর বিষয়ে কথা বলেছেন। প্রধান উপদেষ্টা খুব ধৈর্য সহকারে নারী ফুটবল দলের প্রত্যেকের কথা শুনেছেন। এখানে আলোচনা খুব খোলামেলা হয়েছে। আলোচনার সবকিছুই আমরা অ্যাড্রেস করব। এ কারণে সবাইকে সমস্যাগুলো আরও সুনির্দিষ্টভাবে লিখিত আকারে দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। তারা দুই-তিনদিনের মধ্যে সেটা দেবেন বলে জানিয়েছেন।
আমি প্রধান উপদেষ্টাকে সেটা পৌঁছে দেব। ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন, প্রধান উপদেষ্টা খেলোয়াড়দের উৎসাহিত করেছেন। যাতে করে আমাদের বিজয়ের ধারা অব্যাহত থাকে। খেলোয়াড়দের ফ্ল্যাটের দাবির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আসিফ মাহমুদ বলেন, প্রধান উপদেষ্টার কাছে তারা এ বিষয়ে কিছু বলেননি। তাদের লিখিত দাবির মধ্যে বিষয়টি থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা আমাদের সক্ষমতার মধ্যে সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। নারী ফুটবল দলের বকেয়া বেতনের বিষয়ে জানতে চাইলে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন, তাদের দুই মাসের বেতন বকেয়া আছে।
বাফুফেতে এতদিন কাজী সালাউদ্দিন সাহেবের কমিটি ছিল। এখন নতুন কমিটি এসেছে। তাদের নিয়ে ওয়ার্কআউট করব। যেন ভবিষ্যতেও কখনো বেতন বকেয়া না হয়। প্রধান উপদেষ্টার সংবর্ধনা শেষে বাফুফে ভবনে ফিরে অধিনায়ক সাবিনা খাতুন ও ম্যানেজার মাহমুদা আক্তার অনন্যা মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলেন। সেখানে আবাসন প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, আমাদের পরিবারের অনেকে ঢাকায় আসে, কিন্তু তাদের থাকার জায়গা থাকে না।
তাই প্রধান উপদেষ্টাকে অনুরোধ করেছি আমাদের পরিবারের জন্য একটি আবাসন ব্যবস্থার। ঢাকায় আবাসন ব্যবস্থার পাশাপাশি অনেক ফুটবলারের নিজ জেলার আবাসনও খুব নাজুক। অনেকের ঘর ভাঙা আবার অনেকের বাড়ির পথ দুর্গম। পাহাড়ি এলাকায় অনেকের বাড়িতে নেই বিদ্যুৎও। ব্যক্তিগত সমস্যাও প্রধান উপদেষ্টার কাছে তুলে ধরেছেন ফুটবলাররা। এ বিষয়ে সাবিনা বলেন, মারিয়া, কৃষ্ণা, মনিকা, মাসুরাসহ অনেকেই ব্যক্তিগত সমস্যার কথা বলেছে। যেমন মনিকার বাড়িতে যাওয়ার রাস্তা খারাপ এবং সেই এলাকার বিদ্যুৎ সমস্যা।
নারী ফুটবলারদের অভাব-অভিযোগ মনোযোগ সহকারে শুনে সেগুলো লিখিত আকারে দিতে বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। এ বিষয়ে সাবিনা বলেন, তিনি আমাদের প্রতিটি বিষয় মনোযোগ দিয়ে জেনেছেন। সব লিখিত দিতে বলেছেন এবং সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা ক্রীড়া উপদেষ্টার মাধ্যমে এই চিঠি দেব।