কিংস এ্যারেনায় অনুশীলনে ফরোয়ার্ড ঋতুপর্ণা চাকমা
এই প্রবাদ বাক্যটি মনে হয় কারোরই অজানা নয়। সেটি হচ্ছে ‘স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে তা ধরে রাখা কঠিন।’ তেমনি ক্রীড়াঙ্গনেও এই প্রবাদ বাক্যটি কিঞ্চিৎ রূপান্তর করে বলা হয় ‘শিরোপা জেতার চেয়ে তা ধরে রাখা কঠিন।’ বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলকে এখন সেই পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হবে। আর সেই পরীক্ষাটি কিন্তু এত সহজ হবে না। তার মানে ‘বাংলার বাঘিনীদের’ শিরোপা অক্ষুণœ রাখা নিয়ে সংশয় আছে! কেন, তার অবশ্য যুক্তিসঙ্গত কারণ আছে। তবে এর বিপরীতে যুক্তিও আছে।
কমপক্ষে ফাইনাল পর্যন্ত যাওয়ার একটা সম্ভাবনাও কিন্তু আছে। সেগুলোই আগে খতিয়ে দেখা যাক। প্রথম কারণ চেনা ভেন্যু। নারী সাফের সর্বশেষ আসর বসেছিল ২০২২ সালে নেপালের কাঠমান্ডুতে। সব খেলাই অনুষ্ঠিত হয়েছিল দশরথ রঙ্গশালায়। এবারও সেই দেশের সেই স্টেডিয়ামেই খেলা হবে। ফলে মনিকা-ঋতুপর্ণাদের জন্য চেনা ভেন্যুতে স্বস্তি নিয়ে খেলাটা অনেক সহজই হবে। সেবার খেলা হয়েছিল সেপ্টেম্বরে। এবার খেলা হবে অক্টোবরে। ফলে আবহাওয়া থাকবে আগের মতোই। যাতে মানিয়ে নিতেও সুবিধে হবে। দ্বিতীয় কারণ প্রায় একই দলের কম্বিনেশন। মারিয়া-রূপনা-মাসুরাদের এই দলটি দীর্ঘদিন ধরে একসঙ্গে খেলছে, বাফুফে ভবনে থাকছে, খাচ্ছে।
ফলে দলের সবার মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া বেশ ভালো। আর এই বন্ডিংয়ের সুপ্রভাব পড়তে পারে মাঠের খেলায়। তৃতীয় কারণ গ্রুপে কম দল থাকা। এবারের নারী সাফে মোট সাতটি দেশ অংশ নেবে। গ্রুপ হবে দু’টি। এক গ্রুপে ৪টি, অন্য গ্রুপে ৩টি দল। বাংলাদেশ পড়েছে তিন দলের গ্রুপে। সেটা ‘এ’ গ্রুপ। এই গ্রুপে আরও আছে ভারত ও পাকিস্তান। বাংলাদেশের সুবিধা হচ্ছে এই গ্রুপে কমপক্ষে একটি ম্যাচ জিতলেই সেমিফাইনালে কোয়ালিফাই করার উজ্জ্বল সম্ভাবনা থাকবে। সেক্ষেত্রে নিশ্চিতভাবেই বাংলাদেশ টার্গেট করবে পাকিস্তানকে হারাবার। কেননা মুখোমুখি লড়াইয়ের পরিসংখ্যান এই দলের বিপক্ষে শতভাগ জয়ের রেকর্ড আছে বাংলাদেশের (২ ম্যাচের ২টিতেই জয়)।
আর সেমিতে পৌঁছে গেলে নিশ্চিতভাবেই শক্তিশালী ভারতকে এড়াতে পারবে বাংলাদেশ। সেক্ষেত্রে সেমিতে জিতে ফাইনাল খেলাটাও অসম্ভব হবে না তাদের জন্য। এবার আসা যাক কোনো কারণে বাংলাদেশের জন্য শিরোপা ধরে রাখা কঠিন। প্রথমত দলের সবচেয়ে সফল ও কিংবদন্তি কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের না থাকা। বাংলাদেশের নারী ফুটবলের জাগরণের ও সফলতার পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান যার, তিনি ছোটন। তার অধীনেই জাতীয় নারী দল তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে সেরা সাফল্য কুড়িয়ে নিয়েছিল। এছাড়া তারই অধীনে বাংলাদেশের বয়সভিত্তিক বিভিন্ন নারী দল ৮টি শিরোপা জিতেছিল।
ছোটনের নিবিড় পরিচর্যাতেই শিউলি-সানজিদা-কৃষ্ণারা পরিণত, দক্ষ, কুশলী হয়েছেন। তিনি যে ছকে বা ধাঁচে দলকে খেলাতেন, নতুন কোচ (পিটার বাটলার) এসে সেই স্টাইল বদলে ফেলেছেন অনেকটাই। ফলে তহুরা-আনাই-সুমাইয়াদের নতুন কোচের ধরনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে এখনও পুরোপুরি পারেননি। তাছাড়া এই কোচ ইংরেজ হওয়ায় ভাষাগত যোগাযোগের সমস্যাটা থেকেই যায়। দ্বিতীয় কারণ একাধিক ফুটবলারের অনুপস্থিতি। ব্যক্তিগত কারণে ও অভিমান করে জাতীয় দল থেকে অবসর নিয়েছেন ৫/৬ ফুটবলার। তাদের পরিবর্তে যারা দলে এসেছেন, তারা ভালো খেললেও তাদের পূর্বসূরিদের মতো অভিজ্ঞ নন। আর ফুটবলে অভিজ্ঞতার কোনো বিকল্প নেই।
ফলে এখানে একটা ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে। তৃতীয় কারণ ম্যাচ খেলার ঘাটতি। সাফে বাংলাদেশ যাচ্ছে কোনো প্রস্তুতি ম্যাচ না খেলেই। তারা সর্বশেষ ম্যাচ খেলেছে গত জুলাইয়ে, ভুটানের বিরুদ্ধে। এটা ভোগাতে পারে লাল-সবুজ বাহিনীকে। চতুর্থ কারণ সাবিনার অফ ফর্ম। অধিনায়ক-ফরোয়ার্ড সাবিনার বয়স হয়েছে। ফর্মেও নেই। ফলে এখন তিনি আর নতুন কোচের শুরুর একাদশেও নিশ্চিত নন। অথচ গত সাফের সর্বোচ্চ গোলদাতা ছিলেন এই গোলমেশিন। তার এই গোলখরা ভালই ভোগাতে পারে বাংলাদেশকে। এসব কারণেই এবার সাফের শিরোপা ধরে রাখা নিয়ে সংশয় আছে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে।