ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১

রুদ্ধশ্বাস জয়ে ফাইনালে বাংলাদেশ

রুমেল খান

প্রকাশিত: ০০:০৫, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

রুদ্ধশ্বাস জয়ে ফাইনালে বাংলাদেশ

শনিবার রাতে সাফের সেমিফাইনালে পাকিস্তানকে হারানোর পর বাংলাদেশের ফুটবলারদের উল্লাস

ফুটবলে যে অসম্ভব বলে কিছু নেই, কখনই হাল ছাড়তে হয় না এবং ঘুরে দাঁড়িয়েও যে অবিশ্বাস্যভাবে ম্যাচ জেতা যায়, সেটাই যেন নতুন করে প্রমাণ করল বাংলাদেশের কিশোর ফুটবলাররা। শনিবার তারা সাফ অনূর্ধ্ব-১৭ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে উঠেছে। ভুটানের থিম্পুর চাংলিমিথাং স্টেডিয়ামে শ্বাসরুদ্ধকর সেমিফাইনালে তারা পাকিস্তানকে টাইব্রেকারে (সাডেন ডেথে) ৮-৭ গোলে হারায়। এর আগে নির্ধারিত ৯০ মিনিটের খেলা ২-২ গোলে ড্র হয়। সোমবার ফাইনালে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ভারত, যারা একইদিনে ও একই ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত প্রথম সেমিফাইনালে নেপালকে ৪-২ গোলে হারায়। 
টাইব্রেকারে প্রথম পাঁচ শটে দু’দলই ৫টি করে গোল করে। ৫-৫ সমতা থাকায় খেলা গড়ায় টাইব্রেকার ‘পার্ট টু’ সাডেন ডেথে। সেখানেও প্রথম দুই শটেও দু’দলই লক্ষ্যভেদ করে। দু’দলের বদলি গোলরক্ষকই বারবার ব্যর্থ হচ্ছিলেন প্রতিপক্ষ দলের শট ঠেকাতে। তখন মনে হচ্ছিল সাডেন ডেথও দীর্ঘস্থায়ী হবে। কিন্তু অষ্টম শটে গিয়েই দৃশ্যপট বদলে যায়। পাকিস্তানের শট ঠেকিয়ে দেন বাংলাদেশের গোলরক্ষক। ফিরতি শটে বাংলাদেশ গোল করলে ফাইনাল নিশ্চিত হয়।

টাইব্রেকারে প্রথম পাঁচ শটে পাকিস্তানের আব্দুল রেহমান, আব্দুল সামাদ, আবিস রেজা কাজমি, খোবাইব খান ও উবাইব উল্লাহ গোল করেন। বাংলাদেশের মোর্শেদ আলী, জয় আহমেদ, কমল মৃধা, সিয়াম অমিত ও মো. মানিক লক্ষ্যভেদ করেন। পরে এক শটের সাডেন ডেথে পাকিস্তানের মাজিদ আলী ও শারাফ খান গোল করেন। বাংলাদেশের আকাশ আহমেদ ও মিঠু চৌধুরী গোল করেন। এরপর পাকিস্তানের আব্দুল ঘানির শট নিজের ডান দিকে চমৎকার দক্ষতায় ঝাঁপিয়ে রুখে দেন বাংলাদেশের বদলি গোলরক্ষক আলিফ রহমান ইমতিয়াজ। আর লাল-সবুজ বাহিনীর আশিকুর রহমান গোল করে নিজ দলকে পৌঁছে দেন ফাইনালে। বিজয়-উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠে বাংলাদেশ।
আসরে একমাত্র বাংলাদেশই জয়হীন ছিল গ্রুপ পর্বে। ভারতের বিপক্ষে ১-০ গোলে হেরে যাত্রা শুরুর পর মালদ্বীপের বিপক্ষে ১-১ ড্র করে সাইফুল বারী টিটুর দল।
অথচ বাংলাদেশের সেমিতে উঠারই কথা ছিল না! কেননা ‘এ’ গ্রুপের শেষ ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে মালদ্বীপ ৩-০ ব্যবধানে হারায় গোল পার্থক্যে সেমিফাইনালে খেলার সুযোগ মেলে বাংলাদেশের। 
ম্যাচে প্রথমার্ধে একাধিক আক্রমণ করেও গোল পায়নি বাংলাদেশ। বরং চাপে থাকা পাকিস্তান একটি সুযোগ পেয়েই গোল করে বসে। সেটা ৩২ মিনিটের কথা। কর্নারে উড়ে আসা বলে হেডে গোলরক্ষক নাহিদুল ইসলামকে পরাস্ত করেন শাহাব আহমেদ (১-০)।
দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশের ওপর প্রাধান্য বিস্তার করে খেলে পাকিস্তান। ৬০ মিনিটে আব্দুল রেহমানের পেনাল্টি গোলে হয় ব্যবধান দ্বিগুণ (২-০)। বক্সে সিয়াম অমিতের হাতে বল লাগলে স্পট কিকের বাঁশি বাজান রেফারি।
দুই গোল খেয়ে মরিয়া হয়ে ওঠে বাংলাদেশ। একের পর এক আক্রমণ শাণায়। এরপর ৭৪ মিনিটে ব্যবধান কমায় তারা। কর্নারের পর বক্সের ভেতর থেকে সাইড ভলিতে জাল কাঁপান বদলি ফরোয়ার্ড মিঠু চৌধুরী (১-২)। ৮০ মিনিটে সতীর্থের থ্রু পাস ধরে ডান দিক দিয়ে বক্সে ঢুকে মানিককে আটকাতে পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন পাকি গোলরক্ষক, কিন্তু সরাসরি তার গায়ে মেরে বসেন মানিক। হাল না ছেড়ে লড়ার ফল সাত মিনিট যোগ করা সময়ের চতুর্থ মিনিটে পায় বাংলাদেশ। রিফাত কাজীর ক্রসে মানিকের নিখুঁত প্লেসিং শট গোলে পরিণত হয় (২-২)। চিত্তসুখে মাতোয়ারা হয়ে ওঠে বাংলাদেশ। আর তারপরের কাহিনী তো আগেই বলা হয়েছে।

×