ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১ আশ্বিন ১৪৩১

বাফুফে নির্বাচন ২০২৪

সভাপতি পদে ত্রিমুখী লড়াইয়ের অপেক্ষায় বাফুফে, এগিয়ে ইমরুল

প্রকাশিত: ১৪:৩৫, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সভাপতি পদে ত্রিমুখী লড়াইয়ের অপেক্ষায় বাফুফে, এগিয়ে ইমরুল

তরফদার, ইমরুল, তাবিথের ত্রিমুখী লড়াই। 

বছর ছয়েক আগের কথা। সাইফ পাওয়ারটেক কর্ণধার তরফদার রুহুল আমিন দেশের প্রত্যেকটি জেলা ক্রীড়া সংস্থাকে দুই লাখ টাকা করে দিয়েছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সভাপতি হওয়ার। কিন্তু তার ইচ্ছে পূরণ হয়নি। অনিবার্য বাস্তবতায় তিনি ফুটবল থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন। সেই তরফদার যখন পুনরায় বাফুফে সভাপতি হওয়ার লড়াইয়ে অবতীর্ণ, দেশের সব পর্যায়ের ক্রীড়া সংগঠক ও আসন্ন বাফুফে নির্বাচনের কাউন্সিলরদের মাঝে তখন বিস্ময় প্রকাশ করতে দেখা গেছে। তাদের বক্তব্য হল, "লোকটি যেভাবে শুরু করেছিলেন, তার ধারাবাহিকতা রাখতে পারেন নি। তাঁকে বিশ্বাস করা যায় না, আস্থা রাখার উপলক্ষ সৃষ্টি হয় না।" 

এদিকে, তরফদার রুহুল আমিন যখন দেশব্যাপী দুই লাখ টাকা করে বিতরণের মধ্যে ছিলেন, তখন দেশের একটি লিজিং কোম্পানীর এমডি বলেছিলেন, "ঋণখেলাপি হয়ে আমাদের কিস্তি পরিশোধ না করে সে কিভাবে দেড় কোটি টাকা উৎকোচ হিসাবে ফুটবলের জন্য ব্যবহার করছে?"

তরফদার সে সময়ের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সাবেক হুইপ শামসুল হক চৌধুরী, সাবেক চাসিক মেয়র আ জ ম নাসির, সাবেক নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, সাবেক সাংসক কয়েস চৌধুরী ও সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের মাধ্যমে প্রায় হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন বলে বাজারে গুজব প্রচলিত আছে। তবে তরফদার সবকিছু স্বাভাবিক করে দেখছেন এই কারণে, যখন তার ব্যবসায়িক উত্থান একদা হয়েছিল বিএনপি নেতা সাবেক নৌ পরিবহনমন্ত্রী প্রয়াত কর্নেল (অব) আকবরের হাত ধরে! 

প্রসঙ্গত, গত ১৪ সেপ্টেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে যখন কাজী মো. সালাহউদ্দিন আগামী নির্বাচনে আর সভাপতির পদে দাঁড়াবেন না বলে ঘোষণা করেন, ঠিক তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পাঁচ তারকা একটি হোটেলকে ভেন্যু করে বিএনপি নেতা ও সাবেক গোলরক্ষক গ্রেট আমিনুল হকের প্রকাশ্য উপস্থিতি ও সমর্থনে তরফদার রুহুল আমিন ২৬ অক্টোবর বাফুফে সভাপতি পদে নির্বাচন করবেন বলে জানিয়ে দেন।

অন্যদিকে, সরকার পরিবর্তনের অনিবার্য বাস্তবতায় ফুটবল ফেডারেশনের সাবেক সহসভাপতি তাবিথ আওয়ালও সভাপতি পদে নির্বাচন করবেন, তা তিনি সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন। বিএনপির এই নেতা মনে করেছেন, ‍‍‌আগামীতে নির্বাচন প্রক্রিয়ার মধ্য্যে তার দল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসবে, তাই তিনি অনেকের কাছেই স্বয়ংক্রিয় পছন্দ হয়ে দাঁড়াতে পারেন। কিন্তু গত নির্বাচনে তিনি সহসভাপতির পদে নির্বাচন করে হেরে যান। তাবিথের ম্যাচিউরিটি ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ। বয়সের ধার না থাকা, ক্যারিশমেটিক নেতৃত্বের অনুপস্থিতি ও দেশের ফুটবল নিয়ে বিস্তর চিন্তা না থাকার থাকণ তিনি আসন্ন বাফুফে নির্বাচনে প্রার্থী হিসাবে মন্দের ভাল বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাতীয় দলের সাবেক খেলোয়াড়রা মন্তব্য করেছেন।

অপরদিকে, ফুটবলের স্বার্থ বিবেচনায় বসুন্ধরা কিংস সভাপতি ও ফুটবল ফেডারেশনের সহসভাপতি ইমরুল হাসানের ওপর ভরসা রাখতে চায় দেশের ফুটবল সংগঠকেরা, এমন নে করেন অনেকেই।  পেশাদারিত্বের প্রশ্নে, দায়বদ্ধতার প্রশ্নে ইমরুল হাসানের ওপর ভরসা রাখার সুযোগ আছে বলে মনে করেন বিভিন্ন পর্যায়ের সংগঠকরা। গত ২৪ অক্টোবর বসুন্ধরা ফুটবল একাডেমি করার ঘোষণাও রেখেছেন ইমরুল। বসুন্ধরা ফুটবল স্টেডিয়াম করা, ক্লাব ফুটবলে বসুন্ধরা কিংসের এশিয়ায় সাফল্য পাওয়া ইমরুলকে যোগ্য সংগঠক হিসাবে দাঁড় করায় বলে মনে করেন অনেকে। বাফুফের ফিন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান হওয়ার পথ দেখতে চাইলেও তাকে আস্থার প্রতীক হিসাবেই দেখছেন সাধারণ ফুটবল দর্শকরাও।

আগামী ২৬ অক্টোবর ফুটবল ফেডারেশনের নির্বাচন। নতুন মাসের শুরু থেকেই উত্তাপ বাড়বে। তরফদার নির্বাচনের রেস থেকে সরে যেতে পারেন, এমন সম্ভাবনার কথা শোনা যাচ্ছে। বিগত সরকারের সুবিধা নেয়া ব্যক্তিসত্তাকে সমর্থন করবে না সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ, এমন খবর এখন ক্রীড়াঙ্গনে। তেমন বিবেচনায় তাবিথ আওয়াল দুর্বল প্রার্থী হলেও রেসে থাকবেন বলে ধরে নেয়া হচ্ছে। তার লড়াই ওই শক্ত প্রার্থী ইমরুল হাসানের সাথেই হবে, তেমন সূত্র শক্ত করে জানানও দিচ্ছে। দেখার বিষয়, শেষ পর্যন্ত কি হয়।

রুমেল খান/এম হাসান

×