ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১

নতুন মৌসুমে জ্বলছে হ্যারি কেন

জিএম মোস্তফা

প্রকাশিত: ০০:৫৯, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

নতুন মৌসুমে জ্বলছে হ্যারি কেন

হ্যারি কেন

দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় স্বদেশী ক্লাব টটেনহ্যাম হটস্পারে কাটিয়ে গত বছরের মে মাসে নতুন করে ঠিকানা গড়েন বায়ার্ন মিউনিখে। জার্মান বুন্দেসলিগার জায়ান্ট ক্লাবটিতে প্রথম মৌসুমে ব্যক্তিগত পারফর্মেন্সে ঔজ্জ্বল্য ছড়ালেও কোন শিরোপা জিততে পারেনি তার দল। তবে নতুন মৌসুমের শুরু থেকেই দুর্দান্ত খেলছেন হ্যারি কেন। প্রতিপক্ষের বিপক্ষে গোল করাটাকে যেন একেবারেই নিয়মিত রীতিতে পরিণত করে ফেলেছেন বায়ার্ন মিউনিখের এই ইংলিশ স্ট্রাইকার। 
সর্বশেষ বুন্দেসলিগায় ওয়ের্ডার ব্রেমেনের বিপক্ষেও গোলের ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছেন হ্যারি কেন। শনিবার ওয়ের্ডার ব্রেমেনের মাঠ থেকে ৫-০ গোলে জিতে আসা ম্যাচের তৃতীয় গোলটি করেন টটেনহ্যাম হটস্পারের সাবেক এই তারকা ফরোয়ার্ড। আর তাতেই নিজেকে নিয়ে যান ইতিহাসের পাতায়। বায়ার্ন মিউনিখের জার্সিতে বুন্দেসলিগায় ৪১ গোল করলেন হ্যারি কেন। যা কোনো ইংলিশ ফুটবলারের সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড।

তার আগে এই কীর্তি ছিল জ্যাডন সাঞ্চোর। এর আগে বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের হয়ে ১১৮ ম্যাচে ৪০ গোল করেছিলেন ইংলিশ তারকা। এবার মাত্র ৩৬ ম্যাচেই ৪১ গোল করে সাঞ্চোকে ছাড়িয়ে গেলেন হ্যারি কেন। জার্মান বুন্দেসলিগার ইতিহাসে এখন ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ গোলদাতার মালিক ৩১ বছর বয়সি এই তারকা ফরোয়ার্ড।
২০২০ সালে সর্বশেষ উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ট্রফি উঁচিয়ে ধরেছিল বায়ার্ন মিউনিখ। এরপর আর ইউরোপিয়ান ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের এই মঞ্চে নিজেদের দাপট দেখাতে পারেনি জার্মান জায়ান্টরা। তবে নতুন মৌসুমে দুর্বার বায়ার্ন। নিজেদের প্রথম ম্যাচেই ঐতিহাসিক জয় তুলে নিয়েছে তারা। বায়ার্ন মিউনিখ ৯-২ গোলে রীতিমতো উড়িয়েই দেয় ডায়নামো জাগরেবকে। যা এযাবতকালের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জয়ের রেকর্ড।

বায়ার্ন মিউনিখের এমন রেকর্ডের ম্যাচেও নায়ক ছিলেন হ্যারি কেন। ডায়নামো জাগরেবের বিপক্ষে করা ৯  গোলের চারটিই যে করেন এই ইংলিশ স্ট্রাইকার। যার তিনটিই আবার পেনাল্টিতে! বায়ার্নের জার্সিতে এর আগের ম্যাচে হোলস্টেইন কিয়েলের বিপক্ষেই করেছিলেন নতুন মৌসুমের প্রথম হ্যাটট্রিক।

এরপর চ্যাম্পিয়ন্স লিগের প্রথম ম্যাচে হ্যাটট্রিকসহ করলেন ৪ গোল! অর্থাৎ দুই ম্যাচেই তার নামের পাশে যোগ হয় সাত গোল। তাতেই সুস্পষ্ট যে, শুধু গোল নয় বরং হ্যাটট্রিক করাটাই অভ্যাসে পরিণত করার চেষ্টায় রয়েছেন হ্যারি কেন।
ডায়নামো জারেগের বিপক্ষে ছিল হ্যারি কেনের ক্যারিয়ারের ২৪তম হ্যাটট্রিক। যা তার ব্যাক টু ব্যাক পঞ্চম হ্যাটট্রিকের নজির। বায়ার্ন মিউনিখের জার্সিতে ষষ্ট হ্যাটট্রিক। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসে পেনাল্টিতে হ্যাটট্রিক করা এখন একমাত্র ফুটবলার হ্যারি কেন। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে চার গোলের রেকর্ডও হ্যারি কেনের দখলে।

বায়ার্নের জার্সিতে ৫১ম্যাচে তার গোলসংখ্যা এখন ৫৪। এই গোল করতে হ্যারি কেন খেলেছেন ৪৩২১ মিনিট। অ্যাসিস্ট রয়েছে ১৪ গোলে। চলতি মৌসুমে মাত্র ৬ ম্যাচেই তার গোল ১০টি। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ অথবা ইউরোপিয়ান কাপে ৪৫ ম্যাচে এখন তার গোলসংখ্যা ৩৩টি। ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়দের মধ্যে যা সর্বোচ্চ গোলের মাইলফলক। এর ফলে তিনি ছাড়িয়ে গেছেন তারই স্বদেশী কিংবদন্তি ওয়েন রুনির ৩০ গোলের রেকর্ডকে।

এক ম্যাচে তিন পেনাল্টিতে হ্যাটট্রিকসহ ৪ গোল করার পর নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে হ্যারি কেন বলেন, ‘এই প্রথম এক ম্যাচে পেনাল্টিতে তিনটি গোল করেছি। যে কারণে এটা আমার জন্য নিঃসন্দেহেই ভিন্নরকমের এক অনুভূতি। তবে ম্যাচে চার গোল করাটা সত্যিই অসাধারণ ব্যাপার। দলকে যে কোনভাবেই সহায়তা করাটা গুরুরত্বপূর্ণ। সেটা  হোক পেনাল্টিতে কিংবা অন্যকোনভাবে গোল করে।’

শুধু ক্লাব ফুটবলেই নয়, জাতীয় দলের জার্সিতেও সময়টা দারুণ কাটছে হ্যারি কেনের। চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে উয়েফা নেশন্স লিগে ইংল্যান্ড ২-০ গোলে উড়িয়ে দেয় ফিনল্যান্ডকে। ঐতিহ্যবাহী ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে ইংলিশদের হয়ে দুটি গোলই করেন তিনি। আর তাতেই জাতীয় দলের জার্সিতে নিজের ১০০তম ম্যাচটাকে স্মরণীয় করে রাখেন বায়ার্ন মিউনিখের এই ইংলিশ স্ট্রাইকার।

জোড়া গোল করে নিজেকে নিয়ে যান রেকর্ডবুকে। প্রথম ফুটবলার হিসেবে ইংল্যান্ডের জার্সিতে শততম ম্যাচে জোড়া গোলের নজির গড়েন হ্যারি। তার আগে শততম ম্যাচে ইংলিশদের হয়ে গোল করতে পেরেছিলেন কেবল দুই কিংবদন্তি ওয়েইন রুনি আর ববি চার্লটন। এবার হ্যারি কেন করলেন জোড়া গোলের অবিস্বরণীয় কীর্তি। অথচ ইংল্যান্ডের হয়ে ১০০তম ম্যাচ খেলার কথা স্বপ্নেও ভাবেননি তিনি। এ ব্যাপারে হ্যারি কেন বলেন, ‘১০০তম ম্যাচ, এটা ছিল স্বপ্নেরও বাইরে।

আমি নিশ্চিত যখন অবসরে যাব তখন অত্যন্ত গর্বের সঙ্গেই এগুলোর দিকে ফিরে তাকাব।’ ২২ বছর বয়সে ইংল্যান্ড জাতীয় দলের জার্সিতে অভিষেক ঘটেছিল হ্যারি কেনের। স্বপ্নের জার্সিতে নিজের শততম ম্যাচটি খেললেন ৩১ বছর বয়সে। ফিনল্যান্ডের বিপক্ষে ডাবলসের সৌজন্যে ইংল্যান্ডের জার্সিতে তার গোলসংখ্যা দাঁড়ায় ৬৮টি।

তবে এই বয়সে ইংলিশ অধিনায়ক যেভাবে ছুটছেন কোথায় গিয়ে থামেন ভক্ত-অনুরাগীদের অপেক্ষা এখন সেটাই দেখার। সেইসঙ্গে সুদীর্ঘ ক্যারিয়ারে কোনো শিরোপা জিততে না পারার যে আক্ষেপ তা এবার ঘুচবে বলেও মনে করছেন হ্যারি কেনের সমর্থকরা।

×