ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৩ ভাদ্র ১৪৩১

aiub
aiub

অদম্য আর্জেন্টিনা, অপ্রতিরোধ্য স্পেন

জিএম মোস্তফা

প্রকাশিত: ০০:৪৭, ১৭ জুলাই ২০২৪; আপডেট: ০১:০০, ১৭ জুলাই ২০২৪

অদম্য আর্জেন্টিনা, অপ্রতিরোধ্য স্পেন

ইউরো জিতে জার্মানি থেকে দেশে ফেরার পর মাদ্রিদে ছাদখোলা বাসে স্প্যানিশ ফুটবলারদের বরণ

আর্জেন্টিনার উৎসব চলছেই। আরও একবার শিরোপা উল্লাসে মেতে উঠলেন মেসি-মার্টিনেজ-ডি মারিয়ারা। সোমবার বাংলাদেশ সময় সকালে কোপা আমেরিকার ফাইনালে কলম্বিয়াকে হারিয়ে নতুন ইতিহাস রচিত করল আলবিসেলেস্তেরা। শিরোপার লড়াইয়ে লিওনেল স্কালোনির শিষ্যরা এদিন ১-০ গোলে পরাজয়ের স্বাদ উপহার দেয় অপ্রতিরোধ্য গতিতে ছুটতে থাকা কলম্বিয়াকে।

সেইসঙ্গে কোপা আমেরিকার রেকর্ড ১৬তম শিরোপা জয়ের অবিস্মরণীয় কীর্তি গড়ল আর্জেন্টিনা। এর আগে ১৫টি শিরোপা জিতে উরুগুয়ের সঙ্গে যৌথভাবে কোপা আমেরিকার সর্বোচ্চ ট্রফি জয়ের রেকর্ডে নাম ছিল তাদের। উরুগুয়েকে হটিয়ে এবার সেই কীর্তিটাই এককভাবে নিজেদের করে নিল আর্জেন্টিনা। 
শুধু তাই নয়? লাতিন আমেরিকার ইতিহাসে একমাত্র দল হিসেবে কোপা বিশ্বকাপ কোপা জয়ের অনন্য নজিরও এখন মেসিদের দখলে। দীর্ঘদিন ধরেই যে দলটি শিরোপা খরায় ভুগছিল সেই আর্জেন্টিনাই এখন গড়ল ত্রিমুকুট জয়ের বিরল কীর্তি। মহাদেশীয় শিরোপা, বিশ্বকাপ, আবার মহাদেশীয় শিরোপা- এই রেকর্ডে অবশ্য মেসিরা দ্বিতীয়। তাদের আগে প্রথম দল হিসেবে এই নজির গড়েছিল স্পেন। ২০০৮ সালে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে নিজেদের মিশন শুরু করেছিল তারা।

এরপর ২০১০ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন ভিসেন্তে দেল বস্কের দল ২০১২ সালে টানা দ্বিতীয়বারের মতো ইউরোপিয়ান ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পড়ে। এবার তাদেই সেই রেকর্ডে ভাগ বসালো আলবিসেলেস্তেরা। ২০২১ সালে কোপা আমেরিকার পর ২০২২ সালে কাতার বিশ্বকাপ জেতা আর্জেন্টিনা এবার উঁচিয়ে ধরল ২০২৪ সালের কোপা আমেরিকাও। এবারের কোপা আমেরিকার ফাইনালটার আলাদা গুরুত্ব ছিল আর্জেন্টিনার। এই ম্যাচ খেলেই যে আন্তর্জাতিক ফুটবল ক্যারিয়ারের ইতি টানার ঘোষণা দেন দেশটির অন্যতম সেরা তারকা অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া!

দেশটির মহাতারকা লিওনেল মেসির শেষ কোপা আমেরিকা! তাই এই ট্রফিটা জিততে মরিয়া ছিল লিওনেল স্কালোনির দল। অন্যদিকে, দীর্ঘ ২৩ বছর পর কোপা আমেরিকার ফাইনালে জায়গা করে নেয় কলম্বিয়া। তাই জেমস রড্রিগুয়েজ-লুইস দিয়াজরাও মরিয়া ছিল শিরোপাটা নিজেদের করে নেওয়ার জন্য। এমন সমীকরণের ম্যাচেই চোট মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক লিওনেল মেসি।

কাদতে কাদতে মাঠ ছাড়া এলএম টেন কেঁদেছেন ডাগআউটে বসেও। এরপর নির্ধারিত ৯০ মিনিটের খেলা গোলশূন্য অবস্থায় শেষ হলে ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। সেখানে বদলি হিসেবে নামা লাউতারো মার্টিনেজের ১১২ মিনিটের গোলেই কোপার শিরোপা ধরে রাখার নজির গড়ে আর্জেন্টিনা। 
ফাইনালে হারলেও ফেয়ার-প্লে ট্রফি জিতেছে কলম্বিয়া ফুটবল দল। টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ও নির্বাচিত হয়েছেন কলম্বিয়ার জেমস রড্রিগুয়েজ। ৩৩ বছর বয়সী এই তারকা ফরোয়ার্ড এবার কোপা আমেরিকার এক আসরে সর্বোচ্চ ৬টি অ্যাসিস্টের রেকর্ডে এবার ভাগ বসিয়েছেন। গোলও আছে একটি। তাই কোপার সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার গোল্ডেন বল জিতলেন রড্রিগুয়েজ। দ্বিতীয় কলম্বিয়ান হিসেবে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতলেন সাও পাওলো তারকা।

ফাইনালে গোল করা আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার লাওতারো মার্টিনেজ জিতেছেন সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার গোল্ডেন বুট। সব মিলিয়ে সর্বোচ্চ ৫ গোল করেছেন তিনি। সেরা গোলকিপারের গোল্ডেন গ্লাভ ট্রফি জিতেছেন আর্জেন্টিনার গোলকিপার এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। শিরোপা জিতে স্বপ্নের মতোই বুটজেড়া তুলে রাখার অনুভূতি জানাতে গিয়ে অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া বলেন, ‘এটাকে অনেক সহজ মনে হতে পারে, কিন্তু এটা খুব কঠিন। যারা নিজেদের সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়েছে, আমাদের এই প্রজন্মের কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ। আমি যা খুব করে চেয়েছিলাম, তারা আমাকে সেটা অর্জন করতে দিয়েছে।’

এদিকে, উয়েফা ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে স্পেন। পুরো টুর্নামেন্টজুড়েই রাজত্ব করা লা রোজারা রবিবার ফাইনালেও উপহার দিয়েছে নান্দনিক ফুটবল। জার্মানির বার্লিনে উয়েফা ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে সুন্দর ফুটবলের ফুল ফুটিয়ে লুইস দে লা ফুয়েন্তের দল ২-১ গোলে হারিয়েছে ইংল্যান্ডকে। সেইসঙ্গে জার্মানিকে টপকে এককভাবে সর্বোচ্চ চার শিরোপা জয়ের অবিস্মরণীয় কীর্তি গড়লো কারভাহাল-মোরাতা-ইয়ামালরা। ফলে দীর্ঘ ৫৮ বছরের শিরোপা-খরা ঘুচানোর অপেক্ষায় থাকা ইংল্যান্ডের স্বপ্ন আরও একবার ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল। ওয়েম্বলির পর বার্লিনেও টানা দুই ফাইনালে হারের স্বপ্নভঙ্গের বেদনা নিয়ে মাঠ ছাড়ল কেন-বেলিংহ্যামরা। 
ইংল্যান্ডেই আবিষ্কার হয়েছিল আধুনিক ফুটবলের। অথচ, ১৯৬৬ সালে জেতা একমাত্র বিশ্বকাপ ট্রফিটাই এখন পর্যন্ত তাদের সেরা সাফল্য। যে কারণে এবার দীর্ঘ প্রায় ছয় দশকের শিরোপাÑখরা ঘুচাতে মরিয়া ছিল গ্যারেথ সাউথগেটের শিষ্যরা। কিন্তু সেইস্বপ্নও বাস্তবে পরিণত হতে দিলনা স্পেন। যদিওবা জার্মানির বার্লিনের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে প্রথমার্ধ গোলের দেখা পায়নি কেউ। দ্বিতীয়ার্ধের ৪৭ মিনিটেই প্রথম এগিয়ে যায় স্পেন।

এই সময়ে ডানি কারভাহালের পাস থেকে লামিন ইয়ামাল নিকো উইলিয়ামসের দিকে বল বাড়িয়ে দেন। লো শটে পিকফোর্ডকে পরাস্ত করে লা রোজাদের এগিয়ে দেন। তবে প্রতিপক্ষ দলের নাম যেহেত ইংল্যান্ড তাই এগিয়ে গিয়েও স্বস্তিতে থাকার সুযোগ ছিল না লা রোজাদের। আগের তিনটি নক আউট ম্যাচে পিছিয়ে পড়ে ম্যাচে ফিরে আসার স্মৃতি থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে এদিনও ইংল্যান্ডকে ৭৩ মিনিটে সমতায় আনেন কোল পালমার। রেফারির বাঁশি বাজানোর মাত্র চার মিনিট আগে সুপার সাবে গোলে করে লা রোজাদের শিরোপা নিশ্চিত করেন মিকেল এয়ারজাবাল। এরপর আর গোল না হলে রেকর্ড চতুর্থ শিরোপা জয়ের স্বাদ পায় স্পেন। সর্বশেষ পাঁচ আসরে যা তাদের তৃতীয় ট্রফি। 
এমন কীর্তিতে দারুণ রোমাঞ্চিত স্প্যানিশ কোচ লুইস দে লা ফুয়েন্তেও। ফাইনাল জয়ের পর তিনি বলেন, ‘অভাবনীয় একটা দিন। যোগ্য দল হিসেবেই ইউরোপের শিরোপা মাথায় তুলেছে স্পেন।’ অসাধারণ পারফরম্যান্স উপহার দিয়ে জার্মানিকে পেছনে ফেলে স্পেনকে রেকর্ড সর্বোচ্চ চতুর্থবারের মতো ইউরো জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসরের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতেছেন রড্রিগো হার্নান্দেজ। যদিও বা বার্লিনে শিরোপা নিশ্চিতের ম্যাচে হাঁটুর ইনজুরির কারণে দ্বিতীয়ার্ধেই মাঠ থেকে বদলি বেঞ্চে চলে যান রদ্রিগুয়েজ।

তবে এবারই প্রথম যৌথভাবে ইউরোর সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার গোল্ডেন বুট জয় করেছেন ছয়জন। ইংল্যান্ডের হ্যারি কেন, স্পেনের ডানি ওলমো, নেদারল্যান্ডসের কোডি গ্যাকপো, জর্জিয়ার জর্জেস মিকাওটাজে, জার্মানির জামাল মুসিয়ালা ও স্লোভাকিয়ার ইভান শারাঞ্জ প্রত্যেকেই তিনটি করে গোল করেছেন। ইউরোর সেরা চমক লামিন ইয়ামাল জিতেছেন টুর্নামেন্টের সেরা তরুণ খেলোয়াড়ের পুরস্কার।

×