ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১

কোস্টার হাত ধরে শেষ আটে পর্তুগাল

জাহিদুল আলম জয়

প্রকাশিত: ০০:৫৯, ৩ জুলাই ২০২৪

কোস্টার হাত ধরে শেষ আটে পর্তুগাল

ইউরো ফুটবলে পেনাল্টি শূটআউটে স্লোভেনিয়ার তিনটি শট রুখে দিয়ে রাতারাতি নায়ক বনে গেছেন পর্তুগাল গোলরক্ষক দিয়াগো কোস্টা।

গোলরক্ষক দিয়াগো কোস্টার অসাধারণ নৈপুণ্যে ভর করে ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে পর্তুগাল। সোমবার রাতে জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টে অনুষ্ঠিত শেষ ষোলোর ম্যাচে ভাগ্যনির্ধারণী পেনাল্টি শূটআউটে স্লোভেনিয়ার তিনটি শট রুখে দেন ২৪ বছর বয়সী কোস্টা। আর তাতেই পেনাল্টিতে ৩-০ গোলে জিতে শেষ আটের টিকেট কেটেছে পর্তুগিজরা।

দুদলের নির্ধারিত ৯০ মিনিট ও অতিরিক্ত ৩০ মিনিটের খেলা গোলশূন্য থাকার পর ম্যাচের ভাগ্যনির্ধারণী হয় টাইব্রেকারে। এর আগে ডুলেসড্রফে প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালের আরেক ম্যাচে বেলজিয়ামকে ১-০ গোলে হারিয়ে সেরা আটে উঠেছে ফ্রান্স। ম্যাচে ফরাসিরা প্রতিপক্ষের আত্মঘাতী গোলের সৌজন্যে জয় পেয়েছে। 
পর্তুগাল-স্লোভেনিয়া ম্যাচের নির্ধারিত ৯০ মিনিট শেষ হওয়ার পর অতিরিক্ত সময়ের প্রথম অর্ধে সুপারস্টার রোনাল্ডো পেনাল্টির সুযোগ হাতছাড়া করার পর কান্নায় ভেঙে পড়েন। কিন্তু পেনাল্টি শূটআউটে গোল করে তিনি এই ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করেন। কোয়ার্টার ফাইনালে পর্তুগালকে খেলতে হবে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে। দিয়োগো জোতার আদায় করা পেনাল্টি থেকে রোনাল্ডোর শট সেøাভেনিয়ান গোলরক্ষক ইয়ান ওবলাক দারুণ দক্ষতায় রুখে দেন। টাইব্রেকারে রোনাল্ডো, ব্রুনো ফার্নান্দেজ ও বার্নান্ডো সিলভা প্রত্যেকেই গোল করলেও সেøাভেনিয়ার তিনটি শট আটকে দেন গোলরক্ষক কোস্টা।

ম্যাচ শেষে রোনাল্ডো বলেন, প্রথমত এটা খুবই দুঃখজনক এবং এরপর এটা উপভোগের সময়। এটাই ফুটবল। এখানে যে কোনো মুহূর্তে যে কোনো কিছুই হতে পারে। একজন খেলোয়াড়কে সবকিছুর জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়। এ বছর আমি একটি ভুলও করিনি। কিন্তু যখন দেশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তটি এলো তখনই ওবলাক আমার শটটি রুখে দিল। সেøাভেনিয়া পুরো ম্যাচে রক্ষণাত্মক খেলেছে। যে কারণে আমাদের জন্য ম্যাচটি কঠিন হয়ে উঠেছিল। ৩৯ বছর বয়সী রোনাল্ডো এখন পর্যন্ত এবারের ইউরোতে চার ম্যাচে কোনো গোল পাননি। এর আগে পাঁচটি ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপেই তিনি গোল করেছিলেন। 
যারা ইউরোপিয়ান খেলাগুলো দেখেন তাদের নিশ্চয়ই রিকার্ড পেরেইরার কথা মনে আছে। পর্তুগিজ এই গোলরক্ষকের দৃঢ়তায় ২০০৪ ইউরো কাপের কোয়ার্টারে ইংল্যান্ডকে টাইব্রেকারে হারিয়েছিল পর্তুগাল। সেবার তিনটি পেনাল্টি রুখে দিয়েছিলেন তিনি। দিয়াগো কোস্টা যেন সেই রিকার্ডো পেরেইরার কার্বন কপি। এই গোলরক্ষকও রুখে দিয়েছেন তিনটি পেনাল্টি। তবে কোস্টা একদিক দিয়ে পেরেইরাকে ছাড়িয়ে গেছেন। টানা তিনটি পেনাল্টি রুখে দিয়েছেন পোর্তোর গোলরক্ষক। পর্তুগাল দলে তারকার অভাব নেই। তারা যে কোনো সময়েই ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে পারেন।

কিন্তু এমন দলে থেকেও যে পুরো ম্যাচের আকর্ষণ নিজেদের দিকে নেওয়া যায়, সেটাই করে দেখিয়েছেন কোস্টা। অথচ এই ম্যাচে নায়ক হওয়ার কথা ছিল রোনাল্ডোর। অতিরিক্ত সময়ের খেলায় পেনাল্টি মিস করেন আল নাসর তারকা। কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। তার এই হতাশাকেই যেন দূর করার চেষ্টা করেন কোস্টা। বেঞ্জামিন সিসকোর ওয়ান টু ওয়ানে একটি শট বা পা দিয়ে রুখে দিয়ে নিশ্চিত গোল হজম থেকে পর্তুগালকে রক্ষা করেন তিনি।
দুর্দান্ত পারফর্ম করা কোস্টাকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছে সর্বত্র। পোর্তোর এই ফুটবলারকে প্রথমে নজরে এনেছিলেন রিয়াল মাদ্রিদের কিংবদন্তি গোলরক্ষক ইকার ক্যাসিয়াস। ২০১৮ সালে প্রথম তিনিই তাকে দেখে বলেছিলেন কোস্টা লম্বা ঘোড়ার রেসের জন্য এসেছে। কোস্টা পর্তুগালের হয়ে সেøাভেনিয়া ম্যাচের আগ পর্যন্ত ২৪টি পেনাল্টির মুখোমুখি হয়েছেন। যার মধ্যে ১০টি পেনাল্টিই রুখে দিয়েছেন। যা প্রায় শতাংশের হিসেবে ৪০ এর উপরে।

তিনি ক্লাব পর্যায়ে এর আগে রাউন্ড অফ সিক্সটিনে আর্সেনালের বিপক্ষে টাইব্রেকারে মুখোমুখি হয়ে একটি পেনাল্টিও রুখতে পারেননি। অথচ পর্তুগালের হয়ে ঠিকই টানা তিনটি পেনাল্টি রুখে দেন। এমন দুর্দান্ত পারফর্ম্যান্স করে ম্যান অফ দ্য ম্যাচও হয়েছেন তিনি। ম্যাচ শেষে  কোস্টা বলেন, আমি মনে করি এটিই আমার জীবনের সেরা ম্যাচ ছিল। এমন একটি ম্যাচ, যেখানে আমিই সবচেয়ে কার্যকর ছিলাম। দলকে সাহায্য করতে পেরে আমি অনেক অনেক খুশি ও রোমাঞ্চিত।

×