ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

কমলাপুর স্টেডিয়ামে ফিফা আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে সাবিনাদের জয় ৮-০ গোলে

সিঙ্গাপুরকে গোলের মালা উপহার দিল বাংলাদেশ

রুমেল খান

প্রকাশিত: ০০:৫৪, ৫ ডিসেম্বর ২০২৩; আপডেট: ০০:৫৪, ৫ ডিসেম্বর ২০২৩

সিঙ্গাপুরকে গোলের মালা উপহার দিল বাংলাদেশ

ফিফা আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে সিঙ্গাপুরকে উড়িয়ে দিয়ে জয় উদ্্যাপন করছেন বাংলাদেশের নারী ফুটবলাররা

সোমবার। অগ্রহায়ণের শীতল সন্ধ্যা। ঢাকার কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মো. মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামের গ্যালারি থেকে বের হয়ে যাচ্ছেন দর্শকরা। একজন মজা করে বললেন, ‘অতিথিকে দাওয়াত করে এভাবে বেইজ্জত না করলেই পারত!’ তার এই কথার অর্থ হচ্ছে একটু আগেই শেষ হওয়া খেলায় বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দল বেশ বড় ব্যবধানে জিতেছে। তারা রীতিমতো গোলবন্যায় ভাসিয়ে দিয়েছে সফরকারী দল সিঙ্গাপুরকে, ৮-০ গোলে। স্বাগতিক দল ম্যাচের প্রথমার্ধে এগিয়েছিল ৩-০ গোলে। এই ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত গত ১ ডিসেম্বর একই দলকে ৩-০ গোলে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। এর চেয়েও বেশি গোলে জেতার কৃতিত্ব আছে বাংলাদেশের। ২০১০ সালে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে (কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত) ভুটানকে ৯-০ গোলে হারিয়েছিল বাংলাদেশ।  
বাংলাদেশ দল মাঠে নামে গত ম্যাচের অপরিবর্তিত একাদশ নিয়ে। তবে সিঙ্গাপুরের একাদশে ঢোকেন নতুন চার জন। ম্যাচের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আধিপত্য বিস্তার করে খেলে বাংলাদেশ। প্রচুর গোলের সুযোগ পায়। যা থেকে ৮ করেছে। তবে সব গোল হলে ১১ গোলও করতে পারত ।  এই ম্যাচে বিশেষ নজর ছিল সিঙ্গাপুরের ৯ নম্বর জার্সিধারী দানেলে তান লি আন, যিনি জার্মান লিগের বরুসিয়া ডর্টমুন্ডে খেলেন। প্রথম ম্যাচে তিনি খেলেননি। দ্বিতীয় ম্যাচের আগে তাকে উড়িয়ে আনা হয়। যেহেতু জার্মান লিগের খেলোয়াড়, কাজেই তাকে নিয়ে বাংলাদেশ শিবিরে একটু আতঙ্কই ছিল। কিন্তু বাস্তবে মাঠে দানেলে ছিলেন নিষ্প্রভ। শুধু একটি শট নিতে পেরেছেন বাংলাদেশের পোস্টে, তাও সেটা দুর্বল শট।

১৬ মিনিটে গোল করে বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষের সীমানার ডান প্রান্ত থেকে ফ্রি কিক মারেন সাবিনা। বক্সের ভেতরে সেই বল পেয়ে বা পায়ের উঁচু পাস থেকে হেড করেন আফেইদা। সেই বলে আবারও হেড করে জালে পাঠান তহুরা (১-০)। ১৮ মিনিটেই ব্যবধান দ্বিগুণ করে বাংলাদেশ। বা প্রান্তে কর্নার করেন সাবিনা। বক্সের ভেতরে সেই বল বিপন্মুক্ত করতে পারেনি সিঙ্গাপুরের ডিফেন্ডাররা। ফাঁকায় বল পেয়ে যান ঋতুপর্ণা। ঠাণ্ডা মাথায় দেখেশুনে বা বায়ের আলতো শটে লক্ষ্যভেদ করেন পাহাড়িকন্যা (২-০)। ২৪ মিনিটে আবারও বাংলাদেশের গোল। ডান প্রান্ত থকে ডি-বক্সের ভেতরে ক্রস ফেলেন সানজিদা। সেই বল ধরে ঋতুপর্ণার বা পায়ের গড়ানো-তীব্র শট ঠিকমতো ধরতে পারেননি সিঙ্গাপুর গোলরক্ষক তান লি বিন। হাত থেকে বল ফস্কে যায়। কাছেই পজিশনে থাকা সুযোগসন্ধানী তহুরা দৌড়ে গিয়ে শট মেরে বল জালে জড়ান (৩-০)।   
৫১ মিনিটে সানজিদার একটি গোল অফসাইডে বাতিল হয়। তবে ৫৭ মিনিটেই ঠিকই ‘বৈধ’ গোলের মালকিন হন সানজিদা। বা প্রান্তে বক্সের ভেতরে ঋতুপর্ণার গড়ানো ক্রস তহুরা শট নিলেও তা গোলরক্ষকের পায়ে লেগে প্রতিহত হয়। ডান প্রান্তে দাঁড়ানো সানজিদা বা পায়ের প্লেসিং শটে বল আশ্রয় নেয় জালে (৪-০)।  
৬২ মিনিটে মারিয়ার কাছ থেকে পাস পেয়ে ঋতুপর্ণা বল নিয়ে প্রতিপক্ষ এক ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে বক্সের ভেতরে ঢুকে বা পায়ের উঁচু ভলি শটে গোল করেন (৫-০)। ৭৫ মিনিটে গোলের দেখা পান সাবিনা। বক্সের ভেতরে শামসুন্নাহার জুনিয়রের ক্রস থেকে ফিনিশ করেন তিনি। ৮৭ মিনিটে প্রতিপক্ষকে ‘সেভেন-আপ’ উপহার দেয় লাল-সবুজ বাহিনী। সাবিনার ফ্রি কিক বক্সের ভেতরে হেড করেন আফেইদা। বল পান বদলি মাতসুশিমা সুমাইয়া। ডান পায়ে জোরালো শটে লক্ষ্যভেদ করেন তিনি (৭-০)। সংযুক্তি সময়ে (৯০+১ মিনিটে) বা প্রান্তে ঋতুপর্ণা বল নিয়ে বক্সের ভেতরে ঢুকে গড়ানো ক্রস করেন, তা পায়ে লাগিয়ে দুর্দান্ত ফিনিশ করেন বদলি শামসুন্নাহার জুনিয়র (৮-০)। এরপ চার মিনিট পরই রেফারি চোকি ওম খেলা শেষের বাজি বাজালে বড় জয়ের চিত্তসুখ নিয়ে মাঠ ছাড়ে টিটুর শিষ্যারা। 
বাংলাদেশ ॥ রূপনা চাকমা (স্বর্ণা রানী ম-ল), শিউলি আজিম, শামসুন্নাহার (নিলুফা ইয়াসমীন নীলা),আফেইদা খন্দকার, মাসুরা পারভীন, মারিয়া মান্দা (স্বপ্না রানী), মনিকা চাকমা, সানজিদা আক্তার (মাতসুশিমা সুমাইয়া), তহুরা খাতুন (শামসুন্নাহার জুনিয়র), সাবিনা খাতুন, ঋতুপর্ণা চাকমা।

×