ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২১ এপ্রিল ২০২৫, ৮ বৈশাখ ১৪৩২

বিশ্বকাপে বাংলাদেশ

শাকিল আহমেদ মিরাজ

প্রকাশিত: ২৩:৪৩, ১৯ এপ্রিল ২০২৫

বিশ্বকাপে বাংলাদেশ

লাহোরে পাকিস্তানের বিপক্ষে শনিবার বাংলাদেশের ফাহিমা খাতুন ৫৩ বলে অপরাজিত ৪৪ রান করেন

লাহোরে নারী বিশ্বকাপ বাছাইয়ে শনিবারের দিনটা বাংলাদেশের জন্য ছিল হতাশা, আশা আর রোমাঞ্চে ভরপুর। টানা তিন জয়ের পর নিজেদের চতুর্থ ম্যাচে ক্যারিবীয়দের কাছে হেরে যাওয়ায় কোনো ঝামেলা ছাড়া ওয়ানডে বিশ্বকাপের টিকিট পেতে এদিন উড়তে থাকা পাকিস্তানের বিপক্ষে জিততেই হতো নিগার সুলাতান জ্যোতিদের। কিন্তু ব্যাটিং ব্যর্থতায় ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে হেরে যায় তারা।

ফলে ছয় দলের বাছাই পর্ব থেকে সেরা দুই নির্ধারণে অপেক্ষা করতে হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ-থাইল্যান্ড শেষ ম্যাচ পর্যন্ত। যেখানে ৬ উইকেটের দাপুটে জয়ের পরও উইন্ডিজ রান রেটে সামান্য পিছিয়ে থকায় পূর্ণ হয় জ্যোতিদের স্বপ্ন! পাঁচ ম্যাচে তিন জয়ে সমান ৬ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে থেকে বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে বাংলাদেশ (+০.৬৩৯), আগেই টিকিট নিশ্চিত করে পাকিস্তান (৫ জয়ে ১০ পয়েন্ট, +১.০৭৪)। ৬ পয়েন্ট নিয়ে বাদ পড়া উইন্ডিজের রান রেট + ০.৬২৬!

ছয় দলের বাছাই পর্বে সেরা দুই থাকার সুবাদে আগামী সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে ভারতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ১৩তম নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পেল। যেখানে মেয়েদের ক্রিকেটে র‌্যাংকিংয়ের শীর্ষ ছয়টিসহ মোট আটটি দল শিরোপার লড়াইয়ে অংশ নেবে। এ নিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো শ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চে পা রাখল টাইগ্রেসরা। থাইল্যান্ডের বিপক্ষে অবিশ্বাস্য এক জয়ের দরকার ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের। সেই চ্যালেঞ্জে খুব কাছে পৌঁছেও গিয়েছিল তারা। ম্যাচটি জিতলেও শেষদিকে একটু গড়বড় করে হৃদয় ভাঙল তাদের।

৬ উইকেটের জয়ের পথে প্রতিপক্ষের ১৬৬ রান ১০.৫ ওভারে পেরিয়ে যায় তারা। গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে ডে-নাইট ম্যাচে ঝড় তুলে ২৯ বলে ১১ চার ও ২ ছক্কায় ৭০ রান করে আউট হন অধিনায়ক হেইলি ম্যাথুজ। মাত্র ১৭ বলে ৩ চার ও ৫ ছক্কায় ৪৮ রানের ক্যামিও উপহার দিয়েও স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় পোড়েন শিনেল হেনরি। বিশ্বকাপে খেলতে ম্যাচটি তাদের জিততে হতো ১০.১ ওভারে। আরেকটি উপায়ও ছিল।

স্কোর সমান করে ছক্কায় ম্যাচ জিতলে ১১ ওভারের মধ্যে ম্যাচ জিতলেও বৈশ্বিক আসরের টিকিট পেত তারা। কিন্তু কোনোটিই করতে পারেনি। লাহোরের আরেক ভেন্যুতে সকালের ম্যাচে ৯ উইকেটে ১৭৮ রানে থামে বাংলাদেশ। জবাবে ৩৯.৪ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় পাকিস্তান। গত চার ম্যাচেই দুইশ’ ছাড়ানো ব্যাটাররা পাকিস্তানের বিপক্ষে পারেননি জ্বলে উঠতে। 
৫ চারে সর্বোচ্চ ৪৮ রান করেন রিতু মনি। চারটি চারে ৪৪ রান করে অপরাজিত থাকেন ফাহিমা খাতুন। আর কেউ ২৫ রানও করতে পারেননি। ৮টি চারে ৬৯ রানের ইনিংস খেলে পাকিস্তানের জয়ের ভিত গড়ে দেওয়া মুনিবা আলি পান ম্যাচ সেরার পুরস্কার। দলের জয় সঙ্গে নিয়ে ফেরা আলিয়া রিয়াজ ১ ছক্কা ও ৬টি চারে করেন ৫২ রান। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ২১ রানে তিন উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। ৭ বল খেলে রানের খাতা খুলতে না পারা ফারজানা হক তৃতীয় ওভারে বোল্ড হন ফাতিমা সানার বলে।

পরপর দুই ওভারে বিদায় দেন দিলারা আক্তার ও নিগার সুলতানা। চাপে পড়া দলকে বেশিক্ষণ টানতে পারেননি ছন্দে থাকা শারমিন আক্তারও। ৪টি চারে ২৪ রান করে তিনি ফিরলে ভাঙে রিতুমনির সঙ্গে ৪৪ রানের জুটি। পরে নাহিদা আক্তারকে নিয়ে আরেকটি ৪৪ রানের জুটি গড়েন রিতু। মন্থর ব্যাটিংয়ে ৫১ বলে ১৯ রান করেন নাহিদা। পঞ্চাশের কাছে গিয়ে কয়েক ওভার পর ফিরে যান রিতুও। এরপর ফাহিমার ব্যাটে ১৮০ রানের কাছে যায় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় বলেই শাওয়াল জুলফিকারকে এলবিডব্লিউ করে দলকে ভালো শুরু এনে দেন মারুফা আক্তার। কিন্তু এরপর আর প্রতিপক্ষকে চেপে ধরতে পারেনি বাংলাদেশ। 
সিদ্রা আমিনকে নিয়ে দারুণ আস্থার সঙ্গে ৮০ রানে জুটিতে পাকিস্তানকে জয়ের পথে অনেকটা এগিয়ে নেন মুনিবা। ৪টি চারে ৩৩ রান করা সিদ্রাকে কট বিহাইন্ড করে তাদের যুগলবন্দী ভাঙেন রাবেয়া খান। একটা সময় মনে হচ্ছিল মুনিবা ও আলিয়ার জুটিতেই জয় নিয়ে মাঠ ছাড়বে পাকিস্তান। কিন্তু ৬৭ বলে ফিফটি করা মুনিবা পারেননি শেষ করে আসতে। তাকে ফিরিয়ে ৭৪ রানের জুটি ভাঙেন নাহিদা। ৬৫ বলে ফিফটি স্পর্শ করেন আলিয়া।

×