
বিশ্বকাপ বাছাইয়ে স্কটল্যান্ড নারী দলকে ৩৪ রানে হারিয়ে টানা তৃতীয় জয় পেয়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা
নারী বিশ্বকাপ বাছাইয়ে টানা তৃতীয় জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল। তবে আজ লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে বিশ্বরেকর্ড গড়া জুটির পরও স্কটল্যান্ড নারী ক্রিকেট দল হেরেছে ৩৪ রানে। আগে ব্যাট করে বাংলাদেশ ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ২৭৬ রানের রেকর্ড সংগ্রহ গড়ে। জবাবে ১১০ রানে ৭ উইকেট হারানোর পর ১১৫ রানের বিশ্ব রেকর্ড জুটি গড়ে চমকে দেওয়া স্কটল্যান্ড ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ২৪২ রান করতে সক্ষম হয়।
সরাসরি বিকাপ খেলতে না পারার আক্ষেপ যেন বাছাইয়ে পুরোপুরি মিটিয়ে নিচ্ছে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল। একের পর এক রেকর্ডের ফুলঝুড়ি ছড়িয়ে যাচ্ছে। আগের ম্যাচেই থাইল্যান্ড নারী ক্রিকেট দলের বিপক্ষে ৩ উইকেটে ২৭১ রান করে দলীয় সংগ্রহের রেকর্ড গড়ে বাংলাদেশের মেয়েরা। এবার স্কটল্যান্ড নারী ক্রিকেট দলের বিপক্ষে ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ২৭৬ রান করে দলীয় রানের নতুন রেকর্ড গড়েছে। দিবারাত্রির ম্যাচে লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতির ৫৯ বলে হার না মানা বিধ্বংসী ৮৩, ফারজানা হক পিঙ্কি ও শারমিন আক্তার সুপ্তার ফিফটিতে এই রেকর্ড গড়ে বাংলাদেশ। টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ এবং মন্থর গতিতে ব্যাটিং করে। নবম ওভারে দলীয় ৩৫ রানের মাথায় ইশমা তানজিম (১৪) সাজঘরে ফেরার পর দ্বিতীয় উইকেটে ১০৩ রানের জুটি গড়েন ফারজানা ও শারমিন।
শারমিন ৭৯ বলে ৭ চারে ৫৭ ও ফারজানা ৮৪ বলে ৬ চারে ৫৭ রানে সামান্য সময়ের ব্যবধানে বিদায় নেন। রানের গতি কম থাকলেও এতে বড় সংগ্রহের ভিত পেয়ে যায় বাংলাদেশ। পরে অধিনায়ক জ্যোতি ঝড়ো ব্যাটিং করেন। মাত্র ৩৯ বলে ক্যারিয়ারের সপ্তম ফিফটি হাঁকিয়ে তিনি পঞ্চম উইকেটে রিতু মনির (১২) সঙ্গে ৩২ বলে ৩০ এবং ষষ্ঠ উইকেটে ফাহিমা খাতুনের সঙ্গে মাত্র ৪৪ বলে ৬১ রানের ঝড়ো জুটি উপহার দেন। তার এমন ব্যাটিং তাণ্ডবে শেষ ১০ ওভারে হয়েছে ৮৪ রান। তাই দলীয় সংগ্রহের নতুন রেকর্ড হয়েছে।
ফর্মের তুঙ্গে আছেন অধিনায়ক জ্যোতি। বিশ্বকাপ বাছাই শুরুর আগে শেষ প্রস্তুতি ম্যাচে পাকিস্তান নারী ‘এ’ দলের বিপক্ষে ৭০ রান করার পর বাছাইয়ের প্রথম ম্যাচে থাইল্যান্ডের বিপক্ষে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়ার পথে ৮০ বলে ১০১ ও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৫১ রান করেন। ধারাবাহিকতা রেখে এবার ৫৯ বলে ১১ চারে ১৪০.৬৭ স্ট্রাইকরেটে ৮৩ রানে অপরাজিত থাকেন জ্যোতি। তাই এবার নতুন রেকর্ড গড়ে বাংলাদেশ দল। স্কটিশদের হয়ে ৯ ওভারে ৫৩ রান দিয়ে ক্যাথরিন ব্রাইস ২ উইকেট নেন।
জবাব দিতে নেমে প্রথম থেকেই ধারাবাহিকভাবে উইকেট হারিয়েছে স্কটল্যান্ড নারী দল। মারুফা আক্তারের পেসের পর নাহিদা আক্তার ও জান্নাতুল ফেরদৌস সুমনার স্পিনে দিশেহারা হয়েছে তারা। তবে ৩১ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর চতুর্থ উইকেটে ৫৭ রানের জুটি গড়েন সারাহ ব্রাইস ও আলিসা লিস্টার। আলিসা ২৯ বলে ২ চারে ১৮ করে রানআউট হলে জুটি ভাঙ্গে।
এরপর সারাহ একাই লড়ে ৫৮ বলে ৩ চারে ৪২ রান করে সুমনার শিকার হন। ১১০ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে নিশ্চিত পরাজয়ের মুখে পড়ে স্কট মেয়েরা। কিন্তু প্রিয়ানাজ চ্যাটার্জি ও র্যাচেল স্ল্যাটার তীব্র লড়াই করেন। তারা ৮ম উইকেটে নারী ওয়ানডের ইতিহাসে ১১৫ রানের বিশ্ব রেকর্ড জুটি গড়েন।
এর আগে অষ্টম উইকেটে নারী ওয়ানডেতে রেকর্ড জুটি ছিল ৮৮ রানের। শ্রীলঙ্কার নিলাক্ষিকা সিলভা ও ওশাদি রানাসিংহে ২০১৯ সালে হাম্বানটোটায় ইংল্যান্ড নারী দলের বিপক্ষে। প্রিয়ানাজ ৬৩ বলে ৭ চারে ৬১ রানে নাহিদা আক্তারের স্পিনে স্টাম্পিং হলে এই বিশ্ব রেকর্ডের গতি থামে। তবে ক্যারিয়ারের প্রথম অর্ধশতক হাঁকিয়েছেন তিনি এদিন এবং নিজের সেরা ইনিংস উপহার দিয়েছেন।
শেষ পর্যন্ত লড়ে গেছেন র্যাচেল। তিনি ক্যারিয়ারসেরা ব্যাটিংয়ে প্রথম অর্ধশতক হাঁকিয়ে ৭৩ বলে ৫ চারে ৬১ রানে অপরাজিত থাকেন। নারী ওয়ানডেতে ৯ নম্বরে নেমে এটি দ্বিতীয় সেরা ইনিংস। ভারতের পূজা ভাস্ত্রাকার ২০২৩ সালে ওয়াংখেড়েতে অস্ট্রেলিয়া নারী দলের বিপক্ষে ৯ নম্বরে নেমে ৬২ রানে অপরাজিত ছিলেন।
প্রিয়ানাজ-র্যাচেলের এই দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে স্কটল্যান্ডের মেয়েরা শেষ ২৩ ওভারে ১৩২ এবং শেষের ১০ ওভারে ৬১ রান করে। অবশ্য এর পেছনে বড় অবদান বাংলাদেশী ফিল্ডারদের। র্যাচেল ২৫ ও প্রিয়ানাজ ৫৭ রানে ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান।
এরপরও ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ২৪২ রানে থামে স্কটল্যান্ডের ইনিংস। বাংলাদেশের পক্ষে নাহিদা ১০ ওভারে ৪০ রান দিয়ে ৪টি ও সুমনা ২টি উইকেট নেন।
মামুন /রাজু