
নারী ওয়ানডে ক্রিকেট সাক্ষী হয়েছে এক ইনিংসে দুই বোলারের ৫ উইকেট নেওয়ার। বিশ্বরেকর্ড গড়েছেন বাংলাদেশের দুই বোলার জান্নাতুল ফেরদৌস সুমনা (বাঁয়ে) ও ফাহিম
শুরুটা যেমন প্রত্যাশিত ছিল তারচেয়েও ভালো হয়েছে। নারী ওয়ানডে বিশ^কাপ বাছাইয়ে ভালোভাবে জিতে শুরুর প্রত্যয়ে নামা বাংলাদেশ রেকর্ড গড়া জয় পেয়েছে। বৃহস্পতিবার লাহোরের সিটি ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন গ্রাউন্ডে থাইল্যান্ড নারী ক্রিকেট দলকে ১৭৮ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল। এটি ওয়ানডেতে বাংলাদেশ নারী দলের সবচেয়ে বড় জয়।
এই বিশাল জয়টি এসেছে নিগার সুলতানা জ্যোতির দলীয় রানের রেকর্ড গড়ার মাধ্যমে। আগে ব্যাট করে ৫০ ওভারে ৩ উইকেটে ২৭১ রান তোলে বাংলাদেশ। অধিনায়ক জ্যোতি ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন যা বাংলাদেশের পক্ষে দ্রুততম, গড়েছেন জুটির রেকর্ড। জবাবে দুই স্পিনার জান্নাতুল ফেরদৌস সুমনা ও ফাহিমা খাতুনের বিধ্বংসী বোলিংয়ে ২৮.৫ ওভারে থাইল্যান্ডের মেয়েরা গুটিয়ে যায় ৯৩ রানে। উভয়ে ৫টি করে উইকেট নেন। ওয়ানডেতে এটাই প্রথম বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ড মুখোমুখি হয়েছে। আর সেখানেই হয়েছে রেকর্ডের ছড়াছড়ি।
টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ নারী দল। চিরাচরিত নিয়মে ধীরস্থির শুরু করেন ফারজানা হক পিঙ্কি। তার সঙ্গে ইশমা তানজিম ওপেনিংয়ে নেমে বেশিদূর যেতে পারেননি। চতুর্থ ওভারে দলীয় ১৫ রানেই সাজঘরে ফেরেন তিনি (৮)। কিন্তু দ্বিতীয় উইকেটে ১০৪ রানের জুটি গড়েন ফারজানা ও শারমিন আক্তার সুপ্তা। পাওয়ার প্লে’র ১০ ওভারে মাত্র ১ উইকেট হারালেও মাত্র ৪৮ রান এসেছে। তবে ২৪তম ওভারেই দলীয় শতরান হয়েছে। এতেই বড় সংগ্রহের ভিত পেয়ে যায় বাংলাদেশ।
ফারজানা শ্লথ গতির ব্যাটিংয়ে ক্যারিয়ারের ১৪তম ফিফটি হাঁকিয়ে ৮২ বলে ৪ চারে ৫৩ রানে বিদায় নিলে এই জুটি ভাঙে। অপরদিকে শারমিন দুর্দান্ত খেলছিলেন। তার সঙ্গে অধিনায়ক জ্যোতি যোগ দিয়ে রানের গতি বাড়াতে থাকেন। শারমিন ৭৫ বলে ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ অর্ধশতক পেয়ে যান। আর জ্যোতি মাত্র ৪৫ বলেই অর্ধশতক পেয়ে যান। এতে বাংলাদেশ ৪১ ওভারেই দলীয় ২০০ রান তুলে ফেলে। জ্যোতি ওয়ানডেতে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিও পেয়েছেন মাত্র ৭৮ বল খেলে। এটি বাংলাদেশের পক্ষে নারী ওয়ানডেতে দ্রুততম শতরান।
বাংলাদেশ নারী দলের পক্ষে মাত্র দুটি সেঞ্চুরি আছে এর আগে। দুটিই করেছেন ফারজানা। তার একটি সেঞ্চুরি ছিল ১৫৬ বলে, সেটিই ছিল এতদিন দ্রুততম। জ্যোতি ৮০ বলে ১৫ চার, ১ ছয়ে ১০১ রান করে ইনিংসের শেষ বলে সাজঘরে ফেরেন। বাংলাদেশ নারী দলের স্কোরবোর্ডে তখন ৩ উইকেটে ২৭১ রান। এটিই ওয়ানডেতে বাংলাদেশের মেয়েদের সর্বোচ্চ সংগ্রহ। এর আগে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে গত বছর ২৭ নভেম্বর মিরপুরে ৪ উইকেটে ২৫২ রানই ছিল সেরা।
এবার সেটি পেরিয়ে গেছে বাংলাদেশের মেয়েরা জ্যোতির চোখ ধাঁধানো গতির শতকে। বাউন্ডারিতে কোনো ম্যাচে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বাধিক ৬৬ রান এদিন করেছেন তিনি। তবে অল্পের জন্য ক্যারিয়ারের প্রথম শতক পাননি শারমিন। তিনি ১২৬ বলে ১১ চারে ৯৪ রানে অপরাজিত থাকেন। জ্যোতির সঙ্গে তৃতীয় উইকেটে তার ১৫২ রানের জুটি হয়েছে। এটি নারী ওয়ানডের যেকোনো উইকেটে বাংলাদেশের সেরা জুটি।
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে গত বছর ২ ডিসেম্বর মিরপুরে শারমিন ও ফারজানা ১৪৩ রানের জুটি গড়েছিলেন দ্বিতীয় উইকেটে। এতদিন সেটাই ছিল সেরা। আর তৃতীয় উইকেটে ১২৭ রানের জুটি ছিল শারমিন ও রুমানা আহমেদের ২০১৭ সালের ১৪ জানুয়ারি দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে কক্সবাজারে। থাইল্যান্ডের হয়ে এদিন ৩টি উইকেট ভাগাভাগি করেছেন ফানিতা মায়া, থিপাচা পুথাওং ও ওনিচা কামচোম্ফু। কামচোম্ফু ৯ ওভারে ৫৮ রান খরচা করেছেন যা থাইল্যান্ডের হয়ে কোনো ম্যাচে সবচেয়ে বেশি রান দেওয়ার রেকর্ড।
জবাব দিতে নেমে ৩৮ রানের ওপেনিং জুটি গড়ে থাই মেয়েরা। তবে রানের গতি ছিল ধীর। নবম ওভারের প্রথম বলেই প্রথম আঘাত হানেন লেগস্পিনার ফাহিমা। এরপর ফাহিমা ও অফস্পিনার সুমনার ঘূর্ণিতে বেসামাল থাই মেয়েরা নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়েছে।
শেষ পর্যন্ত তারা ২৮.৫ ওভারেই ৯৩ রানে মুখ থুবড়ে পড়েছে। দুই ওপেনার চানিদা সুত্থিরুয়াং ২৬ বলে ৪ চারে ২২ ও নাত্তায়া বুচাথ্যাম ৩৬ বলে ২ চারে ১৭ রান করেন। ফাহিমা ৮.৫ ওভারে ১ মেডেনে ২১ রানে ও জান্নাতুল সুমনা ৫ ওভারে ৩ মেডেনে ৭ রান দিয়ে ৫টি করে উইকেট নেন। দু’জনেরই ক্যারিয়ারে এটি প্রথমবার ৫ উইকেট। এক ম্যাচে বাংলাদেশের পক্ষে দুই বোলারের ৫ উইকেটও এই প্রথম।
১৭৮ রানের বিশাল জয় পান জ্যোতিরা। এটিই ওয়ানডেতে সেরা জয়। এর আগে গত বছর ২৭ নভেম্বর আয়ারল্যান্ড নারী ক্রিকেট দলকে মিরপুরে ১৫৪ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে দেয় বাংলাদেশ। সেটিই ছিল এতদিন সবচেয়ে বড় জয়।