ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ ফাল্গুন ১৪৩১

লড়লেন কেবল শান্ত আর জাকের

শাকিল আহমেদ মিরাজ

প্রকাশিত: ০০:২০, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

লড়লেন কেবল শান্ত আর জাকের

শূন্য রানেই উইল ইয়াংকে সাজঘরে ফেরত পাঠিয়ে এভাবেই উল্লাসে মেতে ওঠেন তাসকিন আহমেদ

সম্প্রতি বাংলাদেশের ক্রিকেটে ব্যর্থতার গল্পটা কেবলই হতাশার ব্যাটিংয়ে মোড়ানো। দুবাইয়ে শক্তিশালী ভারতের বিপক্ষে তাওহিদ হৃদয়ের (১১৮ বলে ১০০) দারুণ এক সেঞ্চুরির পরও মাত্র ২২৮ রানে অলআউট হয়ে ৬ উইকেটের হারে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মিশন শুরু করা নাজমুল হোসেন শান্তর দল রাওয়ালপিন্ডির ব্যাটিং সহায়ক কন্ডিশনেও সেই ধারা থেকে বের হতে পারল না।

সেমির রেসে টিকে থাকতে জয়ের কোনো বিকল্প নেই, সোমবার নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এমন ম্যাচে ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে টেনেটুনে ২৩৬ করতে পারে বাংলাদেশ। ফর্মহীনতায় নিজেকে হারিয়ে খোঁজা অধিনায়ক শান্ত ফিফটি পেয়েছেন ঠিকই, তবে ৭৭ রান করতে খেলেছেন ১১০ বল। ভাগ্যিস আগের ম্যাচে ফিফটি করা জাকের আলি ৫৫ বলে ৪৫ রান করেছিলেন, না হলে দুইশ’ হতো কি না সন্দেহ।  
ফিট হয়ে মাহমুদুল্লাহ একাদশে ফেরায় বাদ পড়েন সৌম্য সরকার। তানজিদ হাসান তামিমের সঙ্গে ওপেন করেন শান্ত। মাঝের ওভারে  দ্রুত উইকেট হারায় বাংলাদেশ। রাওয়ালপিন্ডির ফ্ল্যাট উইকেটে মাঝেমধ্যে মোয়ার মতো বল পেয়েই যেন শট খেলার জন্য মরিয়ে হয়ে ওঠেন ব্যাটাররা। তাতে খেসারতও দিতে হয় তানজিদ, হৃদয়, মুশফিকদের।

১১০ বলে ৯ চারে শান্তর ৭৭ এবং ৫৫ বলে ৩ চার ও ১ ছক্কায় জাকেরের ৪৫ ইনিংস ছাড়া সেভাবে কেউই অবদান রাখতে পারেননি। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশের কোনো অধিনায়কের প্রথম ফিফটি এটি। উইল ও’রুর্কির অফ স্টাম্পের বাইরের বল ঠিকমতো খেলতে পারেননি শান্ত। ব্যাটের কানায় লেগে উঠে যায় বেশ উপরে। বেশ কয়েক ফিল্ডার আশপাশে। তাদের রেখে মিডউইকেট থেকে অনেকটা দৌড়ে ক্যাচ নেন ব্রেসওয়েল। ৫০ পর্যন্ত কোনো জুটি পৌঁছায়নি।

কিন্তু টসে হেরে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ পেয়ে দারুণ শুরুরই ইঙ্গিত দিয়েছিল বাংলাদেশ। দুই ওপেনার শান্ত ও তানজিদ গড়েছিলেন ৪৫ রানের জুটি। ভালো শুরুর পরই হঠাৎ খেই হারানো। নবম ওভারের দ্বিতীয় বলে তামিমকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন স্পিনার মাইকেল ব্রেসওয়েল। মিড উইকেটে দাঁড়িয়ে থাকা কেন উইলিয়ামসনের হাতে ক্যাচ তুলে দেন তানজিদ। ২৪ বলে ১ চার ও ২ ছক্কায় ২৪ রান করেন এই বাঁহাতি ব্যাটার। 

উদ্বোধনী জুটি ভাঙার পর ১ উইকেটে ৫৮ রানে পাওয়ার প্লে শেষ করে (প্রথম ১০ ওভার) বাংলাদেশ। মেহেদি হাসান মিরাজ তিন নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামলেও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ১৩ রান করা মিরাজকে ফেরান উইলিয়াম ও’রুর্কি। তৃতীয় উইকেটে হৃদয়ের সঙ্গে ৫১ বলে ৩৩ রানের জুটি গড়তে অবদান রাখেন শান্ত। আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান হৃদয় করেছেন ৭ রান। তাকেও ফিরিয়েছেন ব্রেসওয়েল।

এর পর অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিমের (২) দৃষ্টিকটু শট ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের (৪) ড্রেসিংরুমে ফেরা। দুজনকেই তুলে নেন ব্রেসওয়েল। বাংলাদেশের মিডল অর্ডার একাই ধসিয়ে দেন এ কিউই স্পিনার। শান্তর ৭৭, জাকেরের ৪৫-এর পর রিশাদের ২৬ রানের সৌজন্য দুইশ’ পেরোয় বাংলাদেশ দল। ১০ ওভারে ২৬ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিয়েছেন ব্রেসওয়েল। ২টি উইকেট নিয়েছেন ও’রুর্কি। রাওয়ালপিন্ডি স্টেডিয়ামে এর আগে শেষ ওয়ানডে, ২০২৩ সালে নিউজিল্যান্ডের দেওয়া ৩৩৭ রানের লক্ষ্য তাড়া করে অনায়াসে জিতেছিল পাকিস্তান।

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে মাঠে নামার আগে বাংলাদেশের প্রধান কোচ ফিল সিমন্সও জানিয়েছিলেন, ৩০০ পেরোনো স্কোর গড়ার সামর্থ্য তার দলও রাখে। শান্তদের কোচ বলেছিলেন, এটা বড় স্কোর গড়ার মাঠ। ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচেও দেখেছি লাহোরে কী রানটা হয়েছে। এখানে বড় স্কোরই দেখছি। ৩০০ পেরোনো স্কোর গড়তে হবে। আমাদের সেই সামর্থ্য আছে। আমাদের খেলা গত পাঁচ ওয়ানডে দেখুন, দুটিতেই ৩০০ পেরোনো স্কোর গড়েছি। আমাদের সেই সামর্থ্য আছে।
কিন্তু তিনশ’র কথা বলে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আড়াইশ’ রানও করতে পারেনি বাংলাদেশ!  নিজেকে ফিরে পাওয়ার লড়াইয়ে শান্ত বল খেলেছেন অনেক। অভিজ্ঞ মুশফিক-মাহমুদুল্লাহও দায়িত্ব নিতে পারেননি। প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হৃদয়-তানজিদ-মিরাজও।

×