সেন্ট কিটসের ওয়ার্নার পার্কে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৬০ রানে হারিয়ে বাংলাদেশের মেয়েদের উল্লাস
বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটের জন্য বুধবার ছিল অবিস্মরণীয় একদিন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে জাতীয় দলের দারুণ জয়ের সুখবর নিয়ে শুরু হয়েছিল সকাল। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৬০ রানের বড় জয়ে সিরিজে ১-১এ সমতায় ফেরার পাশাপাশি সরাসরি বিশ্বকাপে খেলার আশা বাঁচিয়ে রাখে নিগার সুলতান জ্যোতির দল। এজন্য শুক্রবার রাত ১২টায় শেষ ম্যাচে জিততে হবে টাইগ্রেসদের।
অন্যদিকে দুপুরে মালয়েশিয়ায় প্রত্যাশিত জয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ নারী টি২০ বিশ্বকাপের সুপার সিক্সে জায়গা করে নেয় বাংলাদেশের কিশোরীরা। গ্রুপ-পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে সুমাইয়া আক্তারের দল স্কটল্যান্ডকে হারিয়েছে ১৮ রানে। টুর্নামেন্টের আগের দুই ম্যাচে ব্যাটিংয়ে ব্যর্থ ইয়াং টাইগ্রেসরা এ দিন উন্নতির ছাপ রাখে। ২০ ওভারে ৯ উইকেটে করে ১২১ রান। জবাবে ৮ উইকেটে ১০৩ রানে থামে স্কটিশদের ইনিংস। ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা লেগস্পিনার আনিসা আক্তার সোবা।
ডিÑ গ্রুপ থেকে তিন ম্যাচের দুটিতে জিতে ৪ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয়সেরা দল হিসেবে সুপার সিক্সে উঠল ইয়াং টাইগ্রেসরা। এর আগে নেপালের বিপক্ষে ৫ উইকেটের জয়ে মিশন শুরু করা মেয়েরা পরাশক্তি অজিদের কাঁপিয়ে দিয়ে হারে ২ উইকেটে। ৩ জয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপের শীর্ষে অস্ট্রেলিয়া। শুধু নেপালের বিপক্ষে ১ উইকেটের নাটকীয় জয়ে তৃতীয় দল হিসেবে স্কটিশরাও উঠে গেছে সুপার সিক্সে। অনূর্ধ্ব-১৯ নারী টি২০ বিশ্বকাপের দ্বিতীয় আসর এটি। ২০২৩ আসরের চ্যাম্পিয়ন ভারত।
এবারও চারটি গ্রুপে ভাগ হয়ে খেলছে ১৬টি দল। প্রতিটি গ্রুপ থেকে শীর্ষ তিনটি করে দল উঠবে সুপার সিক্সে। ১২ দলের সুপার সিক্স পর্বকে আবার দুটি ভাগে ভাগ (গ্রুপ-১ ও গ্রুপ ২) করা হয়েছে, ছয়টি করে দল নিয়ে। সুপার সিক্সের দুটি গ্রুপ থেকে শীর্ষ চার দল উঠবে সেমিফাইনালে। মালয়েশিয়ার বাঙ্গিতে নেপালের বিপক্ষে ৫ উইকেটের দাপুটে জয়ে মিশন শুরু করা সুমাইয়ারা অস্ট্রেলিয়াকে কাঁপিয়ে দিয়ে হেরেছিল মাত্র ২ উইকেটে।
এবার স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে ঠিকই সুপার সিক্সে জায়গা করে নিল। সুমাইয়া আক্তার এ দিন ব্যাটিং অর্ডারে একটু নিচে নেমে খেলেন সাত নম্বরে। ২ চারে ৩৬ বলে অপরাজিত ২৮ রানের দারুণ ইনিংস দলকে ১২০ রানের পুঁজি এনে দেন অধিনায়ক। এরপর বোলিংটা হয় দুর্দান্ত। ম্যাচসেরা সোবা ৪ ওভারে ১ মেডেন, ২৫ রানের বিনিময়ে নিয়েছেন ৪ উইকেট। একটি করে উইকেট নিয়েছেন নিশিতা আক্তার নিশি ও হাবিবা ইসলাম।
ওদিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজেও নারী জাতীয় দলের হয়ে বোলাররাই ছিলেন স্মরণীয় জয়ের রূপকার। আগের ম্যাচে ১৯৮ রানের পুঁজি নিয়ে ৯ উইকেটের হার। এবার তো পুঁজি আরও কম। তবে বিশ্বকাপের আশা জিইয়ে রাখার তীব্র তাড়নায় দারুণ পারফরম্যান্স মেলে ধরলেন বাংলাদেশের বোলাররা। বাংলাদেশের স্পিনত্রয়ী নাহিদা আক্তার, রাবেয়া খান ও ফাহিমা খাতুন মিলে শিকার করেন ৭ উইকেট।
পেস বোলিংয়ের ভরসা মারুফা আক্তারও অবদান রাখেন দুই উইকেট নিয়ে। সেন্ট কিটসের ওয়ার্নার পার্কে অধিনায়ক জ্যোতির (১২০ বলে ৬৮) ব্যাটিং দৃঢ়তায় ৪৮.৫ ওভারে ১৮৪ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। এরপর দুরন্ত বোলিংয়ে ৩৫ ওভারেই প্রতিপক্ষকে গুটিয়ে দেয় ১২৪ রানে। ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা স্পিনার নাহিদা আক্তার। আয়োজক ভারতসহ টেবিলের শীর্ষ ছয় দল সরাসরি আসন্ন নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপে খেলবে।
ওডিআই ওমেন্স চ্যাম্পিয়নশিপে ২৩ ম্যাচে ২১ পয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশ অবস্থান ৭ নম্বরে। সিরিজের শেষ ম্যাচ জিততে পারলে জ্যোতিরাও সরাসরি পৌঁছে যাবে বিশ্বমঞ্চে। আর হেরে গেলে সমান পয়েন্ট নিয়েও রান রেটে বিশ্বকাপে জায়গা করে নেবে নিউজিল্যান্ড। সেক্ষেত্রে টিকিটের জন্য বাছাই পর্বে খেলতে হবে বাংলাদেশকে। আগামী আগস্ট-সেপ্টেম্বরে ৮ দল নিয়ে ভারতে হবে নারী বিশ্বকাপের ১৩তম আসর।