অ্যান্টিগায় বাংলাদেশের সাবেক কোচ কোর্টনি ওয়ালশের সঙ্গে তাসকিন-মিরাজরা
একটানা হারের বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে বাংলাদেশ দল। তিন ফরম্যাট মিলিয়ে টানা ৪ সিরিজ হেরেছে দলটি। দুটি টেস্ট সিরিজ, একটি করে টি২০ ও ওয়ানডে সিরিজে সর্বশেষ ১০ ম্যাচ খেলে মাত্র একটি জয়। এমন পরিস্থিতিতে এবার ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে নামছে বাংলাদেশ দল। অ্যান্টিগার স্যার ভিভ রিচার্ডস স্টেডিয়ামে আজ রাত ৮টায় মাঠে গড়াবে সিরিজের প্রথম টেস্ট।
এই সিরিজে অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম ও নিয়মিত অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত নেই। তাই প্রথমবার টেস্টে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেবেন মেহেদি হাসান মিরাজ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে চলতি মাসেই আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডেতে অধিনায়ক হিসেবে যাত্রা শুরু হয়েছে তার। এবার টেস্টে দেশের ১৪তম অধিনায়ক হতে যাচ্ছেন তিনি। চলতি বছরে উভয় দলেরই এটি শেষ সিরিজ। আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে উভয় দলেরই আর ফাইনাল খেলার সম্ভাবনা নেই। তাই জয় পেতে উন্মুখ দু’দলই। তবে এই ম্যাচের প্রতিদিনই বৃষ্টির সম্ভাবনা কিছুটা বিঘœ ঘটাবে।
অ্যান্টিগার স্যার ভিভ রিচার্ডস স্টেডিয়ামে হবে পেসারদের লড়াই। কারণ এখানে পেস সহায়ক উইকেটই থাকে। সেক্ষেত্রে উভয় দল একাদশে অন্তত ৩ পেসার নিয়েই নামার সম্ভাবনা। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের পেস অলরাউন্ডার জ্যাসন হোল্ডার না থাকায় কিছুটা শক্তিমত্তায় ঘাটতি দেখা দিয়েছে। কিন্তু এর বাইরেও তারা টেস্টের যে স্কোয়াড দিয়েছে সেখানে ৫ জন পেসার আছেন। অভিজ্ঞ কেমার রোচ, দীর্ঘদেহী আলজারি জোসেফ, প্রতিশ্রুতিশীল শামার জোসেফ ছাড়াও আছেন এই ফরম্যাটের পরীক্ষিত জেইডেন সিলস। আরেক পেসার অ্যান্ডারসন ফিলিপ ছাড়াও দলে ফেরানো হয়েছে পেস বোলিং অলরাউন্ডার জাস্টিন গ্রিভসকে।
পাকিস্তান সফর শেষ করে কয়েকদিন পরই ভারত সফরে গেছে বাংলাদেশ দল। সেখানে টেস্ট ও টি২০ সিরিজ শেষ করে আরব আমিরাতে গিয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ খেলেছে। সিরিজটি চলার মধ্যেই বাংলাদেশের টেস্ট দলের সদস্যরা ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গেছেন। দীর্ঘ এক ভ্রমণ করে ক্রিকেটাররা ক্যারিবীয় দ্বীপে এসেছেন। ১১ ক্রিকেটার আগে আসলেও বাকিরা আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ খেলে যোগ দিয়েছেন। অ্যান্টিগায় ২ দিনের প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছেন ক্রিকেটাররা। সেখানে নিজেদের ব্যাটিং-বোলিংয়ে বেশ ঝালিয়ে নিতে পেরেছে। সেটি টেস্ট সিরিজের আগে বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলেই আশা ক্রিকেটারদের। ১০টি টেস্ট সিরিজ হয়েছে বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যে। ৫ বারই ওয়েস্ট ইন্ডিজে মাটিতে হয়েছে, ৪ বার হয়েছে বাংলাদেশে। এবার ষষ্ঠবারের মতো ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর করছে বাংলাদেশ টেস্ট দল।
সবমিলিয়ে ২০ টেস্ট হয়েছে দুই দলের মধ্যে। বাংলাদেশ জিতেছে ৪টি, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৫টি। শুধু একটাই মাত্র ড্র হয়েছে। ২০০৯ সালের ঐতিহাসিক সফরে টেস্টে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করে বাংলাদেশ। সেবার নিয়মিত ক্রিকেটাররা বিদ্রোহ করায় দ্বিতীয় সারির দল নিয়ে খেলে ক্যারিবীয়রা। এ ছাড়া ২০০৪ সালের সফরে একটি টেস্ট ড্র করে তাদের বিপক্ষে। এ দুটি ছাড়া আরও ৩ বার ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়ে প্রতিবারই হোয়াইটওয়াশ হয়েছে বাংলাদেশ। এবার তাই বড় চ্যালেঞ্জ খর্বশক্তির দল নিয়ে লড়াই করা। ৬ বছর আগে সর্বশেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ। সেবার ২ টেস্টে দাঁড়াতেই পারেনি। এবার সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই।
পাকিস্তানের বিপক্ষে গত আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে ঐতিহাসিক সিরিজ জয় করেছে বাংলাদেশ তাদেরই মাটিতে। মাঝে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হারলেও সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় ক্রিকেটারদের। দেশের পরিচিত কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন থাকায় বাড়তি অনুপ্রেরণা পাচ্ছেন ক্রিকেটাররা। ব্যাটিং কোচ হিসেবে কাজ করছেন তিনি। সর্বশেষ কয়েকটি সিরিজে বাংলাদেশের ব্যাটিং ব্যর্থতাই ডুবিয়েছে। এবার তাই সেদিকেই উন্নতি করার দিকে মনোযোগ। একই সমস্যা উইন্ডিজ দলেও। তারাও চাইছে ব্যাটিংয়ে উন্নতি ঘটাতে। তবে বাংলাদেশের পেস আক্রমণ ঠেকাতে তাদেরও চ্যালেঞ্জে পড়তে হবে। গতিময় পেসার নাহিদ রানা, ডানহাতি তাসকিন আহমেদ ও হাসান মাহমুদ বেশ ফর্মে আছেন। নিয়মিতই তারা ভালো করছেন।
এবার ক্যারিবীয় দ্বীপে তারা গতির ঝড় তুলে জয়ের ধারায় ফিরতে চান। দুই দলের স্কোয়াড বিবেচনায় অভিজ্ঞতা সমানে-সমান। ক্যারিবীয় দলের সবাই মিলে ৩০৯ টেস্ট খেলেছেন এবং বাংলাদেশের সবাই মিলে খেলেছেন ৩০১ টেস্ট। তবে বাংলদেশ দলের এই স্কোয়াডের ৯ জনই আগে কখনো ওয়েস্ট ইন্ডিজে খেলেননি। বাংলাদেশ দল অবশ্য ৬ বছর আগে এখানে টেস্ট খেললেও চলতি বছরের শুরুতে টি২০ বিশ^কাপ খেলেছে এবং ব্যর্থ হয়েছে। এবার চ্যালেঞ্জ টেস্ট সিরিজে ভালো করার।