ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

এমন কীর্তি তারা গড়িল কেমনে

স্পোর্টস রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:০৩, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

এমন কীর্তি তারা গড়িল কেমনে

জোড়া সেঞ্চুরিতে রেকর্ড বই নাড়িয়ে দিয়েছেন তিলক ভার্মা ও সাঞ্জু স্যামসন

এ কী ভানুমতী... এ কী ইন্দ্রজাল? বেঁচে থাকলে সৈয়দ মুজতবা আলী লিখতেন, এ কী ক্রিকেট... এ কী ব্যাটিং! টি২০’র এই যুগে ক্রিকেটের বলটা যেন ফুটবল হয়ে উঠেছে। নইলে ছোট্ট এই বলটাকেও এভাবে পেটানো সম্ভব? তিলক ভার্মা ও সাঞ্জু স্যামসনের বেধড়ক পিটুনিতে বিধ্বস্ত স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকা। জোহানেসবার্গে চতুর্থ ও শেষ টি২০তে ১ উইকেটে ২৮৩ রান তুলে ভারত কেবল ১৩৫ রানের জয়ই পায়নি, রেকর্ডের বন্যা বইয়ে দিয়েছে সুর্যকুমার যাদবের দল। মাত্র ৪৭ বলে অপরাজিত ১২০ রানের সঙ্গে ২ ক্যাচ নিয়ে ম্যাচসেরা তিলক।

 

আন্তর্জাতিক টি২০তে রানের হিসাবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ভারতের সবচেয়ে বড় জয় এটি। ২০২৩ সালে জোহানেসবার্গে তাদের ১০৬ রানের জয় ছিল আগের রেকর্ড। সেই জোহানেসবার্গেই  ভারত ২০ ওভারে করল ১ উইকেটে ২৮৩ রান। জবাবে প্রথম তিন ওভারে চার ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে লড়াই থেকে অনেকটাই ছিটকে যাওয়া দক্ষিণ আফ্রিকা ১০ বল বাকি থাকতে গুটিয়ে যায় ১৪৮ রানে। 

আগের ম্যাচে তিন নম্বরে ফিরে ৫৬ বলে ১০৭ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলা তিলককে এবারও আউট করতে পারেননি প্রোটিয়া বোলাররা। ওই ম্যাচে ৭ ছক্কার পর এবার তিনি বল হাওয়ায় ভাসিয়ে বাউন্ডারির বাইরে ফেলেছেন ১০ বার। সঙ্গে ৯ চারে ৪৭ বলে খেলেছেন ১২০ রানের বিধ্বংসী ইনিংস। ম্যাচ-সেরার পুরস্কার জেতেন তিনিই। ৪ ম্যাচে ১৪০ গড় ও ১৯৮.৫৮ স্ট্রাইক রেটে ২৮০ রান করে সিরিজ-সেরার স্বীকৃতিও পান ২২ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার।
 
ওপেনার স্যামসন ৫৬ বলে ৯ ছক্কা ও ৬ চারে করেছেন অপরাজিত ১০৯ রান। দ্বিতীয় উইকেটে দুজনে অবিচ্ছিন্ন ২১০ রানের জুটি গড়েছেন স্রেফ ৮৬ বলে! টি২০ দ্বিতীয় বা এর নিচের উইকেটে প্রথম দুইশ রানের জুটি এটিই। গত ফেব্রুয়ারিতে কীর্তিপুরে নামিবিয়ার বিপক্ষে নেদারল্যান্ডসের মাইকেল লেভিট ও সাইব্রান্ড এঙ্গেলব্রেশটের ১৯৩ রানের জুটি ছিল দ্বিতীয় উইকেটে আগের সর্বোচ্চ।

টি২০তে যেকোনো উইকেটে প্রথমবার দুইশ রানের জুটি পেল ভারত। গত জানুয়ারিতে বেঙ্গালুরুতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ২২ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর পঞ্চম উইকেটে রোহিত শার্মা ও রিঙ্কু সিংয়ের অবিচ্ছিন্ন ১৯০ রানের জুটি ছিল তাদের আগের সেরা।

দ্য ওয়ান্ডারার্স স্টেডিয়ামে ২০ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে ভারত করেছে ২৮৩ রান। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে কুড়ি ওভারের ক্রিকেটে যেকোনো দলের সর্বোচ্চ দলীয় এবং এই সংস্করণে ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংগ্রহ এটি। আইসিসির পূর্ণ সদস্য দুই দলের মধ্যে টি২০তে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহও এটি। এখানে সর্বোচ্চও ভারতের, গত মাসে হায়দরাবাদে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৬ উইকেটে ২৯৭ রান করেছিল তারা, যা এই সংস্করণে ভারতের সর্বোচ্চ সংগ্রহ। 

এদিন ভারতের ইনিংসে ছক্কা হয়েছে মোট ২৩টি, পূর্ণ সদস্য দুই দলের মধ্যে টি২০তে এক ইনিংসে যা সর্বোচ্চ। আগের সর্বোচ্চ ছিল ২২ ছক্কা; গত মাসে হায়দরাবাদে বাংলাদেশের বিপক্ষে ভারতের, ২০২৩ সালে সেঞ্চুরিয়নে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ও ২০১৯ সালে দেরাদুনে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে আফগানিস্তানের।

এই সংস্করণে এক ইনিংসে দুই ব্যাটসম্যানের সেঞ্চুরি দেখা গেল মাত্র তৃতীয়বার, পূর্ণ সদস্য দুই দলের মধ্যে প্রথমবার। ২০২২ সালে বুলগেরিয়ার বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন চেক রিপাবলিকের সাবাউন দাভিজি ও ডিলান স্টেইন। এই বছরের ফেব্রুয়ারিতে চীনের বিপক্ষে ম্যাচে এই স্বাদ পান জাপানের লাচলান ইয়ামামোতো-লেক ও কেন্দেল কাদোওয়াকি-ফ্লেমিং।

ভারতের দ্বিতীয় ও সব দল মিলিয়ে পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে এই সংস্করণে টানা দুটি সেঞ্চুরির কীর্তি গড়লেন তিলক। আগের চার জন ফ্রান্সের গুস্তাভ মেকিয়ান, দক্ষিণ আফ্রিকার রাইলি রুশো, ইংল্যান্ডের ফিল সল্ট ও ভারতের স্যামসন।

তিলকের ১০ ছক্কা ভারতের হয়ে এক ইনিংসে যৌথভাবে সর্বোচ্চ। ২০১৭ সালে ইন্দোরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে রোহিত শার্মা ও চলতি সিরিজের প্রথম ম্যাচে স্যামসন মেরেছিলেন ১০ ছক্কা।

উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান স্যামসন এবার গড়েছেন আরেক কীর্তি। এই সংস্করণে এক পঞ্জিকাবর্ষে তিনটি সেঞ্চুরি করা প্রথম ক্রিকেটার তিনিই। গত মাসে হায়দরাবাদে বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজের শেষ ম্যাচে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি করেন তিনি। এরপর আবার তিন অঙ্কের স্বাদ পান ডারবানে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে। পরের দুই ম্যাচে শূন্য রানে ফেরার পর আবার শতকের আনন্দে মাতলেন তিনি।

মিরাজ/এমএম

×