ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১

বিপিএলও কি তবে দুর্নীতির আখড়া!

প্রকাশিত: ২১:২০, ১ নভেম্বর ২০২৪

বিপিএলও কি তবে দুর্নীতির আখড়া!

বিপিএল।

বিশ্ব ক্রিকেটে বর্তমানে ফ্রাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টের জয়জয়কার। ক্রিকেট খেলা হয় এমন দেশগুলোর মধ্যে খুব কম দেশই আছে যেখানে ফ্র্যাঞ্চাইজি টি২০ হয় না। তবে এই জনপ্রিয় টুর্নামেন্টগুলোকে ঘিরে  গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। সন্দেহের তালিকায় আছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগও (বিপিএল)। 

ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) একজন সাবেক কর্মকর্তা অভিযোগ করেছেন, বেশ কয়েকটি ফ্র্যাঞ্চাইজি টি২০লিগ আইসিসির দুর্নীতিবিরোধী নীতিমালা মানছে না। সাবেক এই কর্মকর্তা জানান, আইসিসি নির্ধারিত দুর্নীতিবিরোধী সুরক্ষা এবং নিয়ম-কানুন না মেনে এসব টুর্নামেন্টে আর্থিক অনিয়ম এবং ফিক্সিংয়ের ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে। যা ক্রিকেটের মতো জনপ্রিয় 
খেলাটির স্বচ্ছতা এবং গ্রহণযোগ্যতার জন্য মারাত্মক হুমকি হিসেবে দেখা দিচ্ছে।

ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফের রিপোর্টে বিপিএল প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, সর্বশেষ দুই বছরে বিপিএলে ৩০টিরও বেশি দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তবে এসব অভিযোগের জন্য এখন পর্যন্ত কাউকে নিষিদ্ধ করা হয়নি। অনেক ক্ষেত্রে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার আগ পর্যন্ত খেলোয়াড়রা বছরের পর বছর খেলা চালিয়ে গেছেন বলেও জানানো হয় প্রতিবেদনে। 

ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বিপিএলের মতো বিশ্বজুড়ে চলা বেশ কয়েকটি র্ফ্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট ও লিজেন্ডস লিগে দুর্নীতির অভিযোগ আছে। এসব লিগে  দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রমের জন্য আইসিসিকে তালিকাভুক্ত করা হয় না। কাজটি তারা স্বল্প খরচে করে। সেক্ষেত্রে অনেক সমস্যা থেকেই যায়। অভিযোগ জানাতে অনেক খেলোয়াড়ই ভয় পান বলেও উঠে এসেছে টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে। আইসিসির দুর্নীতিবিরোধী ইউনিটে সাত বছর ধরে তদন্ত সমন্বয়কের কাজ করেছেন স্টিভ রিচার্ডসন। গত  বছর আইসিসির দায়িত্ব ছাড়েন রিচার্ডসন। 

দায়িত্ব ছাড়ার এক বছরের মাথায় সাবেক এই প্রভাবশালী কর্মকর্তঅ বিষ্ফোরক এসব বিষয় নিয়ে মুখ খুললেন। সাবেক এই আইসিসি কর্মকর্তার মতে, দুর্নীতিবিরোধী  নীতিমালা ক্রিকেটের অভিভাবক সংস্থা মোটেই ঠিকমতো মেনে চলে না।  সেই প্রতিবেদনে ‘কীভাবে ক্রিকেট নিজেকেই নিজে খেয়েছে’- এই শিরোনামের অন্য একটি সংবাদ সংযুক্ত করা হয়। যেখানে ক্রিকেটে দুর্নীতির বিস্তার এবং ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলোতে সুরক্ষা ব্যবস্থার ঘাটতির কথা উল্লেখ করা হয়। 

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) নিয়েও সেখানে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। বলা হয়, অন্যান্য লিগের মতোই বিপিএলও দ র্নীতিবিরোধী কাজের জন্য আইসিসিকে তালিকাভুক্ত করেনি এবং দুর্নীতি দমনে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, গত দুই বছরে বিপিএলে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে ৩০টিরও বেশি, কিন্তু এ পর্যন্ত কাউকেই নিষিদ্ধ করা হয়নি। এমনকি যারা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, তারা দোষী প্রমাণিত হওয়ার আগ পর্যন্ত নির্বিঘ্নে খেলা চালিয়ে যাচ্ছেন।

আইসিসির দুর্নীতিবিরোধী ইউনিটে সাবেক তদন্ত সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা স্টিভ রিচার্ডসন জানান, ছোট ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলো নিজেদের ইভেন্টে দুর্নীতিবিরোধী  নীতিমালা কার্যকর করতে ব্যর্থ হচ্ছে। 

তিনি বলেন, ‘যখন ছোট ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ইভেন্ট পরিচালনা করে, তখন ঝুঁকি থেকেই যায়। শুধু একজন  দুর্নীতিবিরোধী কর্মকর্তাকে নিযুক্ত করলেই কার্যকর সুরক্ষা নিশ্চিত হয় না। অভিজ্ঞতা এবং তথ্যের অভাবের কারণে দুর্বলতা থেকে যায় এবং এর ফলে লিগের জন্য ঝুঁকির মাত্রা বেড়ে যায়।’

রিচার্ডসন আরও বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে সব সময়ই দুর্নীতিবাজরা তৎপর হওয়ার চেষ্টা চালায়। তবে এর মানে এই নয় যে সব লিগেই দুর্নীতিবাজরা কাজ করছেন। অনেক লিগের আয়োজকই হয়তো ভালো উদ্দেশ্য নিয়ে এগিয়ে আসেন, কিন্তু তাঁরা বুঝতে পারেন না যে তাঁদের কাজের মাধ্যমে দুর্বলতা তৈরি হচ্ছে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি এই বিষয়ে বলেন, ‘অভিযোগ জানাতে অনেক খেলোয়াড়ই ভয় পান। প্রথম কারণ, তাদের পারিশ্রমিক নাও দেওয়া হতে পারে, দ্বিতীয় কারণ তারা নিজেদের অনিরাপদ বোধ করতে পারেন। তারা তখনই জানান, যখন সরাসরি অ্যাপ্রোচ করা হয়। কিন্তু শুধু সন্দেহের ওপর খুব কমই বলেন।’

বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে অনুষ্ঠিত হওয়া জনপ্রিয় ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলোর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচনা চলছে, এবং অনেকেই এসব টুর্নামেন্টের উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের জন্য আইসিসিকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

মিরাজ/ রিয়াদ

×