ব্যাটার ও বোলারদের ব্যর্থতার মাঝে সান্ত¡না শুধু স্পিনার তাইজুল ইসলামের ৫ উইকেট প্রাপ্তি
সাগরিকায় অতীতের ভালো কিছু স্মৃতি আছে দক্ষিণ আফ্রিকার। টেস্টে এখানে তারা বড় বড় জুটি গড়েছে। তবে ৯ বছর আগে সর্বশেষবার সেই সুযোগ তারা পায়নি টেস্টের প্রায় ৩ দিন বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ায়। এবার দারুণ রৌদ্রোজ্জ্বল পরিবেশে ৩টি বড় জুটি গড়েছে সফরকারী প্রোটিয়ারা। তাইজুল ইসলাম লম্বা বিরতি দিয়ে উইকেট শিকার করে সফলতম বোলার হলেও তা দক্ষিণ আফ্রিকার রানোৎসব থামাতে বড় কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি।
তাই ৩ সেঞ্চুরিয়ানের ব্যাটে ভর দিয়ে ৬ উইকেটে ৫৭৫ রানের পাহাড় নিয়ে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রোটিয়া ব্যাটারদের ঠেকাতে গিয়ে ব্যর্থ বোলাররা হতাশায় মুষড়ে পড়েছেন তাই অনিয়মিত দুই স্পিনার মুমিনুল হক ও মাহমুদুল হাসান জয়কেও বোলিং করিয়েছে বাংলাদেশ। এরপরও টনি ডি জর্জির ১৭৭, ত্রিস্তান স্টাবসের ১০৬ আর উইয়ান মুল্ডারের অপরাজিত ১০৫ রান বড় সংগ্রহ এনে দিয়েছে সফরকারীদের। দ্বিতীয় দিনশেষে ৪ উইকেটে ৩৮ রান তুলেছে বাংলাদেশ। বোলারদের পর তাই ব্যাটাররাও চরম ব্যর্থতায় ৫৩৭ রানে পিছিয়ে থেকে চট্টগ্রাম টেস্টে কোণঠাসা স্বাগতিকরা।
ম্যাচের প্রথম দিনই চালকের আসনে পৌঁছে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। বাংলাদেশী ফিল্ডারদের সুযোগ মিসের মহড়ায় (ক্যাচ, রানআউট, স্টাম্পিং) জোড়া শতকে ২ উইকেটে ৩০৭ রান নিয়ে মাঠ ছাড়ে তারা। প্রথমবার শতক করেন ডি জর্জি ও স্টাবস। স্টাবস ১০৬ রানে বিদায় নিলে ২০১ রানের দ্বিতীয় উইকেট জুটি ভেঙে যায়। ১৪১ রানে অপরাজিত ছিলেন জর্জি। দুটি উইকেটই নিয়েছিলেন তাইজুল।
দ্বিতীয় দিন সকালে আগের দিনের মতোই স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যাট চালিয়েছেন জর্জি। তার সঙ্গে ডেভিড বেডিংহ্যামও ভালো ব্যাটিং করেছেন। তাদের জুটি এগিয়ে যেতে থাকে। প্রথম এক ঘণ্টার বেশি সময় ১৫ ওভার ব্যাট করে ৫৯ রান যোগ করেন তারা পানি পানের বিরতির আগে। কিছুক্ষণ পর ১১৬ রানের সেই জুটি ভেঙে দেন তাইজুল। হাফ সেঞ্চুরিয়ান বেডিংহ্যাম ৭৮ বলে ২ চার, ৪ ছক্কায় ৫৯ রানে বিদায় নেন। ডাবল সেঞ্চুরির পথে থাকা জর্জিও এলবিডব্লিউ হন তাইজুলের ঘূর্ণিতে।
২৬৯ বলে ১২ চার, ৪ ছক্কায় ১৭৭ রান করেন জর্জি। এর কিছুক্ষণ পরেই কাইল ভেরেইন (০) এলবিডব্লিউ হয়েছেন তার স্পিনেই। ফলে হঠাৎ করেই ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। তাইজুল ক্যারিয়ারে ১৪তম ৫ উইকেট শিকারের গৌরব দেখান। এরপরও লাঞ্চ বিরতিতে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা ৫ উইকেটে ৪১৩ রান নিয়ে। বড় রানে পৌঁছে গেছে ততক্ষণে তারা। লাঞ্চ শেষে আবারও শুরু করেন রায়ান রিকেলটন ও উইয়ান মুল্ডার।
লাঞ্চ বিরতির পর রিকেলটনকে (১২) কট বিহাইন্ড করে ফিরিয়ে দেন নাহিদ। ৬ উইকেটে ৪২৩ রান করার পর প্রতিরোধ গড়েন মুল্ডার ও সেনুরান মুথুসামি। দু’জন কিছুক্ষণ পরই দ্রুতগতিতে রান তুলতে শুরু করেন। আর তাতে দিশাহারা হয়ে যায় বাংলাদেশের বোলাররা। সপ্তম উইকেটে ১৫২ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েন মুল্ডার-মুথুসামি। ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি পেয়ে যান মুল্ডার। এই জুটি আর ভাঙেনি। বাংলাদেশের বিপক্ষে সপ্তম উইকেটে এটি দক্ষিণ আফ্রিকার সেরা জুটি।
২০২২ সালে গেবেহায় কেশব মহারাজ ও মুল্ডার ৮০ রানের জুটি গড়েছিলেন সপ্তম উইকেটে। তাইজুলকে ছক্কা হাঁকিয়ে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন মুল্ডার এবং এরপরই ইনিংস ঘোষণা করে দক্ষিণ আফ্রিকা। তাইজুল ৫২.২ ওভারে ১৯৮ রান দিয়ে ৫ উইকেট নেন। ৬ উইকেটে ৫৭৫ রান নিয়ে ইনিংস ঘোষণা করে প্রোটিয়ারা। ৫ রান স্কোরবোর্ডে নিয়ে ইনিংস শুরু করে বাংলাদেশ। কারণ মুথুসামি প্রোটিয়া ইনিংসের শেষদিকে পিচের ওপর দিয়ে রান নেওয়ার জন্য মুথুসামি দৌড়েছেন। তাই শাস্তি হিসেবে ৫ রান দেওয়া হয় বাংলাদেশকে।
তবে কাগিসো রাবাদার পেসে দিশাহারা হয়ে পড়ে আবার বাংলাদেশের টপঅর্ডার। সাদমান ইসলাম ০ ও জাকির হাসান ২ রানে কট বিহাইন্ড হন। এরপর নাইটওয়াচম্যান হিসেবে নেমে হাসান মাহমুদ (৩) বোল্ড হন মহারাজের দুর্দান্ত স্পিনে। মাহমুদুল হাসান জয়ও ২১ বলে ১ চারে ১০ রান করে ডেন প্যাটারসনের পেসে সাজঘরে ফেরেন। মাত্র ৩২ রানেই ৪ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। মুমিনুল হক ৬ ও অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ৪ রানে ব্যাট করছেন।