ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৫ অক্টোবর ২০২৪, ৯ কার্তিক ১৪৩১

সাকিবের সঙ্গে তুলনা চান না মিরাজ

মো. মামুন রশীদ

প্রকাশিত: ২৩:৪৯, ২৪ অক্টোবর ২০২৪

সাকিবের সঙ্গে তুলনা চান না মিরাজ

সেঞ্চুরি মিস করে হতাশ মেহেদি মিরাজ, বৃহস্পতিবার মিরপুর শেরেবাংলায়

এ বছর মিরপুরে প্রথম ও শেষ টেস্ট খেলে ফেলেছে বাংলাদেশ। সেই ম্যাচে সফরকারী দক্ষিণ আফ্রিকার একেবারে নতুন করে গড়ে ওঠা দলের কাছে ৭ উইকেটে হেরেছে। ৯ বছর পর বাংলাদেশ সফরে এসে সিরিজের প্রথম টেস্টেই ম্যাচের চতুর্থ দিন সকালে পাওয়া জয়ে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে তারা। উভয় ইনিংসে বল হাতে প্রচেষ্টা চালিয়েছেন তাইজুল ইসলাম। বিপাকে পড়া বাংলাদেশের জন্য লড়াই যা করার মেহেদি হাসান মিরাজ একা করেছেন ব্যাট হাতে।

সেই লড়াইটা কাগিসো রাবাদার পেস আক্রমণে সফলতার মুখ দেখেনি। এমনকি প্রোটিয়া বোলারদের বিপক্ষে বীরের মতো একা লড়াই চালানো মিরাজও শেষ পর্যন্ত ৯৭ রানে আউট হয়ে গেলে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস থেমেছে ৩০৭ রানে। মাত্র ১০৬ রানের জয়ের লক্ষ্য পেয়ে ওয়ানডে মেজাজে ব্যাট চালিয়ে ৩ উইকেট হারিয়েই তা ছুঁয়ে ফেলে দক্ষিণ আফ্রিকা। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি মিস করে কিছুটা কষ্ট পেলেও দলের ব্যর্থতায় আক্ষেপ ঝরেছে মিরাজের কণ্ঠে। তাকে সাকিব আল হাসানের বিকল্প ভাবা হলেও মিরাজ সেই তুলনা চান না বলে জানিয়েছেন।
দক্ষিণ আফ্রিকা ১০ বছর আগে সর্বশেষবার এশিয়ার মাটিতে টেস্ট জিতেছিল শ্রীলঙ্কা সফরে। এই সময়ে তারা এশিয়ায় ১৪ টেস্ট খেলে ৪টি ড্র করতে পারলেও ১০টি হেরেছে। এবার অনভিজ্ঞ একটি দল নিয়ে তারা বাংলাদেশ সফরে এসেছে। কিন্তু প্রস্তুতিটা তারা ভালো নিয়েছে সেটি বোঝা গেছে মিরপুর টেস্টের প্রথম দিন থেকেই। ২০২ রানে পিছি থেকে দ্বিতীয় ইনিংস শুরুর পর মাত্র ১১২ রানেই ৬ উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ।

তখন শঙ্কা তৈরি হয় ইনিংস পরাজয়ের। ম্যাচের তৃতীয় দিনশেষে বাংলাদেশ ৭ উইকেটে ২৮৩ রান তোলে। ৮১ রানের লিড পেলেও তখন পর্যন্ত লড়াইয়ে স্বাগতিকরা টিকে ছিল শুধু মিরাজের ব্যাটিংয়ে। তিনি ৮৭ রানে ব্যাট করছিলেন। চতুর্থ দিন সকালেই নতুন বল নেয় প্রোটিয়ারা। রাবাদা সেই বলে দেখিয়েছেন ঝলক, লড়াইটা হতে দেননি তিনি। দিনের তৃতীয় বলেই তিনি সাজঘরে ফেরান আগের দিন ১৬ রানে অপরাজিত থাকা নাঈম হাসানকে। আর তাইজুল ইসলাম ফিরে যান উইয়ান মুল্ডারের বলে। তবে স্বাচ্ছন্দ্যে খেলে মিরাজ ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরির পথে এগিয়ে যাচ্ছিলেন।

বাংলাদেশের লিডও ১০০ পেরিয়েছে তার কল্যাণে।  বাংলাদেশ ৯ উইকেট হারিয়ে ফেলায় তিনিও রাবাদার বলে বাজে একটি শট খেলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন। ১৯১ বলে ১০ চার, ১ ছয়ে ৯৭ রানে থামেন মিরাজ। এটি বাংলাদেশের পক্ষে টেস্টে ২২তম নার্ভাস নাইনটিজ। তবে প্রথমবার মিরাজ এর শিকার হলেন এবং ৩ রানের জন্য সেঞ্চুরি মিসের আক্ষেপ নিয়ে ফিরতে হয় তাকে। 
বাংলাদেশেরও দ্বিতীয় ইনিংস ৩০৭ রানে থেমে যায়। মাত্র ১০৬ রানের টার্গেটে নেমে প্রথম থেকে দ্রুতবেগে ব্যাট চালিয়েছেন প্রোটিয়া ওপেনাররা। ৪২ রানের উদ্বোধনী জুটি ভেঙে দেন বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল। ২৭ বলে ৪ চারে ২০ রান করে এইডেন মার্করাম বোল্ড হন। টনি ডি জর্জি ও ত্রিস্তান স্টাবস দ্বিতীয় উইকেটে রান তোলার গতি ঠিক রাখেন। তবে টনি ৫২ বলে ৭ চারে ৪১ রান করার পর তাইজুলের দ্বিতীয় শিকার হন। তিনি পরে ডেভিড বেডিংহ্যামকেও স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন। কিন্তু স্টাবস ৩৭ বলে ৪ চার, ১ ছয়ে ৩০ রানে অপরাজিত থেকে লাঞ্চ বিরতির কিছুক্ষণ আগে দক্ষিণ আফ্রিকার জয় নিশ্চিত করেন। তাইজুল ৩ উইকেট নেন।

মিরাজ লড়াই করেও সেঞ্চুরি হাতছাড়ার পাশাপাশি দলের পরাজয়ও দেখেছেন। এ বিষয়ে মিরাজ বলেছেন, ‘একটা ব্যাটার সেঞ্চুরি মিস করলে অবশ্যই খারাপ লাগে। আমারও খারাপ লাগছে। তবে সবচেয়ে বড় কথা, সেঞ্চুরি করার চেয়ে আমি যে পরিকল্পনায় খেলেছিলাম সেটা বাস্তবায়ন করতে পারলে আরও ভালো লাগত। সেঞ্চুরি নিয়ে চিন্তা করিনি আমি। চিন্তা করেছিলাম যে, দলটাকে কোন জায়গায় নিয়ে যেতে পারি।’ সাকিব না থাকায় এখন মিরাজকেই তার বিকল্প হিসেবে ভাবছেন সবাই। এ বিষয়ে মিরাজ বলেছেন, ‘সবাই সবসময় একটা কথা বলে যে, সাকিব ভাইয়ের জায়গায় আমি আসব।

একটা জিনিস দেখেন, সাকিব ভাই কিন্তু অনেক বড় কিছু অর্জন করেছেন বাংলাদেশের হয়ে। প্রায় ১৭ বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছেন। তিনি একজন কিংবদন্তি ক্রিকেটার। আর আমারটা যদি দেখেন, ধারাবাহিক রান করা শুরু করেছি মাত্র এক-দুই বছর। সাকিব ভাই শুরু থেকেই রান করেছেন। তাই সাকিব ভাইয়ের জায়গায় সাকিব ভাই, আমি আমার জায়গায়। একজন ক্রিকেটারকে আরেকজনের সঙ্গে তুলনা না করাই শ্রেয় আমার মনে হয়।’

×