ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১

ভুলে যাওয়া এক জয়ের স্বাদ পাকিস্তানের

শাকিল আহমেদ মিরাজ

প্রকাশিত: ০১:০৩, ১৯ অক্টোবর ২০২৪

ভুলে যাওয়া এক জয়ের স্বাদ পাকিস্তানের

ইংলিশদের বিপক্ষে পাকিস্তানের দ্বিতীয় টেস্টের জয়ের দুই নায়ক সাজিদ খান ও নোমান আলী

ঘরের মাঠে টেস্টে জয়ের স্বাদ কেমন হতে পারে, পাকিস্তানের ক্রিকেটাররা হয়তো সেটি ভুলতে বসেছিল। শোয়েব বশিরের ব্যাট হয়ে বলটা সিলি পয়েন্টে আবদুল্লাহ শফিকের হাতে যেতেই আকাশে মুখ করে একটা চিৎকার দিলেন নুমান আলি। এ যে স্রেফ একটা উইকেট নয়, পাকিস্তানের দীর্ঘ অপেক্ষা ঘুচে যাওয়ার মুহূর্ত! সাড়ে তিন বছর পর ঘরের মাঠে টেস্ট জয়ের মুহূর্ত। মুলতান টেস্টে সাজিদ খান-নুমান আলির যুগলবন্দিতে ইংল্যান্ডকে ১৫২ রানে হারিয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে ১-১এ সমতা ফেরাল পাকিস্তান।

প্রতিপক্ষের সবকটি উইকেট পকেটে পুড়ে ৫২ বছরের পুরনো রেকর্ড ভাঙলেন দুই স্পিনার। ম্যাচসেরা সাজিদের শিকার ৯ উইকেট। টান ছয় টেস্টে হারের অবশেষে জয়। দেশের মাঠে জয়ের দেখা পেল ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারির পর প্রথমবার। মুলতানে এই জয়ে স্বস্তির পরশ পেলেন শান মাসুদও। টানা ছয় হারের পর পাকিস্তান অধিনায়কের প্রথম জয় এটি! 
২০২১ সালের সেই ম্যাচের পর অবশ্য বিদেশে একাধিক ম্যাচ ও সিরিজ জিতেছে পাকিস্তান। যার সর্বশেষটি গত বছর জুলাইয়ে শ্রীলঙ্কার সফরে, ২-০ ব্যবধানে। অফ-ফর্মের কারণে বাদ পড়া বড় তারকা বাবর আজমের জায়গা সুযোগ পেয়ে অভিষেকেই হাঁকানো কামরান গুলামের (১১৮) দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে ৩৬৬ ও ২২১ রান করে জয়ের জন্য ইংল্যান্ডকে ২৯৭ রানের লক্ষ্য ছুড়ে দেয় পাকিস্তান। জবাবে  প্রথম ইনিংসে ২৯১ রান করা বেন স্টোকসের দল ৩৩.৩ ওভারে গুটিয়ে গেছে ১৪৪ রানে। আগের দিনই দুই উইকেট নিয়ে কাজ এগিয়ে রাখা সাজিদ ও নুমান চতুর্থ দিনে টানা বোলিং করে এক সেশনেই প্রতিপক্ষকে শেষ করে দেন।

শুক্রবার দিনের শুরুতেই ২১ রানে ডানহাতি সাজিদকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ওলি পোপ (২৯)। একটু পর আরও বড় শিকার ধরেন নুমান। বাঁহাতি এ স্পিনারকে সুইপ করার চেষ্টায় এলবিডব্লিউ জো রুট (৩৪)। এরপর আর কোনো জুটি গড়ে ওঠেনি। একের পর এক উইকেট ঝুলিতে ভরতে থাকেন নুমান। হ্যারি ব্রুক ফেরেন ১৬ রান করে। পাল্টা আক্রমণে জবাব দেওয়ার চেষ্টা করেন বেন স্টোকস। চারটি চারে ৩৬ বলে ৩৭ রান করে স্টাম্পড হন ইংলিশ অধিনায়ক। এরপর কেবল ম্যাচ শেষের অপেক্ষা। খানিকটা বিনোদন দিয়ে তিন ছক্কায় ২৭ রান করে বিদায় নেন ব্রাইডন কার্স। টানা দুই বলে উইকেট নিয়ে ম্যাচ শেষ করে দেন নুমান।
৪৬ রানে ৮ উইকেট নিয়ে রেকর্ড বইয়ে নাম তোলেন নুমান। পাকিস্তানের ইতিহাসের প্রথম বোলার হিসেবে ৩৮ বছর পেরিয়ে ৫ উইকেটের স্বাদ পেলেন তিনি। ৩৮ বছর ৮ দিন বয়সে ম্যাচটি শুরু করেন তিনি। দুই ইনিংস মিলিয়ে তার প্রাপ্তি ১৪৭ রানে ১১ উইকেট। দেশটির সবচেয়ে বেশি বয়সে ম্যাচে ১০ উইকেট নেওয়ার আগের রেকর্ড ছিল সাঈদ আজমলের (৩৫ বছর ৩৪২ দিন)। প্রথম ইনিংসে ৭ উইকেট শিকারি সাজিদ দ্বিতীয় ইনিংসে নিয়েছেন ২টি। সাজিদ ও নুমান মিলে ৫২ বছর পর টেস্ট ক্রিকেটকে উপহার দিয়েছেন দারুণ এক কীর্তি।

দুই বোলার মিলেই প্রতিপক্ষের ২০ উইকেটের সবকটি নেওয়ার নজির ১৪৭ বছরের টেস্ট ইতিহাসে এই নিয়ে হলো মাত্র সপ্তমবার। সর্বশেষটি ছিল ১৯৭২ সালে। লর্ডসে সেবার ইংলিশ ব্যাটিং গুঁড়িয়ে টেস্ট অভিষেকেই দুই ইনিংসে ৮টি করে উইকেট নিয়ে রেকর্ড গড়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ান পেসার বব ম্যাসি। বাকি চার উইকেট নিয়েছিলেন ডেনিস লিলি। অনেক রেকর্ড-অর্জনের ভিড়ে ম্যাচ জিততে পারাই আপাতত পাকিস্তান ক্রিকেটের জন্য সবচেয়ে বড় স্বস্তি।

×