মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে বিদায়ী ক্রেস্ট উপহার দিচ্ছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত।
বাংলাদেশের ক্রিকেটে দীর্ঘ সময় পঞ্চ পা-ব রাজত্ব করেছে। মাশরাফি বিন মর্তুজা, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে ছাড়া আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কল্পনাও করা যায়নি দীর্ঘ সময়। তবে একে একে বিদায় ঘটেছে মাশরাফি, তামিম, মুশফিক ও সাকিবের। সর্বশেষ শনিবার ভারতের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি২০ ম্যাচে হায়দরাবাদের রাজীব গান্ধী স্টেডিয়ামে আনুষ্ঠানিকভাবে মাঠ থেকেই বিদায় নিলেন মাহমুদুল্লাহ। ১৭ বছরের আন্তর্জাতিক টি২০ ক্যারিয়ারের ইতি টেনেছেন তিনি এই ম্যাচ খেলে। ঘোষণাটা আগেই দিয়েছিলেন।
দিল্লিতে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচের আগের দিনই জানিয়ে দেন যে চলমান সিরিজের শেষ ম্যাচ খেলেই অবসর নেবেন তিনি। পঞ্চ পা-বের অন্য ৪ ক্রিকেটারের তুলনায় ছায়া হয়ে ছিলেন মাহমুদুল্লাহ। দলের বিপর্যয়ে কা-ারি হয়ে ভূমিকা রেখেছেন অনেকবার। সেই মাহমুদুল্লাহ ‘সাইলেন্ট কিলার’, ‘ফিনিশার’ ও ‘আনসাং হিরো’ নাম পেয়েছেন ক্রিকেট ভক্ত সমর্থকদের কাছেই। এবার তার বিদায় নিয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে মুশফিক গর্বিত বোধ করে তাকে শুভ কামনা জানিয়েছেন। তাকে দলের পক্ষ থেকে শেষ ম্যাচ শুরুর আগে ক্রেস্ট উপহার দিয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্তরা।
২০০৭ সালে অভিষেক হওয়ার পর থেকে গত ১৭ বছরে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বাধিক ১৪১টি আন্তর্জাতিক টি২০ খেলেছেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। এছাড়া ২০১৮ থেকে ২০২২ পর্যন্ত সর্বাধিক ৪৩ ম্যাচে নেতৃত্বও দিয়েছেন বাংলাদেশকে এই ফরম্যাটে। এখন অবসর নেওয়ার দিন শেষ ম্যাচ খেলতে নামার আগে তাকে নিয়ে দীর্ঘদিনের সতীর্থ এবং ভায়রা মুশফিক সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে লিখেছেন, ‘রিয়াদ ভাই, আপনার টি২০ ক্যারিয়ারের জন্য অভিনন্দন। ভাই ও সতীর্থ হিসেবে আপনি যা অর্জন করেছেন তা নিয়ে আমি সত্যিই সবকিছু নিয়ে গর্বিত এবং অনেক গর্ব নিয়েই আপনি চলে যাবেন এটাই কামনা। মাশাআল্লাহ, সামনে যে পথ পড়ে আছে আপনার জন্য শুভ কামনা।’
মাহমুদুল্লাহও আক্ষেপ নিয়ে বিদায় নিচ্ছেন না। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে অনেক ভালোবাসা ও সম্মান পেয়েছেন। সেই সঙ্গে দলের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বড় অবদান রেখেছেন। তাই অবসর ঘোষণার পর মাহমুদুল্লাহ তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লিখেছেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ! বাংলাদেশ দলের হয়ে আমার প্রতিটি মুহূর্ত ছিল অনেক সম্মান ও গৌরবের। আমি কৃতজ্ঞতা জানাই বিসিবি ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রত্যেককে, আমার সমর্থক ও শুভাকাক্সক্ষীদের, সতীর্থদের এবং বিশেষ করে আমার পরিবারের সদস্যদের প্রতি।’
অধিকাংশ সময় মাহমুদুল্লাহকে ব্যাট করতে হয়েছে ৭ কিংবা ৮ নম্বর পজিশনে। তাই খুব বড় ইনিংস খেলার সুযোগ পাননি। তবে চরম বিপদ থেকে দলকে রক্ষা করেছেন অধিকাংশ সময়ই। সেটি হয়তো অনেক সময় দলকে লড়াইয়ের পুঁজি দিয়েছে, জেতাতে পারেনি। আর কিছু ম্যাচে ছোটো ছোটো ইনিংস খেলে জিতিয়েছেন। এজন্যই ‘আনসাং হিরো’ মাহমুদুল্লাহ সবসময় ছায়া হয়েই ছিলেন। ২০১৮ সালে নিদাহাস ট্রফি টি২০ আসরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে যে ম্যাচটি ছক্কা হাঁকিয়ে জিতিয়েছেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ তা বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের মনে আজীবন টিকে থাকবে।
চরম উত্তেজনাপূর্ণ সেই ম্যাচে জয় পাওয়াটাই মর্যাদার ব্যাপার হয়ে ওঠে এবং মাহমুদুল্লাহ শুধু ছক্কাই হাঁকাননি বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমী দর্শকদের অন্তরে ভালোবাসার সিলমোহর বসিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন। তাকে অনেকেই ‘ফিনিশার’ তকমা দিয়েছেন আরও দুয়েকটি ম্যাচ জিতিয়ে ফেরার কারণে। তবে কিছু ম্যাচে আবার দলকে জেতাতেও পারেননি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে আউট হয়ে কিংবা ধীরগতির ব্যাটিং করে। সেই মাহমুদুল্লাহ এবার আন্তর্জাতিক টি২০ থেকে হায়দরাবাদে ভারতের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি২০ খেলে বিদায় নিলেন।