অনেকে সাকিবকে সমর্থন জানালেও ক্ষোভও দেখাচ্ছেন কেউ কেউ।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নীরব থাকা নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন সাকিব আল হাসান। একইসঙ্গে বিদায়ী টেস্ট খেলতে দেশে ফেরার কথা জানিয়ে ভক্ত-সমর্থকদের সমর্থনও চেয়েছেন টাইগার এই অলরাউন্ডার।
যদিও সাকিবের এমন দুঃখপ্রকাশ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়াই পাওয়া যাচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। অনেকে সাকিবকে সমর্থন জানালেও ক্ষোভও দেখাচ্ছেন কেউ কেউ।
বিশেষ করে মিরপুর অঞ্চলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন করা শিক্ষার্থীরা কোনোভাবেই সাকিবকে নিজেদের এলাকার স্টেডিয়ামে খেলতে দেবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে একদল বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী একজোট হয়ে মিরপুরে শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে একত্রিত হয়েছিলেন বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) রাতে। সেখানে তারা দুই নম্বর গেটে সাকিবের ছবি টানিয়ে জুতাপেটা করেন। পরে স্টেডিয়াম এলাকাজুড়ে সাকিব বিরোধী গ্রাফিতি আঁকেন তারা।
নিজেদের উদ্যোগ নিয়ে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফারদিন হাসান আন্তন বলেন, ‘যে মিরপুরে আমার ভাইয়েরা হত্যার শিকার হয়েছে, সেই মিরপুরে স্বৈরাচারের দোসর সাকিব খেলতে পারবে না।’
এ উদ্যোগের অন্যতম আয়োজক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আল মাশনুন বলেন, ‘মিরপুরের মাটিতে সাকিবকে খেলতে হলে আমার লাশের ওপর দিয়ে যেতে হবে।’
এ ছাড়া গ্রাফিতি করার কাজে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাদমান সাকিব আদিব, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সৈয়দ মুয়াজ, নর্থ সাউথের শিক্ষার্থী প্রত্যয়, ইউল্যাবের শিক্ষার্থী মুয়াজ এবং বিইউবিটির জাওয়াদ। পিপল অ্যাক্টিভিস্ট কোয়ালিশনের পিয়াস এবং মিরপুরের ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম পরিচিত মুখ হাবিবুর রহমানও বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের সমর্থন জোগাতে সেখানে উপস্থিত হন।
মিরপুরবাসী স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন, ভোট চুরির সঙ্গে সরাসরি জড়িত এবং স্বৈরাচারের দোসর সাকিব যে কি না দেশবাসীর ক্রান্তিলগ্নে বিদেশের মাটিতে আনন্দময় সময় কাটাচ্ছিল, সে আর কোনোদিন যেন বাংলাদেশের জার্সি না গায়ে দেয় এবং মিরপুর মাঠে না আসে।
এর আগে ছাত্র আন্দোলনে নীরব ভূমিকার দায় নিজের মাথায় নিয়ে সাকিব বলেন, এই সংকটকালীন সময়টাতে আমার সরব উপস্থিতি না থাকায় আপনারা যারা ব্যথিত হয়েছেন বা কষ্ট পেয়েছেন তাদের অনুভূতির জায়গাটার প্রতি আমার শ্রদ্ধা এবং এজন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। আপনাদের জায়গায় আমি থাকলে হয়ত এভাবে মনঃক্ষুণ্ন হতাম।
দেশের মাটিতে সাদা পোশাকে শেষ ম্যাচ খেলার আকুতি জানিয়ে সাকিব বলেন, আপনারা জানেন, খুব শিগগিরই আমি আমার শেষ ম্যাচটি খেলতে যাচ্ছি। আমার ক্রিকেট ক্যারিয়ারের শুরু থেকে আজকের সাকিব আল হাসান হয়ে ওঠা পর্যন্ত এই পুরো জার্নিটাকে ড্রাইভ করেছেন আপনারা। এই ক্রিকেটের এই গোটা গল্পটা আপনাদের হাতেই লেখা। তাই আমার শেষ ম্যাচে, এই গল্পের শেষ অধ্যায়ে আমি আপনাদের পাশে চাই। আমি আপনাদের সবাইকে সঙ্গে নিয়ে বিদায় নিতে চাই। বিদায়বেলায় সেই মানুষগুলোর হাতে হাত রাখতে চাই, যাদের হাতের তালি আমাকে ভালো খেলতে বাধ্য করেছে। বিদায়বেলায় সেই মানুষগুলোর চোখে চোখ রাখতে চাই, আমার ভালো খেলায় যাদের চোখ আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়েছে। আবার আমার খারাপ খেলায় যাদের চোখ ছলছল করেছে।
আমি আশা করি, শুধু আশা না বিশ্বাস করি– এই বিদায় বেলায় আপনারা সবাই আমার সঙ্গে থাকবেন। সবাই সঙ্গে থেকে সেই গল্পের ইতি টানবেন, যে গল্পের নায়ক –আমি নই, আপনারা।
বারাত