ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১

হাসানের হাসি থামিয়ে অশ্বিন-জাদেজার রেকর্ড

মো. মামুন রশীদ

প্রকাশিত: ০০:৩৩, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

হাসানের হাসি থামিয়ে অশ্বিন-জাদেজার রেকর্ড

বৃহস্পতিবার চেন্নাই টেস্টের প্রথম দিনের শুরুর দিকে ভারতীয় ব্যাটারদের নাজেহাল করেন বাংলাদেশী পেসার হাসান মাহমুদ।

চেন্নাই টেস্টে দিনের শুরুটা ছিল বাংলাদেশের জন্য দারুণ। সেটিকে সাফল্যে মোড়ানো করেছেন ডানহাতি পেসার হাসান মাহমুদ। সুইংয়ের দারুণ কার্যকারিতা দেখিয়ে দুই মহাতারকা রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলিকেই শুধু নয়, বর্তমান সময়ের অন্যতম তারকা ব্যাটার শুভমান গিলও শিকার হয়েছেন মাঝারি গতির এই পেসারের বলে। আর তাই হাসিমুখে থাকতে পেরেছে বাংলাদেশ।

কিন্তু হাসানের হাসিটাকে থামিয়ে দিয়েছেন রবিচন্দ্রন অশি^ন ও রবীন্দ্র জাদেজা। ভারতের ১৪৪ রানে ৬ উইকেট পতন ঘটে। হাসান একাই তুলে নেন ৪টি। ভারতের মাটিতে বাংলাদেশী কোনো বোলারের সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড গড়েছেন তিনি। সার্বিকভাবে টেস্টে ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় সেরা বোলিং করেছেন হাসান। এরপর অশি^ন-জাদেজা দেখিয়েছেন ব্যাটিং ঝলক।

দুজন সপ্তম উইকেটে এখন পর্যন্ত ১৯৫ রানের জুটি গড়েছেন যা বাংলাদেশের বিপক্ষে যে কোনো দলের দ্বিতীয় সেরা জুটি। সেজন্য চেন্নাইয়ে দিনের শুরুতে সফরকারীরা বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে থাকলেও ভারত প্রথম দিন শেষ করেছে ৬ উইকেটে ৩৩৯ রান তুলে।

টস জিতেই বিস্ময়ের জন্ম দেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। চেন্নাইয়ে ১৯৮২ সালে ইংল্যান্ড টস জিতে ফিল্ডিং নেয় এবং সেই ম্যাচটি ড্র হয়। ৪২ বছর পর শুধু শান্তই নয়, চেন্নাইয়ে হওয়া টেস্ট ইতিহাসেই দ্বিতীয়বার কোনো দল টস জিতে ফিল্ডিং নিয়েছে। অনেক জল্পনা-কল্পনা থাকলেও উভয় দল ৩ পেসার নিয়ে একাদশ সাজিয়েছে। এরপরও আগে ফিল্ডিং নেওয়া বাংলাদেশ দলকে কেউ সমর্থন দেননি।

তবে শান্তর সিদ্ধান্তকে যথার্থ করেছেন হাসান। টেস্টে অনভিজ্ঞ এই পেসার তার সুইংটাকে দারুণভাবে কাজে লাগিয়ে নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেন। আর এতে শুরুতেই অধিনায়ক রোহিত বিপাকে পড়েন। ব্যক্তিগত ১ রানে আম্পায়ার্স কলে বেঁচে যান তিনি, রিভিউ নিয়েছিল বাংলাদেশ। এরপরও অবশ্য বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি রোহিত। দলীয় ১৪ রানে তিনি (৬) সাজঘরে ফেরেন হাসানের বলেই স্লিপে ক্যাচ দিয়ে। কিছুক্ষণ পর গিলও শূন্য রানে সাজঘরে ফেরেন।

অন্যপ্রান্তে তাসকিন আহমেদ এলোমেলো বোলিং করলেও হাসানের তোপে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে ভারত। এরপর মেগাস্টার কোহলিকেও তুলে নেন হাসান। সুইং বুঝতে না পেরে ৬ রানে কট বিহাইন্ড হন কোহলি। ফলে ৩৪ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়ে ভারত। শান্তর ফিল্ডিং নেওয়ার সিদ্ধান্ত যথার্থ প্রমাণিত হয়। এরপর অবশ্য এই ৩ উইকেটেই ৮৮ রান নিয়ে লাঞ্চ বিরতিতে যায় ভারত।
চতুর্থ উইকেটে ওপেনার যশস্বী জয়সওয়াল ও ঋষভ পান্ত দারুণ খেলছিলেন। তবে লাঞ্চ বিরতির পর আবার জুটি ভেঙে দেন হাসান। ৬২ রানের জুটিতে চিড় ধরে হাসানের বলে পান্ত কট বিহাইন্ড হলে। তিনি ৫২ বলে ৬ চারে ৩৯ রান করেন। ৯৬ রানে ৪ উইকেট হারায় ভারত হাসানের একক দাপটে। এরপর দুটি উইকেট নিয়েছেন গতিধর নাহিদ রানা ও মেহেদি হাসান মিরাজ। ১৪৪ রানেই ৬ উইকেট হারিয়ে মহাবিপদে পড়ে ভারত।

কিন্তু এরপর হাসানও হাসতে পারেননি, বাংলাদেশের অন্য কোনো বোলারও সুবিধা করতে পারেননি। অবশ্য অশি^ন ব্যাটিংয়ে আসার পরই হাসানের আবেদনে তাকে এলবিডব্লিউ দিয়েছেন আম্পায়ার। তবে রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান তিনি। এরপর আর কোনো সমস্যা হতে দেননি তিনি। ব্যাটিং করেছেন নির্বিঘেœ। সপ্তম উইকেটে জাদেজার সঙ্গে ১৯৫ রানের জুটি গড়ে দিন শেষ করেছেন অপরাজিত থেকে। বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্টে সপ্তম উইকেটে সেরা জুটি গড়েছেন শ্রীলঙ্কার মাহেলা জয়াবর্ধনে ও চামিন্দা ভাস।

তারা ২০০৭ সালে কলম্বোয় ২২৩ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েন। সেদিক থেকে অশি^ন-জাদেজার জুটি দ্বিতীয় স্থানে আপাতত হলেও ভারতের পক্ষে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সপ্তম উইকেটে সেরা। সেটিকে আরও উঁচুতে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ আছে আজ ম্যাচের দ্বিতীয় দিন। কারণ ক্যারিয়ারের ৬ষ্ঠ সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন অশি^ন। আর জাদেজাও আছেন ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরির পথে। তিনি ৮৬ রানে অপরাজিত। হাসান ১৮ ওভারে ৪ মেডেনে ৫৮ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেন।

ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশী পেসারদের সেরা বোলিং সাবেক পেসার শাহাদাত হোসেন রাজিবের। তিনি চট্টগ্রামে ২০১০ সালে ৭১ রানে ৫ উইকেট নিয়েছেন। তাকে ছাড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ আছে হাসানের। তবে আপাতত ভারতের মাটিতে বাংলাদেশের পক্ষে যে কোনো বোলারের ক্ষেত্রে সেরা বোলিং হাসানেরই। ২০১৯ সালে ইন্দোরে পেসার আবু জায়েদ রাহী ১০৮ রানে ৪ উইকেট নেন।

×