ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩০ ভাদ্র ১৪৩১

পিন্ডিতে বাংলাদেশ পাকিস্তান দ্বিতীয় টেস্ট আজ

মো. মামুন রশীদ

প্রকাশিত: ২৩:৫১, ২৯ আগস্ট ২০২৪

পিন্ডিতে বাংলাদেশ পাকিস্তান দ্বিতীয় টেস্ট আজ

বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত (ডানে) ও পাকিস্তান অধিনায়ক শান মাসুদ

আইসিসির বিশ^ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে সবচেয়ে ভালো অবস্থান এবার পেয়ে গেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। কারণ চলমান তৃতীয় চক্রে মাত্র ৫ ম্যাচ খেলেই ২ জয় পেয়েছে। আগের দুই চক্রের সাফল্যকে ছাপিয়ে গেছে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্ট জিতে। পাকদের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট জয়। ১০ উইকেটের সেই ঐতিহাসিক জয় তুলে নিয়ে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ।

আজ রাওয়ালপিন্ডিতেই সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে সিরিজ জয়ের লক্ষ্য নিয়ে নামছে টাইগাররা। বাংলাদেশ সময় অনুসারে বেলা ১১টায় ম্যাচটি মাঠে গড়াবে। ড্র কিংবা জয়ই নাজমুল হোসেন শান্তদের নতুন এক ঐতিহাসিক অর্জন এনে দেবে। এখন পর্যন্ত ৮টি সিরিজ জিতলেও দেশের বাইরে মাত্র দুটি। তবে র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ পাঁচে থাকা কোনো দলের বিপক্ষে সিরিজ জিততে পারেনি।

এবার সেই মোক্ষম সুযোগ পেয়েছে বাংলাদেশ দল। এই ম্যাচে অপরিবর্তিত একাদশ নিয়েই নামার সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশের। তবে সিরিজ হার ঠেকাতে মরিয়া পাকিস্তান দলে একাধিক পরিবর্তন আসছে।
বাংলাদেশ দল প্রথমবার টেস্ট সিরিজ জয় করে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২০০৫ সালে। ঘরের মাঠে ২ ম্যাচের সেই সিরিজে ১-০ ব্যবধানে জয় পায় টাইগাররা। এরপর ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়ে স্বাগতিকদের ২-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করে বাংলাদেশ। দেশের বাইরে সেটাই প্রথম টেস্ট সিরিজ জয়।

এরপর ঘরের মাঠে ২০১৪ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৩-০, ২০১৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২-০ ও ২০২০ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় করে টাইগাররা। এ ছাড়া ১ ম্যাচেই সিরিজ শেষ করেছে জয় দিয়ে ২০২১ সালে জিম্বাবুয়ে সফরে এবং ঘরের মাঠে ২০২৩ সালে আয়ারল্যান্ড ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে। অর্থাৎ বড় দল বলতে শুধু ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেই বাংলাদেশ সিরিজ জিতেছে।

তবে সুযোগ পেয়েছে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও নিউজিল্যান্ডের মতো বড় দলগুলোর বিপক্ষে সিরিজ জেতার। সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি। এবার পাকিস্তানের বিপক্ষে সুযোগ কাজে লাগানোর হাতছানি। প্রথম টেস্ট যেখানে হয়েছে সেই রাওয়ালপিন্ডিতেই আবার লড়াই দ্বিতীয় টেস্টের। এই ভেন্যুতে অবশ্য এখন কিছুটা ভিন্ন কন্ডিশন থাকবে এমনটাই জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধান কোচ হাতুরুসিংহে। তিনি বলেছেন, ‘কাল (শুক্রবার) কন্ডিশনের ওপর নির্ভর করে পিচ দেখে আমরা দলে পরিবর্তন আনতেও পারি। কারণ আমরা এখনো পিচ দেখতে পারিনি। কন্ডিশনে কিছুটা তফাৎ আছে আগের ম্যাচ থেকে।’
হাতুরুর কথাতে আরেকটি বিষয়ও স্পষ্ট যে একাদশে পরিবর্তন আনা হতে পারে। সেক্ষেত্রে ডানহাতি পেসার তাসকিন আহমেদই আসতে পারেন তরুণ নাহিদ রানার জায়গায়। এ ছাড়া ওপেনার জাকির হাসানের পরিবর্তে আসতে পারেন মাহমুদুল হাসান জয়। তার অবশ্য ইনজুরি পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে সেটি। এর আগে পাকিস্তানের মাটিতে ৫ টেস্টে নেমে সবই হেরেছে বাংলাদেশ। ২০০৩ সালে মুলতান টেস্টে শুধু জয়ের কাছাকাছি যেতে পেরেছে। এ ছাড়া প্রতিবারই বড় হার দেখেছে বাংলাদেশ দল।

এবারই প্রথম তারা হেরেছে বাংলাদেশের কাছে। ১০ উইকেটে জিতে নিজেদের সবচেয়ে বড় টেস্ট জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। আর পাকিস্তান নিজেদের মাটিতে সবচেয়ে বড় ব্যবধানে হেরেছে। ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে আত্মবিশ^াস ফিরে পেয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্তরা। চলমান আইসিসি বিশ^ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের তৃতীয় চক্রে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ২ টেস্ট জিতেছে ৫ ম্যাচ খেলে।

এই চক্রের শুরুতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই টেস্টের সিরিজ ১-১ সমতায় শেষ করে। যদিও সেই সিরিজের প্রথম ম্যাচ জিতেছেন শান্তরা কিন্তু দ্বিতীয়টিতে হেরেছেন। সিরিজ জয়ের সুযোগ কয়েকবারই হাতছাড়া করেছে বাংলাদেশ। ২৪ বছরে বাংলাদেশ দল ১৪৩ টেস্ট খেলে মাত্র ২০টিতে জয় পেয়েছে, সিরিজ জয় ৮টি। ৬০টি দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলে জয় ৩টি, ড্র ৯টি। ৩ ম্যাচের সিরিজও জিতেছে একটি।

২ ম্যাচের টেস্ট সিরিজে যে ৩টি জিতেছে বাংলাদেশ সবকটিতেই প্রথম ম্যাচ জিতেছিল। এ ছাড়া প্রথম ম্যাচ জয়ের পর দ্বিতীয় ম্যাচ হেরে সিরিজ ড্র করেছে ৭টি। এই পরিসংখ্যান থেকে এটাই স্পষ্ট পরের টেস্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে বড় পরীক্ষা দিতে হবে শান্তদের। কারণ এবার সর্বোচ্চ শক্তি ও সামর্থ্য প্রয়োগ করবে স্বাগতিক পাকরা জেতার জন্য। আর টানা দুই টেস্টে ভালো খেলার জন্য আত্মশক্তি, ফিটনেস এবং সামর্থ্য ধরে রাখাই বড় চ্যালেঞ্জ। তবে টানা ব্যর্থতার পর এত বড় জয় উজ্জীবিত করেছে বাংলাদেশ দলকে। 
প্রথম টেস্টে বাংলাদেশের দুই স্পিনার সাকিব আল হাসান ও মেহেদি হাসান মিরাজের সাফল্য দেখে এবার লেগস্পিনার আবরার আহমেদকে নিয়ে নামবে পাকরা। শাহীন আফ্রিদিকে বাদ দিয়েছে তারা। এবার হয়তো ৩ পেসার ও ১ স্পিনার নিয়ে একাদশ সাজাবে তারা সেটি ১২ জনের স্কোয়াড থেকে স্পষ্ট। বাংলাদেশ দলকে তাই প্রথম টেস্টের চেয়ে ভিন্ন এক চ্যালেঞ্জেই পড়তে হবে। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যেমন ব্যাটারদের ওপর নির্ভর করতে হবে, তেমনি বোলারদের ওপরেও।

অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম ও মুমিনুল হকের ওপর ভরসাটা বেশিই থাকবে নিঃসন্দেহে। ব্যাটিং ভালো করে বড় সংগ্রহ দাঁড় করাতে পারলে বোলাররাও স্বস্তিতে নির্ভার হয়ে দারুণ কিছু করতে পারবেন। এখন দেখার বিষয় প্রথমবার কোনো র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ পাঁচে থাকা কোনো দলের বিপক্ষে সিরিজ জিততে পারে কিনা বাংলাদেশ। পাকিস্তান এই মুহূর্তে আছে আইসিসি টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ে ৫ নম্বরে।

×