মুশফিক- দ্য হিস্ট্রি ম্যান

মুশফিক- দ্য লিটল ম্যান। হিস্ট্রি ম্যানও। বাংলাদেশের ক্রিকেটে কত অর্জন, কত রেকর্ড, কত কীর্তিতেই না জড়িয়ে তার নাম। সেই মুকুটে যোগ হলো আরেকটি পালক। দীর্ঘ প্রায় দুই যুগে প্রথমবার পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট জয়, তাও আবার পাকিস্তানের মাটিতে। আর অনন্য, ঐতিহাসিক এ সাফল্যের অন্যতম কারিগর মুশফিকুর রহিম।

মাত্র ৯ রানের জন্য আভিজাত্যের সাদা পোশাকে চতুর্থ ডাবল সেঞ্চুরি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন, কিন্তু ক্রিকেট অন্তপ্রাণ মুশি জানিয়েছেন এতটুকু আক্ষেপ নেই, দলের জয়েই বেশি খুশি তিনি। সাফল্যের ভাগিদার করেছেন গোটা দেশবাসীকে। আর ম্যাচসেরার যে অর্থ তা বিলিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বানভাসী মানুষের জন্য,‘বাজিদ ভাই, দলের অনুরোধে এই প্রাইজমানি বন্যার্তদের দান করতে চাই।

আমি অনুরোধ করব, যাদের সামর্থ্য আছে সবাই যেন এগিয়ে আসেন। রাওয়ালপিন্ডিতে এই জয়ের কৃতিত্ব দলের সবার, স্মরণীয় এই অর্জন বাংলাদেশের সকল মানুষের জন্য।’ পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের সঞ্চালক বাজিদ খানকে বলছিলেন মুশফিক।
বাংলাদেশ টেস্ট স্ট্যাটাস পায় ২০০০ সালে। পরের বছরই পাকিস্তান সফর করে। সেই থেকে ১৩ টেস্ট খেলে কোনো জয় ছিল না, হার ১২টিতে, ড্র ১। সেই দলটা যখন ৬ উইকেটে ৪৪৮ রানের পাহাড় গড়ে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করল, কে ভেবেছিল বাংলাদেশ ওই স্কোর টপকে লিড নেবে এবং শেষ পর্যন্ত পাবে ১০ উইকেটের বড় জয়? অবিশ্বাস্য এই ঘটনার কারিগর মুুশফিক।

ব্যাটের ছোঁয়ায় নতুন ইতিহাসের ছবি এঁকেছেন লিটল ম্যান। ২২ চার ও ১ ছক্কায় খেলেছেন ১৯১ রানের মহাকাব্যিক এক ইনিংস। ৫৬৫ রান তুলে রেকর্ড বই এলোমেলো করে দিয়েছে টাইগাররা। ম্যাচসেরা হয়ে মুশফিক পেয়েছেন ৩ লাখ পাকিস্তানি রুপি বা প্রায় ১ লাখ ২৮ হাজার ৭১৫ টাকা। আচমকা বন্যায় বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাতে এখনো পানিবন্দি কয়েক লাখ মানুষ।

এর আগে বাংলাদেশে ঐতিহাসিক এক গণ-অভ্যুত্থানও হয়ে গেছে। দেশের এমন পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই আনন্দের একটি উপলক্ষ হয়ে আসতে পারে বাংলাদেশ দলের এ জয়। তাতে সবচেয়ে বড় অবদান নিশ্চিতভাবেই মুশফিকের। এমন একটি ইনিংস খেলার পর তিনি বলেছেন, ‘প্রথমেই আলহামদুলিল্লাহ, সর্বশক্তিমান আল্লাহকে ধন্যবাদ। অবশ্যই এটি আমার সবচেয়ে ভালো ইনিংসগুলোর একটি। যেমনটি বললেন, বিদেশে তেমন ভালো করিনি। ফলে এটি আমাদের একটি লক্ষ্য ছিল দল হিসেবে, যাতে পারফর্ম করতে পারি, যাতে সবাই দেখে যে আমরা বিদেশে ব্যাটিংয়ে উন্নতি করছি।’
এমন জয়ের পর মুশফিক আলাদা করে বলেছেন, পাকিস্তান সিরিজের আগে বাংলা টাইগার্সের ক্যাম্পের কথাও। তিনি বলেন, ‘নিজের কিছু ভাবনার কথা বলতে চাই। এ সিরিজের আগে প্রায় আড়াই মাসের একটা বিরতি ছিল। আমরা বাংলা টাইগার্সের হয়ে বিশেষ একটা ক্যাম্প করেছি দেশে। স্থানীয় সাপোর্ট স্টাফের দারুণ সহায়তা পেয়েছি। এটি আমাদের সহায়তা করেছে, বিশেষ করে টেস্ট খেলোয়াড়দের।

কারণ সীমিত ওভারে যারা খেলে, তারা বিশ্বকাপে ব্যস্ত ছিল। দেশেও এমন আবহাওয়াই ছিল। ওই অভিজ্ঞতা থেকে আমাদের মানসিক কাঠিন্য এসেছে। আমি ওই ক্যাম্পের সব সাপোর্ট স্টাফকে ধন্যবাদ দিতে চাই।’ আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ১৯ বছর পার করে ফেলা মুশফিক এখনো নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করেন বাংলাদেশের হয়ে খেলতে পেরে। তার মতে, ‘সত্যি বলতে আমি ভাবি না যে আমি সবচেয়ে অভিজ্ঞ ও বয়স্ক ক্রিকেটার।

কারণ দলের সবাইকে দেখলে মনে হয়, এটি আমার সৌভাগ্য যে দেশের হয়ে আরেকটি টেস্ট ম্যাচ খেলতে পারছি। আমি শুধু নিজের শতভাগ দেওয়ার চেষ্টা করি। দলের জন্য অবদান রাখতে পারলে যদি অন্যরা অনুপ্রেরণা পায়। আমি এ কারণেই এখানে, এটিই আমাকে এগিয়ে নেয়।’