ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৯ ভাদ্র ১৪৩১

জয়ের স্বপ্নও দেখছে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ২১:২৯, ২৪ আগস্ট ২০২৪; আপডেট: ২১:৩১, ২৪ আগস্ট ২০২৪

জয়ের স্বপ্নও দেখছে বাংলাদেশ

রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে পাকিস্তানকে চাপে রেখেছে বাংলাদেশ

রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে পাকিস্তান প্রথম ইনিংস ৬ উইকেটে ৪৪৮ রান তুলে ঘোষণার পর চ্যালেঞ্জে পড়ে সফরকারী বাংলাদেশ দল। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাটাররা সেই চ্যালেঞ্জটা ভালোভাবেই মোকাবেলা করেছেন। মুশফিকুর রহিম- মেহেদি হাসান মিরাজ রেকর্ড ১৯৬ রানের জুটি গড়েছেন। তাই শনিবার ম্যাচের চতুর্থ দিন প্রথম ইনিংসে ৫৬৫ রানের বিশাল সংগ্রহ গড়েছে টাইগাররা। ১১৭ রানে এগিয়ে থাকে বাংলাদেশ। দিনশেষে ১ উইকেটে ২৩ রান তুলে এখনো ৯৪ রানে পিছিয়ে আছে পাকিস্তান। বোলারদের ওপর আস্থা রেখে আজ ম্যাচের পঞ্চম ও শেষদিন জয় তুলে নেওয়ার আশা করছে টাইগাররা।

টেস্টের প্রথম ইনিংসে প্রতিপক্ষ ৪ শতাধিক রান করার পর বাংলাদেশ পরে ব্যাট করে লিড নেওয়ার ঘটনা এটি নিয়ে মাত্র চতুর্থ। ২০১২ সালে মিরপুরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৫২৭ করার পর ২৯ রানে (বাংলাদেশ ৫৫৬), ২০১৩ সালে গলে শ্রীলঙ্কা ৫৭০ করার পর ৬৮ রানে (বাংলাদেশ ৬৩৮), চট্টগ্রাম ২০১৩ সালে নিউজিল্যান্ড ৪৬৯ রান করার পর ৩২ রানে (বাংলাদেশ ৫০১)  লিড নেয় বাংলাদেশ। পরে ব্যাট করে অবশ্য মাত্র পঞ্চমবার ৫ শতাধিক রান করতে পেরেছে বাংলাদেশ দল। 

তৃতীয় দিনশেষে বাংলাদেশ ৫ উইকেটে ৩১৬ রান করে। মুশফিক তখন ৫৫ ও লিটন কুমার দাস ৫২ রানে ব্যাট করছিলেন। চতুর্থ দিন মাত্র ৫৬ রানেই বিদায় নেন লিটন। কিন্তু এরপর আর মুশফিক-মিরাজ সুযোগ দেননি। লাঞ্চ বিরতি পর্যন্ত ১ উইকেটে ৭৩ রান যোগ করে বাংলাদেশ। ক্যারিয়ারের ১১তম সেঞ্চুরি পেয়ে যান মুশফিক। 

বাংলাদেশের পক্ষে টেস্টে সবচেয়ে বেশি ১২ টেস্ট সেঞ্চুরি মুমিনুল হকের। ১০ সেঞ্চুরি নিয়ে এতোদিন দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলেন তামিম ইকবাল। এখন তাকে সরিয়ে দুইয়ে উঠে এসেছেন মুশফিক। দেশের বাইরে সর্বাধিক ৫ সেঞ্চুরির রেকর্ডও এখন তার। এক্ষেত্রেও তামিমকে পেছনে ঠেলে দিয়েছেন মুশফিক। তামিমের দেশের বাইরে সেঞ্চুরি ৪টি।

পরের সেশনে চা বিরতি পর্যন্ত আর কোনো উইকেট হারায়নি বাংলাদেশ। এই সেশনে হয়েছে ৩১ ওভার এবং বাংলাদেশ যোগ করেছে ১০৬ রান। ততোক্ষণে লিডও পেয়ে গেছে বাংলাদেশ। সেই লিড আরো বাড়তে থাকে চা বিরতির পর মুশফিক-মিরাজের ছন্দোবদ্ধ ব্যাটিংয়ে।

মুশফিক ডাবল সেঞ্চুরির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। দেড়শ’ পেরোনোর পর দুইবার ক্যাচ দিয়ে বেঁচেও গিয়েছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ৩৪১ বলে ২২ চার, ১ ছক্কায় ১৯১ রানে মোহাম্মদ আলীর পেসে কট বিহাইন্ড হয়েছেন। মিস করেছেন ক্যারিয়ারের চতুর্থ ডাবল সেঞ্চুরি। 

ফলে মুশফিক-মিরাজের ১৯৬ রানের সপ্তম উইকেট জুটি ভেঙ্গে যায়। এর আগে দেশের পক্ষে সপ্তম উইকেটে সেরা টেস্ট জুটি ছিল ১৪৫ রানের। ২০১০ সালে হ্যামিল্টনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেই জুটি গড়েন সাকিব আল হাসান ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। পাকিস্তানের বিপক্ষে সপ্তম উইকেটে এটাই সর্বোচ্চ রানের জুটি। তারা ৪৮ বছর আগের রেকর্ড ভেঙ্গেছেন। ১৯৭৬ সালে করাচিতে নিউজিল্যান্ডের হয়ে সপ্তম উইকেটে ১৮৬ রানের জুটি গড়েন স্যার রিচার্ড হ্যাডলি ও ওয়ারেন লিস।

এরপরও মিরাজের ১৭৯ বলে ৬ চারে ৭৭ এবং শরিফুল ইসলামের ১৪ বলে ২ চার ও ২ ছক্কায় করা ২২ রানের ইনিংস রেকর্ড সংগ্রহ এনে দেয় বাংলাদেশকে। ফলে ৫৬৫ রান করে ১১৭ রানের লিড নেয় বাংলাদেশ। 

২০০৩ সালে পেশোয়ার টেস্টে বাংলাদেশ ৩৬১ রান করে। সেটিই পাকিস্তানের মাটিতে সেরা ছিল এতোদিন বাংলাদেশ দলের। এখন সেটি ছাপিয়ে পাকদের বিপক্ষে টেস্ট ইতিহাসেই নিজেদের সর্বোচ্চ সংগ্রহ পেয়েছে টাইগাররা। ২০১৫ সালে খুলনায় ৬ উইকেটে ৫৫৫ এতোদিন তাদের বিপক্ষে বাংলাদেশের সেরা সংগ্রহ ছিল। এখন সবকিছুকেই পেছনে ফেলেছে। 

টেস্টে এটি বাংলাদেশের সর্বোপরি তৃতীয় সর্বোচ্চ সংগ্রহ। ২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গল টেস্টে পরে ব্যাট করে ৬৩৮ রান করে বাংলাদেশ। সেটিই এখন পর্যন্ত টাইগারদের টেস্টে সর্বোচ্চ দলগত রান। এছাড়া ওয়েলিংটনে ২০১৭ সালে প্রথমে ব্যাট করে ৮ উইকেটে ৫৯৫ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে।

পিন্ডি টেস্টের চতুর্থ দিন শেষে দ্বিতীয় ইনিংসে ১ উইকেটে ২৩ রান করেছে পাকিস্তা্ন। ৯৪ রানে পিছিয়ে আছে তারা। এজন্যই আজ পঞ্চম দিনে জয়ের স্বপ্নই দেখছে বাংলাদেশ। কারণ কম লিডে পাকদের আটকাতে পারলে সেই সম্ভাবনা বেশ ভালোভাবেই আছে। তাই চাপে আছে পাকিস্তান। তবে আপাতত এই টেস্টে হারছে না বাংলাদেশ তা অনেকটাই নিশ্চিত।

মামুন//শহিদ

×