ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০২ জুলাই ২০২৪, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১

শ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চ রাঙিয়ে দুই কিংবদন্তির বিদায় 

শাকিল আহমেদ মিরাজ

প্রকাশিত: ০১:৫৮, ১ জুলাই ২০২৪

শ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চ রাঙিয়ে দুই কিংবদন্তির বিদায় 

ক্রিকেট বিশ্ব জয় করে টি২০ থেকে অবসর নিয়েছেন দুই ভারতীয় কিংবদন্তি বিরাট কোহলি ও রোহিত শর্মা (ডানে)

টেস্ট-ওয়ানডে খেলে যাবেন যতদিন ছন্দে আছেন, শরীর যতদিন সায় দেয়। তবু কেন রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলির টি২০ ছাড়া নিয়ে এত আলোচনা? কারণ ছোট্ট ফরম্যাটের ক্রিকেটে দুটি নামই মিলেমিশে একাকার। অর্জনে-রেকর্ডে অগ্রভাগে চলমান দুই কিংবদন্তি। একের পর এক বিশ্বকাপে খেলতে নেমেছেন হট-ফেভারিট হিসেবে, সাফল্যও পেয়েছেন, গত এক যুগে আইসিসির বৈশ্বিক আসরে শতকরা ৮০ শতাংশ জয় পেয়েছেন, শুধু ট্রফিটাই জিততে পারেননি! ২০০৭ প্রথম টি২০ বিশ্বকাপেই বাজিমাত করেছিলেন মহেন্দ সিং ধোনি, পরে জিতেছেন ২০১১ ওয়ানডের শিরোপা। সতেরো বছর পর টি২০ বিশ্বকাপের শিরোপা পুনরুদ্ধারের মঞ্চে দাঁড়িয়ে দুই কিংবদন্তির ছোট্ট ফরম্যাটের ক্রিকেট থেকে অবসরের এই ঘোষণা তাই ভারতীয়দের জন্য ‘বিশেষ’, বিশেষ রাহুল দ্রাবিড়ের জন্যেও। সাফল্যের মঞ্চে প্রিয় দুই শিষ্যের কাঁধে হাত রেখে শেষ হলো তার কোচিং-অধ্যায়। 
সতের বছর আগে ধোনি যখন প্রথম টি২০ বিশ্বকাপ জেতেন, রোহিত তখন সেই দলের কনিষ্ঠ সদস্য। ২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপ জয়ের মঞ্চে ছিলেন দুজনই। ছিলেন ভারতীয়দের ক্রিকেট-ঈশ্বর শচীন টেন্ডুলকর। শচীন-ধোনি অবসরে যাওয়ার পর প্রজন্মের ঝান্ডা ছিল রোহিত-কোহলিদের হাতে। ব্যাট হাতে, নেতৃত্বে সমানে গোটা ক্রিকেট বিশ্ব শাসন করেছেন, শিরোপার মঞ্চে দাঁড়িয়ে বিদায় তো তাদেরই মানায়! ৩৭ বছর বয়সেও ব্যাট হাতে রোহিত (৩ ফিফটিতে ২৫৭ রান) ছিলেন যথারীতি দূরন্ত-দুর্বার।

রান পাচ্ছিলেন না ৩৫ বছরের কোহলি। আগের সাত ম্যাচে দুইবার মাত্র দুই অঙ্ক ছুঁতে পারা বড় তারকা জ্বলে উঠলেন ফাইনালে। ৫৯ বলে ৭৬ রানের ক্ল্যাসিক্যাল ইনিংস উপহার দিয়ে হলেন ম্যান অব দ্য ম্যাচ। পুরস্কার নিতে এসেই দিলেন অবসরের ঘোষণা, ‘এটা আমার শেষ টি২০ বিশ্বকাপ, ভারতের হয়ে শেষ টি২০ ম্যাচ। একটা সময় আপনার মনে হবে আপনি রানই করতে পারছেন না। তারপর কিছু ঘটবে। ঈশ্বর মহান। ট্রফিটা উঁচিয়ে ধরতে চেয়েছি। এখন পরবর্তী প্রজন্মের পালা।’ রোহিত অবশ্য টি২০ ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন আরেকটু পরে, সংবাদ সম্মেলনে, ‘সত্যি বলতে টি২০ খেলার শুরু থেকেই আমি উপভোগ করেছি। বিদায় বলে দেওয়ার জন্য এর চেয়ে ভালো সময় আর হয় না। প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করেছি। ভারতের হয়ে আমার ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল টি২০ দিয়ে। চেয়েছিলাম বিশ্বকাপ জিতে এরপর... (ইশারায় বিদায় বলার ভঙ্গি)।’ 
ক্যারিয়ারে ১৫৯টি টি২০ খেলে ৩২.০৫ গড় ও ১৪০.৮৯ স্ট্রাইক রেটে ৪২৩১ রান  রোহিতের। তার ৫ সেঞ্চুরিও বিশ্ব রেকর্ড এই সংস্করণে। ফিফটি করেছেন ৩২টি। দেড় শ ম্যাচ খেলা একমাত্র ক্রিকেটারও তিনিই। ছক্কা মেরেছেন রেকর্ড ২০৫টি। এখানে তার ধারে কাছে নেই কেউ। ১২৫ ম্যাচে ৪৮.৬৯ গড় ও ১৩৭.০৪ স্ট্রাইক রেটে ৪১৮৮ রান কোহলির। তার সেঞ্চুরি একটি, ফিফটি রেকর্ড ৩৮টি। শীঘ্রই হয়তো এই দুজনকে টপকে রানের রেকর্ডটি আবার নিজের করে নেবেন বাবর আজম (৪১৪৫)। তবে বিদায় বেলায় অন্তত দুই ভারতীয় ব্যাটসম্যানই ওপরে। রোহিত ও কোহলির এই বিদায় খুব একটা অপ্রত্যাশিত ও বিস্ময়কর নয়। বিশ্বকাপ না জিতলেও হয়তো তারা বিদায় বলতেনই। সেক্ষেত্রে ঘোষণাটি এ রকম তাৎক্ষণিক নয়, পরে আসতে পারত। দুই বছর পর আরেকটি টি২০ বিশ্বকাপে তাদের থাকার সম্ভাবনা এমনিতেই ছিল না খুব একটা। বিশ্বকাপ জয় তাদের বিদায়টা মধুর করে তুললেন ও পূর্ণতায় ভরিয়ে দিলেন। ২০২২ বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে হারার পর এমনিতেও দীর্ঘ সময় টি২০ থেকে দূরে ছিলেন দুজনই। বিশ্বকাপ শিরোপায় চোখ রেখেই এই বছরের জানুয়ারিতে আবার ফেরেন দুজন। অভিযান সম্পূর্ণ করেই চূড়ান্ত বিদায় নিলেন। রোহিত আবারও বললেন, কতটা তীব্রভাবে এই শিরোপা তিনি চাইছিলেন, ‘এটা (ট্রফি) প্রবলভাবে চাইছিলাম আমি। (অনুভূতি) ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। আমার জন্য খুবই আবেগময় মুহূর্ত। আমার জীবনে এই ট্রফিটির জন্যই খুব মরিয়া ছিলাম। খুবই খুশি যে শেষ পর্যন্ত আমরা  বৈতরণী পার হতে পারলাম।’
৩৫ বছর বয়সী অলরাউন্ডার রবীন্দ্র জাদেজা ভারতের হয়ে ৭৪ ম্যাচে করেছেন ৫১৫ রান। বাঁহাতি স্পিনে উইকেট নিয়েছেন ৫৪ উইকেট। গত ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে দল হারলেও রাহুল দ্রাবিড়কে কোচিংয়ের মেয়াদ বড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছিল ইন্ডিয়ান বোর্ড (বিসিসিআই)। কিন্তু ৫১ বছর বয়সী কিংবদন্তি রাজি হননি। ফলে শিরোপা জয়ের মঞ্চে উত্তরসূরি দুই তারকার বিদায়ের সঙ্গে জাতীয় দলে রাহুলÑঅধ্যায়ের সমাপ্তি হলো।
 

×