ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০২ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১

আয়োজনে উন্মাদনায় সফল বিশ্বকাপ

শাকিল আহমেদ মিরাজ

প্রকাশিত: ০০:৩২, ৩০ জুন ২০২৪

আয়োজনে উন্মাদনায় সফল বিশ্বকাপ

এবার বিশ্বকাপ মাতিয়েছে সহ-আয়োজক যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির সমর্থকরাও গ্যালারিতে ছিলেন সরব

বিশ্বায়নের বিশ্বকাপ। বিশ্বব্যাপী ক্রিকেট ছড়িয়ে দিতে, আরও জনপ্রিয় করে তুলতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও যুক্তরাষ্ট্রে সর্বোচ্চ ২০ দল নিয়ে অনুষ্ঠিত হলো টি২০ বিশ্বকাপের নবম আসর। ২০২১ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ওমানের পর দ্বিতীয়বারের মতো দুটি দেশে হলো ছোট্ট ফরম্যাটের শ্রেষ্ঠত্বের আসর। তিন-চার দেশ মিলে ওয়ানডে বিশ্বকাপ আয়োজনের নজির থাকলেও সেখানে সহযোগী হিসেবে সকার-বাস্কেটবল প্রিয় যুক্তরাষ্ট্রের মতো কোনো দেশ ছিল না।

কেমন হলো বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসির এ প্রয়াস? বৃষ্টি, কিছুটা  ট্রাভেল বিড়ম্বনা আর শুরুর দিকে পিচ নিয়ে নেতিবাচক কথা হলেও শেষ পর্যন্ত আয়োজন সফলই বলতে হবে। আয়োজক হিসেবে প্রথমবার বিশ্বকাপে সুযোগ পেয়েই সুপার এইটে উঠে চমক দেখিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আফগানিস্তান সেমিফাইনাল খেলে তাতে বাড়তি মাত্রা যোগ করে। প্রধান আয়োজক ওয়েস্ট ইন্ডিজ সুপার এইট থেকে বিদায় নিলেও ছয় ভেন্যুতে দর্শক উন্মাদনা ক্যারিবীয় ক্রিকেটে নবজাগরণেরই ইঙ্গিত। মার্কিন মুলুকে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে সন্ত্রাসী হামলার হুমকি থাকলেও ক্ষমতাধর দেশটির তিন ভেন্যুতেই নির্বিঘেœ আয়োজন সম্পন্ন হয়। 
২০০৭ সালে শুরু টি২০ বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথমবার আয়োজক (একক) হয়েছিল ২০১০ সালের তৃতীয় আসরে। আর ১৯৭৫ সালে শুরু ওয়ানডে বিশ্বকাপ প্রথম সহ-আয়োজক পেয়েছিল ১৯৮৭ সালের চতুর্থ আসরে। আয়োজন করেছিল ভারত ও পাকিস্তান। এবার টি২০ বিশ্বকাপের সহ-আয়োজক যুক্তরাষ্ট্রের তিন ভেন্যু ছিল আসর উপলক্ষে অস্থায়ীভাবে নির্মিত নিউইয়র্কের নাসাউ কাউন্টি স্টেডিয়াম, আসর শেষে যেটি ভেঙে ফেলা হবে।

মাত্র পাঁচ মাসে তৈরি এ স্টেডিয়ামে অস্ট্রেলিয়া থেকে নিয়ে আসা ‘ড্রপ ইন পিচ’ ব্যবহার করা হয়, যা পেস বোলারদের জন্য স্বর্গভূমি আর ব্যাটারদের জন্য হয়ে ওঠে বধ্যভূমি। যেখানে গ্রুপ-পর্বে সর্বোচ্চ ৩টি ম্যাচ খেলে পরাশক্তি ভারত। অপর দুই ভেন্যু ডালাসের (টেক্সাস) গ্র্যান্ড প্রেইরি স্টেডিয়াম ও ফ্লোরিডার লডারহিল। ৯ জুন নিয়ইয়র্কে উন্মদনার ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের আগেই সন্ত্রাসী হামলার হুমকি এসেছিল, স্থানীয় প্রশাসন ও আইসিসির সর্বোচ্চ প্রচেষ্টায় নির্বিঘেœই খেলা শেষ হয়।

তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচে ৬ রানের জয় পায় রোহিত শর্মার দল। ডালাসে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২ উইকেটের নাটকীয় জয়ের পর নেদারল্যান্ডস ও নেপালকে হারিয়ে সুপার এইটে ওঠে আসে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কাকে চার ম্যাচের তিনটিই খেলতে হয় ভিন্ন তিন ভেন্যুতে, গ্রুপ-পর্ব থেকে বাদ পড়ার পর এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন অধিনায়ক ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। উইন্ডিজে সুপার এইট এবং সেমিতে একই বিড়ম্বনায় পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকাও। 
ওয়েস্ট ইন্ডিজ মূলত আলাদা অনেক দ্বীপ নিয়ে গঠিত একটি দেশ। স্বভাবতই ভিন্ন ছয় অঞ্চলের ছয় ভেন্যুতে ছোটাছুটি করতে হয়েছে দলগুলোকে। যুক্তরাষ্ট্রে দর্শক কিছুটা কম হলেও উইন্ডিজে গ্যালারি ছিল পরিপূর্ণ। মাঠের ক্রিকেটে আশা জাগিয়েও সেমিতে উঠতে পারেনি সুপার এইটে ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হেরে বিদায় নেয় ক্যারিবীয়রা। ‘এটা (দর্শক সমর্থন) ছিল দারুণ। যে সব ভেন্যুতে আমরা খেলেছি, সামাজিক মাধ্যমে যত লাইক এবং এই ধরনের যা কিছু আমাদেরকে লোকে উপহার দিয়েছে, দল হিসেবে আমরা এ সবের প্রশংসা করি।

ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটকে ঘিরে সেই চর্চা ফিরে আসতে দেখাটা দারুণ, কারণ আমরা জানি কত আগে এটা মৃত হয়ে গিয়েছিল। এখন লোকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলকে ঘিরে আগ্রহী হচ্ছে। এখন জাতীয় সংগীতের সময় আমরা ক্রিকেটাররা কিছু একটা অনুভব করি। আমার মনে হয়, এটা সঠিক পথেই এগোচ্ছে,’ বলেন অধিনায়ক রোভমান পাওয়েল। আর সহ-আয়োজক যুক্তরাষ্ট্র তারকা ক্রিকেটার অ্যারন জোন্সের বক্তব্য, ‘আমাদের প্রথম বিশ্বকাপ। আমার মনে হয় না লোকে ভেবেছে আমরা এখানে এসে (সুপার এইটে) বড় দলগুলোর সঙ্গে  খেলব।’

×