ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ৩০ জুন ২০২৪, ১৬ আষাঢ় ১৪৩১

আফগানদের স্বপ্নযাত্রা থামিয়ে ফাইনালে প্রোটিয়ারা

শাকিল আহমেদ মিরাজ

প্রকাশিত: ০০:৪৭, ২৮ জুন ২০২৪

আফগানদের স্বপ্নযাত্রা থামিয়ে ফাইনালে প্রোটিয়ারা

শুরুতেই আফগানিস্তানের ব্যাটিং ধসিয়ে দেয়া পেসার মার্কো জানসেনকে (ডানে) ঘিরে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটারদের উচ্ছ্বাস। ত্রিনিদাদে বৃহস্পতিবার

উইন্ডিজ বিশ্বকাপে উড়ছিল আফগানিস্তান। নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার মতো দলকে বিদায় করে প্রথমবার সেমিতে উঠে ইতিহাস গড়ে রশিদ খানের দল। অন্যদিকে, গ্রুপ-পর্ব থেকে সেরা আটÑ অপরাজেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। উত্তাপ ছড়ানো এক সেমিফাইনালের অপেক্ষায় ছিল বিশ্ব ক্রিকেট। অথচ ৯ উইকেটের দাপুটে জয়ে ফাইনালে উঠে গেল প্রোটিয়ারা। উল্টো ইতিহাস লিখল এইডেন মার্করামের দল।

ঘুচল চোকার্স অপবাদ! ওয়ানডে ও টি২০ বিশ্বকাপ মিলিয়ে সাত-সাতবার সেমিতে হারার পর অবশেষে প্রথমবার ফাইনালের মঞ্চে প্রোটিয়ারা। বড় ম্যাচের চাপে রশিদের দল কি তবে প্যানিক হয়ে গিয়েছিল? এমন প্রশ্ন উঠতেই পারে। ত্রিনিদাদের ব্রায়ান লারা স্টেডিয়ামে জানসেন-রাবাদা-শামসিদের সাঁড়াশি বোলিংয়ে ১১.৫ ওভারে মাত্র ৫৬ রানে অলআউট আফগানিস্তান, দুই অঙ্ক ছুঁতে পারলেন কেবল একজন। দক্ষিণ আফ্রিকা যেটা পেরিয়ে গেল ৮.৫ ওভারে, ১ উইকেট হারিয়ে। থামল আফগানদের স্বপ্নযাত্রা। ১৬ রানের বিনিময়ে ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা পেসার মার্কো জানসেন।
এই মাঠে এবারের বিশ্বকাপে আগের চার ম্যাচের তিনটিতেই কোনো দল আগে ব্যাট করে একশ’ রান করতে পারেনি। টস জিতে রশিদ খান যখন ব্যাটিং নেন, প্রতিপক্ষ অধিনায়ক এইডেন মার্করামও বলছিলেন, তিনি টস জিতলেও ব্যাটিংই নিতেন! তাহলে কি লো-স্কোরিং পিচে টস জিতে ভুল সিদ্ধান্ত নিলেন আফগান অধিনায়ক? এই প্রশ্ন যেমন আছে, তেমিন আসরের সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক ওপেনিং জুটি (রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরান) নিয়ে গড়া ব্যাটিং এভাবে ভেঙে পড়বে, সেটাই বা কে ভেবেছিল।

সন্দেহ নেই অবিশ্বাস্য বোলিং করেছেন তিন প্রোটিয়া পেসার মার্কে জানসেন (৩-০-১৬-৩), কাগিসো রাবাদা (৩-১-১৪-২) ও এনরিক নরকিয়া (৩-০-৭-২) ও বাঁহাতি স্পিনার তাবারেজ শামসি (১.৫-০-৬-৩)। আফগানিস্তানের নয় ব্যাটসম্যান দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছাতে পারেননি। সর্বোচ্চ ১০ রান করেন আজমতউল্লাহ ওমরজাই। বাকিরা সিঙ্গেল ডিজিটেই আউট! জানিয়ে রাখা ভালো, আফগানিস্তান পুঁজিতে সর্বোচ্চ ১৩ রান পেয়েছে অতিরিক্ত খাত থেকে। ৬ ওয়াইডের সঙ্গে ১ লেগ বাই ও ৬ বাই। আফগান শিবিরে শুরুতে আঘাত করেন মার্কো জানসেন ও কাগিসো রাবাদা।

দুজনের বোলিং তোপে ২৩ রানে ৫ উইকেট হারায় আফগানিস্তান। রাবাদা প্রথম ওভারে ইব্রাহিম জাদরান ও মোহাম্মদ নবীকে বোল্ড করেন। জানসেন নিজের ৩ ওভারে নেন রহমানউল্লাহ গুরবাজ, গুলবাদিন নাইব ও নাঙ্গেলিয়া খারোতের উইকেট।  পরের ৩৩ রান তুলতে নেই আফগানিস্তানের  শেষ ৫ উইকেট। এবার লেজটায় আঘাত করেন চায়নাম্যান তাবারেজ শামসি। ১.৫ ওভারে ৬ রানে তার শিকার ৩ উইকেট। সঙ্গে গ্রুত গতির বোলার নরকিয়ার পকেটে ২ উইকেট। জমাট জুটি, নিয়ন্ত্রিত বোলিং এবং আগ্রাসনে আফগানিস্তানকে মাত্র ১১.৫ ওভারে অলআউট করে দেয় দক্ষিণ আফ্রিকা।

ম্যাচটা যে প্রথম ইনিংসেই হাতের নাগাল থেকে বেরিয়ে গেছে তা রশিদ খান,  মোহাম্মদ নবীদের চোখে মুখে স্পষ্ট ছিল। তবুও লড়াইয়ের প্রেরণা তাদের ছিল। ‘চোকার্স’ দক্ষিণ আফ্রিকা যে বড় মঞ্চে পথ হারাতে সময় নেয় না! অতীত তো ঘুরে ফিরে বারবার চলে আসে। কিন্তু ত্রিনিদাদে এদিন তাদের ওপর কিছুই ‘ভর’ করেনি। বরং অতীতকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে বর্তমানকে রঙিন করল প্রোটিয়ারা। ফজলহক ফারুকীর বলে ডি কক উইকেট হারালেও  রেজা হেনড্রিকস এবং অধিনায়ক মার্করাম দলকে নিয়ে যায় ফাইনালে।

রেজা ২৯ ও মার্করাম ২৩ রানে অপরাজিত থেকে দলকে উল্লাসে ভাসান ৬৭ বল আগে। টি২০তে বলের হিসেবে এটি তাদের সবচেয়ে বড় জয়। আর উইকেটের হিসেবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যবধানে জয়। এর আগে ওয়ানডে বিশ্বকাপে পাঁচবার ও টি২০তে দুইবার সেমিফাইনালে উঠেও হারতে হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকাকে। অবশেষে অষ্টম চেষ্টায় স্বপ্নপূরণের চূড়ান্ত মঞ্চে পা-রাখল মার্করামের দল। ইতিহাস গড়তে আর একটি মাত্র জয় চাই তাদের, সেটা শনিবার, বার্বাডোজে ফাইনালের মঞ্চে। অন্যদিকে সেমি থেকে বিদায় নিলেও আসরজুড়ে দারুণ ক্রিকেটে প্রশংসা কুড়িয়েছে রশিদ-নবীদের আফগানিস্তান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর ॥ আফগানিস্তান ৫৬/১০ (১১.৫ ওভার; গুরবাজ ০, ইব্রাহিম ২, গুলবাদিন ৯, আজমতউল্লাহ ১০, নবী ০, নাঙ্গেলিয়া ২, করিম ৮, রশিদ ৮,  নুর ০, নাভিন ২, ফারুকী ২*; জানসেন ৩/১৬, রাবাদা ২/১৪, নরকিয়া ২/৭, শামসি ৩/৬)। 
দক্ষিণ আফ্রিকা ৬০/১ (৮.৫ ওভার; ডি কক ৫, হেনড্রিকস ২৯*, মার্করাম ২৩*; ফারুকী ১/১১, রশিদ ০/৮, নাভীন ১৫/০)।
ফল ॥ দক্ষিণ আফ্রিকা ৯ উইকেটে জয়।  
ম্যাচসেরা ॥ জানসেন (দক্ষিন আফ্রিকা)।

×