বিশ্বের যে কোনো দলই নিজেদের কন্ডিশন কাজে লাগাতে চায়। বিশেষ করে টেস্ট ক্রিকেটে দলগুলোর পরিকল্পনাই থাকে পছন্দের উইকেটে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার। সিলেট টেস্ট সামনে রেখে দুটি প্রশ্ন বড় হয়ে সামনে আসছে। প্রথমত, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে কেমন হবে উইকেট? দ্বিতীয়ত, পঞ্চাশ ওভারের ডিপিএল খেলে লঙ্গার ভার্সনে প্রস্তুতির ঘাটতি নিয়েই কি মাঠে নামছে নাজমুল হোসেন শান্তর দল? ফিল সিমন্স তা মনে করেন না। প্রপার উইকেটে ভালো জয় দিয়ে সিরিজ শুরুর প্রত্যয় বাংলাদেশ কোচের কণ্ঠে। ১৮ এপ্রিল শুক্রবার ৬২ বছরে পা রাখা সাবেক এ ক্যারিবিয়ান জন্মদিন উপলক্ষে শিষ্যদের কাছ থেকে স্মরণীয় কিছুই চাইছেন। অন্যদিকে বাংলাদেশকে সমীহ করলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ক্রিকেটের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন অভিজ্ঞ জিম্বাবুইয়ান অলরাউন্ডার শন উইলিয়ামস। সিলেটে রবিবার শুরু প্রথম টেস্ট। চট্টগ্রামে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট ২৮ এপ্রিল থেকে।
আমাদের পরিকল্পনা আছে, প্রপার উইকেট (স্পোর্টিং অর্থে) প্রস্তুত করার। আমরা একটা নির্দিষ্ট ওয়েতে খেলি, এ জন্য আমাদের জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে স্পিন উইকেট তৈরির দরকার নেই। প্রপার উইকেট বানিয়ে টেস্ট ম্যাচ জেতার চেষ্টা করব। স্পিন উইকেট বা পেস উইকেট তৈরির দরকার নেই। আমরা উইকেট দেখেছি আজ (শুক্রবার), উইকেট শক্ত, ভালো মনে হচ্ছে; আমাদের দেখতে হবে কাল সকালে কেমন হয়। শুক্রবার সিলেটে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে বলেন সিমন্স। ঘরের মাঠে ফেভারিট বাংলাদেশ, তবে ম্যাচ বাই ম্যাচ এগোতে চান কোচ, আমি হোয়াইটওয়াশের ব্যাপারে জানি না। একবারে একটি পদক্ষেপ নেওয়ার পক্ষে। এখানে প্রথম টেস্ট হবে। এটি জিতলে আমরা পরের ম্যাচ নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করব। প্রথম টেস্ট জেতার জন্য আমাদের প্রথম দিন জিততে হবে। আমি এভাবেই ভাবতে পছন্দ করি। এখনই চট্টগ্রাম নিয়ে ভাবতে পারব না। আপাতত সিলেট টেস্টে মনোযোগ দিতে হবে। বাংলাদেশ দলের বেশিরভাগ ক্রিকেটারেরই ব্যস্ততা ছিল ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে। ১৪ এপ্রিল থেকে সিলেটে শুরু হয় জাতীয় দলের প্রস্তুতি। ডিসেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলার প্রায় চার মাস পর সপ্তাহখানেক অনুশীলন শেষে আবার সাদা পোশাকের ক্রিকেটে মাঠে নামছে বাংলাদেশ। তবে প্রস্তুতিতে কোনো ঘাটতি দেখছেন না সিমন্স, প্রস্তুতি বেশ ভালো হয়েছে। এখানকার ফ্যাসিলিটিজ আমার মনে হয় স্বপ্নের মতো। আপনি যা চান, তাই করতে পারবেন। হোটেলটা খুব দূরে নয়। আমরা অনেক কাজ করতে পেরেছি এই অল্প সময়েই।
বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়রা সিমন্সকে যদি জন্মদিনের উপহার দিতেই চান, তাহলে কেমন হয়? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এই বয়সে এখন আর জন্মদিনের উপহার চাওয়ার পর্যায়ে নেই। তারা যদি উপহার দিতে চায়, প্রথম ম্যাচটি জিতলেই হবে (হাসি)। আমার এটুকুতেই হবে। জিম্বাবুয়ের হয়ে এদিন সংবাদ সম্মেলনে আসেন শন উইলিয়ামস। অভিজ্ঞ এ অলরাউন্ডার বলেন, আমার মনে হয় আমাদের প্রস্তুতি বেশ ভালো হয়েছে। জিম্বাবুয়েতে আমরা গেমটাইম পেয়েছি অনেক। সেখানে পেসাররা বেশ ভালো করেছে। দলের মানসিক অবস্থা এবং পরিবেশ দারুণ। দুর্দান্ত যাচ্ছে সবকিছু। বাংলাদেশের কন্ডিশন নিয়ে উইলিয়ামসের ভাষ্য, এখানে আমার অনেকবার সফর করা হয়েছে। অবশ্যই ঘুম, হাইড্রেশন এবং খাদ্যাভাস ঠিক রাখাটা বেশি জরুরি এখানে, এই প্রান্তে এসে। উইকেট নিয়েও আমাদের প্রস্তুতি চলছে। নেটে খেলা, নিজেদের খেলাটা ঠিক রাখা এবং মনোযোগ নষ্ট হওয়া থেকে দূরে থাকা। এসব ব্যাপারই আসলে বেশি জরুরি। সফরকারী দলে সিলেটের পেসবান্ধব উইকেটে ভালো করার মতো বোলার আছে বলেও জানান উইলিয়ামস, পিচ কিছুটা ভিন্ন লাগছে এবার। আগেরবার লো-স্লো এবং স্পিন সহায়ক মনে হয়েছিল। এবার ঘাস বেশি, পেস সহায়ক। পরিসংখ্যান বলছে এখানে প্রায় ৮০ শতাংশ সময়ে পিচ পেস সহায়ক থাকে। ফলে এবারও তাই থাকবে। আমাদের কিছু স্কিল্ড বোলার আছে, ভালো দক্ষ বোলার আছে, ব্লেসিং (মুজারাবানি), ভিক্টর (নিয়াউচি) ও (ট্রেভর) গুয়ান্দু আছে। আশা করি ভালো লড়াই হবে।
দুই দল সর্বশেষ টেস্টে মুখোমুখি হয়েছে ২০২১ সালে। হারারেতে চার বছর আগে সেই টেস্টে বাংলাদেশ জিতেছিল ২২০ রানে। এবার ক্রেইগ অরভিনের নেতৃত্বে জিম্বাবুয়ে ষষ্ঠবারের মতো টেস্ট খেলতে এসেছে। এর আগে ২০০১, ২০০৫, ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২০ সালে বাংলাদেশে এসে টেস্ট খেলেছে তারা। সব মিলিয়ে ১০ টেস্টে আফ্রিকার দলটির জয় মাত্র দুটি।