প্রশাসনে উত্থান-পতন, তলানি থেকে শীর্ষ পদে পদোন্নতি
প্রশাসনে উত্থান-পতন, তলানি থেকে শীর্ষ পদে পদোন্নতি, সচিব গ্রেপ্তার, নজিরবিহীন আন্দোলনসহ নানা ঘটনার মধ্যে দিয়ে শেষ হলো ২০২৪ সাল। বছরের অর্ধেকের বেশি সময় ছিল আওয়ামী শাসন। আবার আগস্ট থেকে শুরু হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শাসন ব্যবস্থা। আওয়ামী আমল গতানুগতিক থাকলেও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমল ছিল নানা বৈচিত্র্যময়। বছরের শেষভাগ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে শেষ হয়। এর মধ্যে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য মারাত্মক আকার ধারণ করে। এমনকি জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধানের পদ থেকে মুয়ীদ চৌধুরীর অপসারণও চান প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তারা।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্র্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয় ৮ আগস্ট। এ সরকারের সাড়ে চার মাসেও প্রশাসনে শৃঙ্খলা ফেরেনি। এ সময়ে ৫৩৭ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। সচিব করা হয়েছে ২৩ কর্মকর্তাকে। গ্রেড-১ পদে পদোন্নতি পেয়েছেন ১৭ জন। অতিরিক্ত সচিব ১৩৫, যুগ্ম সচিব ২২৮ এবং উপসচিব পদে পদোন্নতি পান ১৩৪ জন। অন্তর্র্বর্তী সরকারের সাড়ে চার মাসে একের পর এক বিষয় নিয়ে প্রশাসনে বিশৃঙ্খলা লেগেই থাকে। পদোন্নতি, পদায়নসহ নিজেদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের। নিয়মিত (রুটিন) কাজ ছাড়া নীতিনির্ধারণী বড় কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে এগোতে পারে না প্রশাসন।
আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে বঞ্চনার শিকার কর্মকর্তাদের পদোন্নতি, পদায়ন, পদমর্যাদা ও আর্থিক সুবিধার ওপর বেশি জোর দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, নাগরিক সেবা সহজ করা, সরকারি কর্মকর্তাদের কাজের গতি বাড়ানো ও দুর্নীতি কমানোর ক্ষেত্রে তেমন নজর দেওয়া হয়নি।
উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডার থেকে ৫০ শতাংশ এবং অন্য ক্যাডার থেকে ৫০ শতাংশ কর্মকর্তা নিয়োগের প্রস্তাব করে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। এ নিয়ে দ্বন্দ্ব আরও চরম আকার ধারণ করে। সংস্কার কমিশনের এই প্রস্তাবে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। এ নিয়ে তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন কয়েকশ কর্মকর্তা। আবার অন্য ২৫টি ক্যাডারের জোট আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদও কমিশনের সুপারিশে ক্ষোভ জানায়। তারাও আন্দোলনে নামে। ক্যাডারের বাইরে অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা। ফলে জনপ্রশাসনে নতুন করে অস্থিরতা তৈরি হয়।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্র্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয় ৮ আগস্ট। এ সরকারের প্রায় পাঁচ মাসেও প্রশাসনে শৃঙ্খলা ফেরেনি। এ সময়ে ৫৩৭ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। সচিব করা হয়েছে ২৩ কর্মকর্তাকে। গ্রেড-১ পদে পদোন্নতি পেয়েছেন ১৭ জন। অতিরিক্ত সচিব ১৩৫, যুগ্ম সচিব ২২৮ এবং উপসচিব পদে পদোন্নতি পান ১৩৪ জন। এতে এক মাসের মধ্যে সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়ার ঘটনাও ঘটে।
সাড়ে চার মাসে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বদলির আদেশ পরে প্রত্যাহার করতে হয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে। এক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আরেক মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতা স্পষ্ট। গত সাড়ে চার মাসে সাবেক সচিব, অতিরিক্ত সচিবসহ মোট ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। প্রশাসনে এবারই প্রথম এত সংখ্যক কর্মকর্তা গ্রেপ্তার হলেন। এবারই সবচেয়ে বেশি মামলা হয়েছে সচিবদের নামে। এ নিয়ে জনপ্রশাসনে আলোচনা-সমালোচনা রয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সচিব পদে যোগ দেওয়া অন্তত ২৭ জন কর্মকর্তা চাকরিতে বহাল থাকেন। অন্য সচিবদের মধ্যে কাউকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। কাউকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে। কেউ স্বাভাবিক অবসরে গেছেন। তবে যারা এখনো সচিব পদে বহাল আছেন, তারা থাকবেন কি না, সেটি নিশ্চিত নন। তাই বড় কোনো সিদ্ধান্ত নেন না।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বঞ্চনার শিকার কর্মকর্তারা যেমন পদোন্নতি পেয়েছেন; আবার দুর্নীতিতে অভিযুক্ত কর্মকর্তারাও পদোন্নতি পেয়েছেন। ঢালাও পদোন্নতিতে অনেক অদক্ষ কর্মকর্তাও পদোন্নতি পেয়ে যান। এ নিয়ে প্রশাসনে নানা প্রশ্ন উঠেছে।
অন্তর্র্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়ে ঘোষণা দেয়, বিগত সরকারের সময়ের চুক্তিভিত্তিক সব নিয়োগ বাতিল করা হবে। সে অনুযায়ী শতাধিক চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হয়। তবে একই সময়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে চুক্তিভিত্তিক সচিব নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। গত ১০ বছরে তাদের অনেকের প্রশাসনের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ ছিল না।
এ ছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে জনপ্রশাসনে বঞ্চিত ৭৬৪ জন সাবেক কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দেওয়ার সুপারিশ চূড়ান্ত করে সরকার। এর মধ্যে সচিব পদে ১১৯ জনকে পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে। বিগত সরকারের সময়ে বঞ্চিত কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে কাউকে কাউকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
কর্মকর্তাকে বদলি করে আবার সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হয়েছে। তদবির করে কেউ কেউ বদলির আদেশ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে সমন্বয়হীনতার কারণে বদলির সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হয় সরকারকে।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর চরম বিশৃঙ্খলার কারণে প্রশাসনে নামে স্থবিরতা। পরিস্থিতি মোকাবিলা করে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে প্রশাসনকে গতিশীল করার চ্যালেঞ্জে পড়ে অন্তর্র্বর্তী সরকার।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শুরুতে আন্দোলনের মুখে তড়িঘড়ি করে পদোন্নতি ও পদায়ন করতে নানা ধরনের ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়। অনিয়মে অভিযুক্ত কর্মকর্তারাও এতে পদোন্নতি পান। বিতর্কিত কর্মকর্তাদের সচিব কিংবা জেলা প্রশাসকের (ডিসি) মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়, যা সমালোচনার সৃষ্টি করে। এজন্য ভুলগুলো শুধরে বারবার সিদ্ধান্ত বদলাতে দেখা যায়।
ডিসি নিয়োগ নিয়ে সচিবালয়ে নজিরবিহীন প্রতিক্রিয়া দেখায় কর্মকর্তারা। তারা হাতাহাতিতেও জড়ান। জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ নিয়ে হট্টগোল ও বিশৃঙ্খলা করায় ১৭ জন উপসচিবকে শাস্তির সুপারিশ করে এ বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি। এ ছাড়া ডিসি নিয়োগ কেন্দ্র করে বিপুল অর্থের লেনদেন হয়েছে অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়। যদিও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তা ‘মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে উড়িয়ে দেন।
সরকারি কর্মকর্তাদের সম্পদের হিসাব দেওয়া বাধ্যতামূলক করে হম্বিতম্বি করা হলেও শেষ পর্যন্ত সকল কর্মকর্তা তাদের সম্পদ জমা দেন না। এ ছাড়া প্রশাসন সংস্কারে সাবেক সচিব ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আব্দুল মূয়ীদ চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি কমিশন গঠন করা হয়।
একইসঙ্গে প্রশাসনে স্থিতিশীলতা আনতে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ঘাটতি দেখা গেছে। বিলম্ব সিদ্ধান্তে অস্থিরতায় টালমাটাল প্রশাসন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে কাজ-কর্মে নামে স্থবিরতা। গত ১১ সেপ্টেম্বর জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেন, ২৮তম বিসিএস থেকে ৪২তম বিসিএস পর্যন্ত বিপিএসসি (সরকারি কর্মকমিশন) সুপারিশ করলেও অনেকে নিয়োগবঞ্চিত হয়েছেন। ৮ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত তাদের ২৫৯ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
গত ২০ আগস্ট একযোগে ২৫ জেলার জেলা প্রশাসককে (ডিসি) প্রত্যাহার করা হয়। কিন্তু মাঠ প্রশাসনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে কর্মকর্তাদের সরানোর সিদ্ধান্ত হয় নতুন ফিটলিস্ট না করেই। এমনিতেই সরকার পতনের পর কোনো কোনো জেলা থেকে ডিসিরা স্বেচ্ছায় চলে এসেছিলেন। প্রত্যাহারের আদেশ জারির পর যারা কাজ করছিলেন তারাও আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। কোনো কোনো জেলায় কাজ-কর্মে নামে স্থবিরতা।
বন্যাকবলিত জেলায় ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম ব্যাহত হয় বলেও অভিযোগ ওঠে। পরে ডিসি ফিটলিস্ট করে ২০ দিন পর ১৯ সেপ্টেম্বর এসব জেলায় ডিসি নিয়োগ দেওয়া হয়। পরের দিন ১০ সেপ্টেম্বর ৩৪ জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ দেওয়া হয়। দুইদিনে ৫৯ জেলায় নতুন জেলা প্রশাসক নিয়োগ দেওয়াকে কেন্দ্র করে ‘বঞ্চিত’ কর্মকর্তাদের মধ্যে চরম অসন্তোষ দেখা দিলে প্রতিবাদের মুখে ১১ সেপ্টেম্বর ডিসি হিসেবে ৯ কর্মকর্তার নিয়োগ বাতিল করা হয়। ওইদিন লক্ষ্মীপুর, জয়পুরহাট, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, শরীয়তপুর, দিনাজপুর ও রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসকের নিয়োগ বাতিল করা হয়।
বছরটির শুরুতে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মধ্যে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ আসতে থাকে। আওয়ামী আমলে প্রতিনিয়ত আসতে থাকে কমকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি বা স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ। সাত মাস সময় পর্যন্ত প্রায় এক হাজার কর্মকর্তার নামে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া যায়। এর মধ্যে ১০ জন সহকারী সচিব, আটজন সিনিয়র সহকারী সচিব, সাতজন উপসচিব, একজন যুগ্ম সচিব ও একজন অতিরিক্ত সচিবের অনিয়ম-দুর্নীতি তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় সে সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় অনিয়ম করায় মো. রাকিবুজ্জামানের বেতন কমানো হয়েছে। তাকে শাস্তি দিয়ে গত বছর ১৬ মার্চ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এসি ল্যান্ড থাকার সময় যমুনেশ্বরী নদীর বালু উত্তোলনে একজনের কাছ থেকে অবৈধ সুবিধা নেওয়ায় দুই বছরের জন্য বেতন গ্রেডের নিম্নতম ধাপে অবনমনের শাস্তি দেওয়া হয় তাকে।
অবসরে যাওয়া কানুনগোর আইডি ব্যবহার করে নিয়মবহির্ভূতভাবে সাতটি নামজারি মামলা অনুমোদন করেন বগুড়া সদরের সাবেক সহকারী কমিশনার-ভূমি (এসি ল্যান্ড) বীর আমির হামজা। নামজারি মামলা অনুমোদনের পর সৃষ্ট নামজারি খতিয়ানে ওই কানুনগোর স্বাক্ষরও ব্যবহার করেছেন তিনি। এই গুরুতর অনিয়মে লঘুদ- হিসেবে গত ৯ এপ্রিল আমির হামজার বেতন কমানো হয়েছে।
পদ্মা সেতু প্রকল্পে সরকারি ১ নম্বর খাস খতিয়ানের জমি বেআইনিভাবে অধিগ্রহণ দেখিয়ে প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তখনকার ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা প্রমথ রঞ্জন ঘটকের বিরুদ্ধে। বড় এই জালিয়াতির ঘটনায় গত ৪ এপ্রিল তাকে লঘুদ- দেওয়া হয়েছে। সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে সহকারী সচিব পদে তার পদাবনতি করে প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
দুমকী উপজেলার সাবেক ইউএনও আল ইমরান নিলাম ডাকের মাধ্যমে প্রায় এক কোটি ২০ লাখ টাকার বার্জ ১০ লাখ টাকায় বিক্রি করেন। ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে তার বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি এক বছর বন্ধ রেখে গত ৫ মার্চ প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমাম আল রাজী টুলুর বিরুদ্ধে গত ২০ মার্চ রাশেদা খানম নামের বৃদ্ধ এক নারীকে নিজ কার্যালয়ে পাঁচ ঘণ্টা আটকে রাখার অভিযোগ ওঠে। উচ্ছেদ অভিযানকে কেন্দ্র করে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় রাশেদার ছেলেকে আটক করতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে রাশেদাকে আটক করে আনা হয়। পরে জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম জানিয়েছিলেন, অবৈধ দখল উচ্ছেদ করতে গেলে ইউএনওর গাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়। হামলার পেছনে ওই নারীর ইন্ধন ছিল। তাই তাকে আটক করা হয়েছিল। কিন্তু মানবিক কারণে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
গত ১৪ মার্চ খবর সংগ্রহ করতে গেলে পাঁচ সাংবাদিককে নিজ কার্যালয়ে আটকে রেখে হুমকি দেন লালমনিরহাট সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবদুল্লাহ-আল-নোমান। পরে খবর পেয়ে ওই জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) টি এম এ মমিন সেখানে গিয়ে সাংবাদিকদের মুক্ত করেন। অবশ্য তার পরদিন আবদুল্লাহ নোমানকে ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলায় বদলি করা হয়।
গত ৮ মার্চ শেরপুরের নকলায় ইউএনও কার্যালয়ে তথ্য চাইতে গেলে স্থানীয় এক সাংবাদিককে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অসদাচরণের অভিযোগে ছয় মাসের কারাদ- দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। অভিযোগ ওঠে, তথ্য চাওয়ায় ওই সাংবাদিকের ওপর ক্ষুব্ধ হন ইউএনও সাদিয়া উম্মুল বানিন। পরে অবশ্য ওই সাংবাদিক জামিনে মুক্তি পান। এদিকে তথ্য কমিশন ঘটনার তদন্তে নামে। তথ্য প্রদানে অসহযোগিতা এবং তথ্য অধিকার আইনের প্রয়োগকে বাধাগ্রস্ত করায় ইউএনওর বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তথ্য কমিশন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করেছে।
গত ১২ মার্চ চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে গিয়ে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সেখানকার একজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে তর্কে জড়ান। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ওই ব্যবসায়ীর কাগজপত্র দেখতে চান। তখন ব্যবসায়ী বলেন, ‘হোল্ড অন’। শব্দটি ভালোভাবে নেননি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। এ ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়।