মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ৩০ পৌষ ১৪৩১

কোটা নিয়ে রায়ে সব কিছু পাল্টে যায়

বিকাশ দত্ত

প্রকাশিত: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৮ পিএম

শেয়ার

কোটা নিয়ে রায়ে সব কিছু পাল্টে যায়
কোটা নিয়ে রায়ে সব কিছু পাল্টে যায়

জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসে। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর পরই সবার দৃষ্টি ছিল বিচার অঙ্গনের দিকে। ২০২৪ সালে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাসহ কোটা পদ্ধতি বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট। এ রায় কেন্দ্র করে শুরু হয়  বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন। কোটা বিরোধী আন্দোলন এক পর্যায়ে এক দফায় পরিণত হয়। শেষ পর্যায়ে শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটে। আদালতের এক রায়ের কারণেই সব কিছু পাল্টে যায়।

এই সময়ে আন্দোলনের মুখে তৎকালীন প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের ৬ বিচারপতি পদত্যাগ করেন। বিদায়ী বছরে মানুষের দৃষ্টি ছিল আইন মন্ত্রণালয় ও আদালতের দিকে। এই সময়ে উচ্চ আদালত থেকে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর রায় এসেছে। আইন অঙ্গনে বড় ধরনের রদবদল হয়েছে। এ সব মিলিয়ে ২০২৪ সাল আইন অঙ্গনে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। 
এই সময়ে বিচারপতিদের অপসারণে জুডিসিয়াল কাউন্সিল ফিরে এসেছে। দীর্ঘ ১৩ বছর পর আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারে ফিরছে। জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত ও খালাসের আদেশ, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদ-প্রাপ্ত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ সব আসামি খালাস, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় মৃত্যুদ-প্রাপ্ত লুৎফুজ্জামান বাবরসহ সব আসামিকে খালাস দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া ২০২৪ সালেই উচ্চ আদালতের ১২ বিচারপতিকে ছুটিতে পাঠান প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ। চলতি বছরে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানসহ আপিল বিভাগের ৬ বিচারপতির পদত্যাগ ও প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদসহ আপিল বিভাগে ৫ বিচারপতি ও হাইকোর্ট বিভাগে ২৩ বিচারপতি নিয়োগ। এ ছাড়া চাঞ্চল্যকর বেশ কিছু রায় ও আদেশের কারণে আদালত ছিল সরগরম।

এ ছাড়া এ সময়ে আইন মন্ত্রণালয় থেকে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগে ৫ জন বিচারপতি, হাইকোর্ট বিভাগে ২৩ জন বিচারপতি এবং অধঃস্তন আদালতে ১০৯ জন বিচারক নিয়োগে সাচিবিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ইতোমধ্যে বাংলাদেশের ৬১টি জেলায় ৪ হাজার ৩০০ জন আইন কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসে ২৩৯ জন আইন কর্মকর্তা তথা সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ও অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
কোটা নিয়ে হাইকোর্টের রায় ॥ ২০২৪ সালের ১৪ জুলাই প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাসহ কোটা পদ্ধতি বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন হাইকোর্ট। বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের বেঞ্চ ২৭ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন।

রায়ে বলা হয়, ২০১২ সালে করা এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের দেওয়া রায় ও আদেশ, ২০১৩ সালের লিভ টু আপিলের পরিপেক্ষিতে আপিল বিভাগের তা বহাল ও সংশোধিত আদেশ এবং ২০১১ সালের ১৬ জানুয়ারির অফিস আদেশের (মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতি-নাতনির কোটা) আলোকে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতি-নাতনিদের জন্য কোটা পুনর্বহাল করতে সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হলো। একইসঙ্গে জেলা, নারী, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, উপজাতি-ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য কোটাসহ, যদি অন্যান্য থাকে, কোটা বজায় রাখতে হবে। এ বিষয়ে যত দ্রুত সম্ভব আদেশ পাওয়ার তিন মাসের মধ্যে পরিপত্র জারি করতে নির্দেশ দেওয়া হলো। 
আপিল বিভাগের রায় ॥ সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা বহাল রেখে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বাতিল করেছেন আপিল বিভাগ। সরকারি চাকরিতে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ ৯৩ ভাগ, মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তানগণের জন্য ৫ ভাগ, ক্ষ্রদ্র নৃ-গোষ্ঠী ১ ভাগ এবং প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১ ভাগ নির্ধারণ করা হয়েছে। অত্র নির্দেশনা ও আদেশ প্রদান সত্ত্বেও সরকার প্রয়োজন ও সার্বিক বিবেচনায় এ আদালত কর্তৃক নির্ধারিত কোটা বাতিল, সংশোধন বা সংস্কার করতে পারবে।

রায়ে সরকারকে অনতিবিলম্বে গেজেট বা প্রজ্ঞাপন জারির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ২১ জুলাই প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে সাত সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, শিক্ষাথীরা আগামীদিনের ভবিষ্যত এ দেশের বিচার বিভাগ, নির্বাহী বিভাগ ও আইন বিভাগ; এই তিন বিভাগের দায়িত্ব একদিন তাদেরকেই নিতে হবে। আমরা যারা বয়োবৃদ্ধ আমাদেরকে তাদের জন্য জায়গা ছেড়ে দিতে হবে।
রাস্তায় আন্দোলন করে রায় পরিবর্তন করা যায় না ॥ সরকারি চাকরিতে (৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড) মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রাখা সংক্রান্ত হাইকোর্টের দেওয়া রায়ে চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থা দেওয়ার পর প্রধান বিচারপতি শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন। বলেছেন, রাস্তায় আন্দোলন করে রায় পরিবর্তন করা যায় না।

আন্দোলন না করে ক্লাসে ফিরতে শিক্ষার্থীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। ১০ জুলাই প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বিভাগ শুনানি শেষে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রাখা সংক্রান্ত হাইকোর্টের দেওয়া রায়ে চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থা দেন। চার সপ্তাহ পর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হবে বলেও জানান আদালত।
বিক্ষোভের মুখে প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ॥ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে ১০ আগস্ট প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান পদত্যাগ করেন। একই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ৫ বিচারপতি পদত্যাগ করেন। ঐ দিন সন্ধ্যায় আইন মন্ত্রণালয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেন তারা। পদত্যাগকারী ৫ বিচারপতি হলেন, বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি আবু জাফর সিদ্দিকী, বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম ও বিচারপতি কাশেফা হোসেন। 
সৈয়দ রেফাত আহমেদের শপথ ॥ ১১ আগস্ট দেশের ২৫ তম প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ শপথ গ্রহণ করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বঙ্গভবনে তাকে শপথ পাঠ করান। শপথ গ্রহণের পরপরই নতুন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ সুপ্রিম কোর্টে নিজ দপ্তরে যান। এসময় উপস্থিত সবাইকে অভিনন্দন জানিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনাদের সবাইকে অভিনন্দন। আপনাদের সবাইকে গণজাগরণের অভিনন্দন। শপথ অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস উপস্থিত ছিলেন। 
আপিল বিভাগে ৪ বিচারপতি নিয়োগ ॥ ১২ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের চারজন বিচারপতিকে আপিল বিভাগের বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৫(১) অনুচ্ছেদে দেওয়া ক্ষমতাবলে এ নিয়োগ দিয়েছেন। বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী, বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল করিম, বিচারপতি মো. রেজাউল হক ও বিচারপতি এস এম এমদাদুল হক আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান।
হাইকোর্টে ২৩ বিচারপতি ॥ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে নতুন নিয়োগ পাওয়া ২৩ জন বিচারপতি শপথ নিয়েছেন। ৯ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ তাদের শপথবাক্য পাঠ করান। হাইকোর্ট বিভাগের এ ২৩ বিচারপতি হলেন, বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদার, বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেন, বিচারপতি মো. মনসুর আলম, বিচারপতি সৈয়দ জাহেদ মনসুর, বিচারপতি কে এম রাশেদুজ্জামান রাজা, বিচারপতি মো. যাবিদ হোসেন, বিচারপতি মুবিনা আসাফ, বিচারপতি কাজী ওয়ালিউল ইসলাম, বিচারপতি আইনুন নাহার, বিচারপতি মো. আবদুল মান্নান, বিচারপতি তামান্না রহমান, বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ, বিচারপতি মো. হামিদুর রহমান, বিচারপতি নাসরিন আক্তার, বিচারপতি সাথিকা হোসেন, বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ তাজরুল হোসেন, বিচারপতি মো. তৌফিক ইনাম, বিচারপতি ইউসুফ আব্দুল্লাহ সুমন, বিচারপতি শেখ তাহসিন আলী, বিচারপতি ফয়েজ আহমেদ, বিচারপতি মো. সগীর হোসেন, বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজী এবং বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরী।
জুডিসিয়াল কাউন্সিলে ফিরল ॥ বহুল আলোচিত বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদ সদস্যদের হাতে এনে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করা আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে করা রিভিউ আবেদন পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করেছেন আপিল বিভাগ। এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারপতি অপসারণের যে ক্ষমতা সংসদের হাতে ন্যস্ত করা হয়েছিল তা আবার সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের হাতে ফিরে এলো।

সংবিধানে এ-সংক্রান্ত ৯৬ অনুচ্ছেদ পুরোটাই পুনর্বহাল হলো। এ রায়ের ফলে দীর্ঘ আট বছর পর নিষ্পত্তি হলো আপিলের রিভিউ । ২০ অক্টোবর প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ৬ বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ এ রায় দেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। 
অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগ ॥ বাংলাদেশের ১৭তম অ্যাটর্নি জেনারেল হলেন মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান। ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট মহামান্য রাষ্ট্রপতি তাকে পদে নিয়োগ দেন। অ্যাটর্নি জেনারেল তার পদাধিকার বলে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সভাপতি নির্বাচিত হন। এর আগে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন পদত্যাগ করেন।

এ ছাড়া তিন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেলসহ অ্যাটনি কার্যালয়ের সকল ডেপুটি ও সহকারী অ্যার্টনি জেনারেল পদত্যাগ করেন। পরবর্তীতে এদের জায়গায় নতুন আইন কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে আগের প্রসিকিউটরবৃন্দ পদত্যাগ করেন। সেখানে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলামসহ নতুন প্রসিকিউটর নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। 
জামায়াতের নিবন্ধন ফিরে পেতে আপিল পুনরুজ্জীবিত ॥ ২২ অক্টোবর জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল বিষয়ে খারিজ হওয়া আপিল পুনরুজ্জীবিত করার আবেদন মঞ্জুর করেছেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন। এর ফলে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন ও দলীয় প্রতীক দাড়িপাল্লা ফিরে পেতে জামায়াতের আইনি লড়াই করার পথ খুলল। 
ফিরছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি ॥ সংবিধানের যে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলোপ করা হয়েছিল, তার কিছু অংশ বাতিল করেছেন হাইকোর্ট। ফলে ১৩ বছর পর ফিরেছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি। একই সঙ্গে পুনর্বহাল হয়েছে গণভোট। ১৭ ডিসেম্বর সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর সাংবিধানিক বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে করা পৃথক দুটি রিটের শুনানি শেষে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। এর আগে দীর্ঘ ২৩ কার্যদিবস শুনানি শেষে হাইকোর্ট রায়ের জন্য এ দিন ধার্য রেখেছিলেন।
গ্রেনেড হামলা মামলা ॥ ২০ বছর আগে বহুল আলোচিত একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদ-প্রাপ্ত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মৃত্যুদ-প্রাপ্ত সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ সব আসামিকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট। হাইকোর্ট তার পর্যবেক্ষণে বলেছে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় ২০১১ সালে আসামি মুফতি হান্নানের জবানবন্দির ভিত্তিতে সস্পূরক চার্জশিট দেওয়া হয়।

ওই চার্জশিটের ভিত্তিতে বিচারিক আদালত বিচার করেন, যা আইনগতভাবে গ্রহণযোগ্য ছিল না। এজন্য বিচারিক আদালতের রায়ও বেআইনি ও অবৈধ। শোনা সাক্ষীর ভিত্তিতে বিচারিক আদালত রায় দিয়েছিল। আসামিদের আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি করে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ ১ ডিসেম্বর  এ রায় দেয়। 
১০ ট্রাক মামলা ॥ চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র আটকের মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ছয়জনকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট। খালাস পাওয়া অন্যরা হলেন- এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, সিইউএফএলের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহসিন তালুকদার, সিইউএফএলের সাবেক মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) এনামুল হক, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব নুরুল আমিন ও জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামী।

একই সঙ্গে এছাড়া ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার সামরিক কমান্ডার পরেশ বড়ুয়ার মৃত্যুদ-ের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন দ- দেওয়া হয়েছে। ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদ- অনুমোদন) ও আসামিদের করা আপিলের ওপর শুনানি নিয়ে বুধবার হাইকোর্টের বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি নাসরিন আক্তারের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ ১৮ ডিসেম্বর এ রায় ঘোষণা করেন।
তিন বিচারপতির পদত্যাগ ॥ দীর্ঘ ৫ বছর ধরে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে বিচার কাজ থেকে বিরত রাখা হাইকোর্টের তিন বিচারপতি পদত্যাগ করেছেন। তারা হলেন বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হক। ১৯ নভেম্বর রাষ্ট্রপতি তাদের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত ॥ জুলাই-আগস্ট মাসের গণহত্যার মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য প্রসিকিউশনকে আরও দুই মাস সময় দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য নতুন তারিখ নির্ধারণ করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের কীভাবে পালালেন তার ব্যাখ্যা চেয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।

এর আগে ১৮ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল  বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে জুলাই-আগস্ট গণহত্যা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এক মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করার নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। পাশাপাশি ওবায়দুল কাদের সহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধেও একই সময়ে তদন্ত শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে গণহত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার আমলের ১৩ জন মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও আমলাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইবুনাল।

ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা ৪৬ জনের মধ্যে এই প্রথম মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ১৩ আসামিকে ট্রাইব্যুনালে তোলা হলো।
ট্রাইব্যুনালে যাদেরকে হাজির করা হয় তাদের মধ্যে ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী ফারুক খান, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, সাবেক বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, জাসদের সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাবেক বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার।

এছাড়া আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ও সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব জাহাঙ্গীর আলম। গত ১৭ অক্টোবর শেখ হাসিনাসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়। 
খালেদা জিয়ার মামলা বাতিল ॥ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দারুস সালাম থানায় দায়ের করা নাশকতার অভিযোগে করা আরও একটি মামলা বাতিল করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। অন্যদিকে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, একুশে টেলিভিশনের চেয়ারম্যান আব্দুস সালামসহ চার জনের বিরুদ্ধে দায়ের করা রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার কার্যক্রম বাতিল করে তাদের খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট। অন্য দুজন হলেন একুশে টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক মাহাথীর ফারুকী খান ও সিনিয়র প্রতিবেদক কনক সারওয়ার। বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ পৃথক পৃথকভাবে এ আদেশ দেন। 

খালেদা ও তারেকের মামলা বাতিল ॥ সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তার ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় করা মামলা বাতিল করে আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে বিএনপি নেতা শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানির বিরুদ্ধে ৬ মামলা বাতিল করেছেন আদালত। বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
খালেদা জিয়ার ১১ মামলা বতিল ॥ সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা রাষ্ট্রদ্রোহ ও নাশকতার অভিযোগে করা ১১টি মামলা বাতিল করেছেন হাইকোর্টে। বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ শুনানি শেষে ৩০ অক্টোবর এই রায় দেন। এ নিয়ে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা ২২টি মামলা বাতিল হয়েছে বলে আইনজীবীরা জানিয়েছেন। এখন তার বিরুদ্ধে নাইকো, বড়পুকুরিয়া মামলা রয়েছে। অপরদিকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার সাজা স্থগিত করেছেন রাষ্ট্রপতি। 
সাজা স্থগিত ॥ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১০ বছরের সাজার বিরুদ্ধে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার লিভ টু আপিল মঞ্জুর করেছেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে খালেদা জিয়াকে দেওয়া ১০ বছরের সাজা স্থগিত করেছেন আদালত। খালেদা জিয়ার আপিল শুনানি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সাজা স্থগিত থাকবে। পাশাপাশি খালেদা জিয়াকে আপিলের সারসংক্ষেপ দুই সপ্তাহের মধ্যে দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত। ১১ নভেম্বর আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
মামলা থেকে খালেদা জিয়াকে খালাস ॥ ২৭ নভেম্বর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে সাত বছরের দ- থেকে খালাস দেন হাইকোর্ট। সাজার বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার আপিল মঞ্জুর করে ওই দিন বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
জয় বাংলা স্লোগান স্থগিত ॥ ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ। ১০ ডিসেম্বর প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন চার সদস্য বিশিষ্ট আপিল বিভাগ এ স্থগিতাদেশ দেন। ২০২০ সালের ১০ মার্চ জয় বাংলাকে জাতীয় স্লোগান ঘোষণা করে রায় দেন বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ। 
১২ বিচারপতিকে ছুটিতে পাঠানো হয় ॥ ১৬ অক্টোবর দুর্নীতি ও শেখ হাসিনা সরকারের দোসর হিসেবে কাজ করার অভিযোগ ওঠায় ১২ বিচারপতিকে ছুটিতে পাঠান প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। এরপর থেকে তাদের আর হাইকোর্টের বেঞ্চে বিচার কাজ পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। সেই ১২ বিচারপতি হলেন বিচারপতি নাইমা হায়দার, বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ, বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাস, বিচারপতি মোহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার, বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামান, বিচারপতি আতাউর রহমান খান, বিচারপতি শাহেদ নূর উদ্দিন, বিচারপতি মো. আক্তারুজ্জামান, বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলাম, বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসেন দোলন, বিচারপতি খিজির হায়াত ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামান।
কয়েকজন বিচারপতির বিরুদ্ধে তদন্ত ॥ বেঞ্চ না পাওয়া ১২ বিচারপতির মধ্যে কয়েকজন বিচারকের আচরণের বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্তের অনুমোদন দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। বঙ্গভবন থেকে এ সংক্রান্ত চিঠি সুপ্রিম কোর্টে পৌঁছেছে। ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে এখন কয়েকজন বিচারপতির বিরুদ্ধে তদন্ত করবে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল। ২২ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
গত ১৫ ডিসেম্বর বেঞ্চ না পাওয়া ১২ বিচারপতির মধ্যে বেশ কয়েকজন বিচারকের বিষয়ে তথ্য রাষ্ট্রপতির নিকট পাঠানো হয়। প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল এসব বিচারকের আচরণের বিষয়ে প্রাথমিক অনুসন্ধান করে সে সংক্রান্ত প্রতিবেদন রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠান।
আইন উপদেষ্টা যা বললেন ॥ গত ১৯ নভেম্বর আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল অন্তর্বর্তী সরকারের আইন মন্ত্রণালয়ের ১০০ দিন পূর্তি উপলক্ষে সচিবালয়ের নিজ কার্যালয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, হয়রানিমূলক মামলা নিয়ে সরকার বিব্রত। হয়রানিমূলক মামলা নিয়ে নানান রকম প্রতিকার ব্যবস্থার কথা চিন্তা করেছি। তিনি বলেন, সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩ বাতিলক্রমে কম্পিউটার সম্পর্কিত অপরাধগুলো প্রতিরোধের জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে নতুন সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ,২০২৪ প্রণয়নের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।

সাইবার নিরাপত্তা আইন রহিত হলে উক্ত আইনের অধীনে দায়েরকৃত সব স্পিচ-অফেন্সের মামলা প্রত্যাহার করা হবে উল্লেখ করে আসিফ নজরুল বলেন, অংশীজনের সঙ্গে পরামর্শ করে এই আইন প্রত্যাহারে আমরা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়কে সহায়তা করেছি। তবে হ্যাকিং বা কম্পিউটার অপরাধ সংক্রান্ত মামলাগুলো চলমান থাকবে বলেও জানান তিনি।
আইন উপদেষ্টা জানান, এই কদিনে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগে ৫ জন বিচারপতি, হাইকোর্ট বিভাগে ২৩ জন বিচারপতি এবং অধঃস্তন আদালতে ১০৯ জন বিচারক নিয়োগে সাচিবিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ইতোমধ্যে বাংলাদেশের ৬১টি জেলায় ৪ হাজার ৩০০ জন আইন কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর ফলে দ্রুততম সময়ে সব রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, এত বেশি সংখ্যক নিয়োগ বাংলাদেশে এর আগে ঘটেনি।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশে (বিজিবি) বিস্ফোরক মামলা পরিচালনার জন্য ২০ জন স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠনে সহায়তা করেছে আইন মন্ত্রণালয়। চিফ প্রসিকিউটরসহ ১১ জন প্রসিকিউটরকে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। 
তাছাড়া অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসে ২৩৯ জন আইন কর্মকর্তা তথা সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ও অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বিগত সরকারের আমলে এবং গত জুলাই-আগস্ট মাসে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক মানদ- নিশ্চিতের লক্ষ্যে রোম স্ট্যাটিউট এবং আন্তর্জাতিক ও জাতীয় বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের সুপারিশের আলোকে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ এর সংশোধনের খসড়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলে জানান আইন উপদেষ্টা। এই আইন সংশোধনী অধ্যাদেশ বুধবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে তোলা হবে বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, অধ্যাদেশটি পাস হলে সে অনুযায়ী কার্যক্রম শুরু হবে। 
উপদেষ্টা জানান, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগের বিচারপতি নিয়োগ আইনের খসড়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আশা করছি, নতুন আইনের মাধ্যমেই পরবর্তী বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হবে। তিনি বলেন, অধঃস্তন আদালতের বিচারক, রেজিস্ট্রেশন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা এবং আইন মন্ত্রণালয় ও এর অধীন দপ্তর-সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব সংগ্রহ করা হয়েছে। লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের মাধ্যমে বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪ এবং জাতির পিতার পরিবার-সদস্যগণের নিরাপত্তা (রহিতকরণ) অধ্যাদেশ, ২০২৪ সহ মোট ১০টি অধ্যাদেশ প্রণয়নে ভেটিং সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া ৯৫টি প্রজ্ঞাপন, ৩৩টি বৈদেশিক চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক ভেটিং করা হয়েছে। গুম বিরোধী আন্তর্জাতিক সনদ অনুসমর্থনে আইন মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করেছে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে  গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান ও গুমে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে সুপারিশ প্রণয়নের নিমিত্ত তদন্ত কমিশন গঠনে আইন ও বিচার বিভাগ প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করেছে। উক্ত কমিশনকেও আইন মন্ত্রণালয় সাচিবিক সহায়তা প্রদান করে যাচ্ছে।