‘ওপেনটি বায়োস্কোপ/নাইন টেন টেস্কোপ/সুলতানা বিবিয়ানা/সাহেব বাবুর বৈঠকখানা/সাহেব বলেছে যেতে/পান সুপারি খেতে/পানের আগায় মরিচবাটা/স্প্রিঙের চাবি আঁটা/যার নাম রেনুমালা/তাকে দেব মুক্তারমালা।’
চিরায়ত বাংলার এক অনুপম শ্লোকগাঁথা এই কাব্যিক পঙ্্ক্তিমালা যুগ যুগ ধরে বাংলার শিশু-কিশোর-কিশোরীদের মুখে অত্যন্ত চমৎকার আর শ্রুতিমধুর উচ্চারণে উচ্চারিত হয়ে আসছে। সে ইতিহাসের ইতিবৃত্তের প্রকৃত তথ্য আমরা কেউই অবগত নই। তদুপরি নন্দিত এদেশের শৈশবের খেলার এক প্রধান অনুষঙ্গ পঙ্ক্তিগুচ্ছের রয়েছে এক অবিনশ্বর সুচারু অবস্থান। শিশুতোষ এই ছড়াটি এদেশের গ্রাম বাংলার লাখো কোটি শিশু-কিশোর-কিশোরীর এক প্রাণের স্পন্দন হয়ে আছে অনাদিকাল ধরে।
শুধু এই খেলাই নয়। এদেশের গ্রাম বাংলায় রয়েছে এমন শত খেলাধূলার নানা প্রতিচ্ছবি। যা আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে। নগর জীবনের সঙ্গে ঐ সকল খেলাধুলার সম্পর্কই নেই। প্রজন্মের শিশু-কিশোর-কিশোরীরা জানেই না- এই খেলার প্রকৃত রূপ। খেলা তো দূরের কথা, তারা এইসব খেলার নামই জানে না। যদিও বা দু’একটা খেলা তারা চেনে বা জানে। কিন্তু তা তারা কখনো খেলার সুযোগ পেয়েছে বলে মনে হয় না। যে খেলাগুলো একসময় স্কুলে টিফিনের সময় কিংবা সকাল-বিকাল বাড়ির উঠোনে বা আঙিনায় খেলা হতো, তা আজ আর দেখাই মেলে না যেন। ডিজিটাল যুগের প্রজন্ম আজ মোবাইল, ইন্টারনেট গেমসহ নানা খেলার মধ্যেই থাকে ডুবে। এরা চেনেনা সেই চিরন্তন বাংলার আদি খেলার গল্প। যে খেলার কথা বড়রা বুঝি ভুলতে বসেছে।
কী গ্রাম, কী শহর। সর্বত্রই এখন মোবাইলের মনিটরে নিবদ্ধ সবার চোখ। সবাই যেনো খেলাধুলার পাশাপাশি, গল্প-উপন্যাস-কবিতা পড়ার কথাও ভুলতে বসেছে। যে খেলাগুলো অতীতের অতল গহিনে হারিয়ে যেতে বসেছে তার মধ্যে অন্যতম হলো কানামাছি, কুতকুত, চোরপুলিশ, ছোঁয়াছুঁয়ি, লুকোচুরি, সাতচারা, বৌচি, লাটিম, ঘুড়ি ওড়ানো, মার্বেল (গুলতি), গুলাইল দিয়ে পাখি তাড়ানো, ডাঙ্গুলি, তিন কাঠিতে আঠা লাগিয়ে পাখি শিকার, দড়ি খেলা (স্কিপিং), দাঁড়িয়াবাঁধা, হাডুডু, বায়োস্কোপ দেখা, ডুবসাঁতার, মোরগ লড়াই, জোরবেজোর, চুরিভাঙা, নই খেলা, কেস্লি লুকানো, ফুলটোকা, গোল্লাছুট, ষোলগুটি, বাঘ-বকরি, ধাপ্পা, কড়ি খেলা, চার আঙুল, সাতপাতা, কিঙ্বলসহ অনেক ধরনের খেলাই আজ আমাদের গ্রাম বাংলার কোথাও তেমন একটা খেলতে দেখা যায় না। শুধু মাত্র ক্রিকেট, ফুটবলেই রয়েছে শিশু-কিশোরদের আগ্রহ।
কিশোরীদের মধ্যে এক সময় যে খেলাগুলো ছিল জনপ্রিয়। যে খেলা খেলতে খেলতে সারা বাড়ি মুখর করে তুলতো। তারাও আজ সে খেলায় প্রতি অনাগ্রহী হয়ে পড়ছে। যা খুবই পীড়াদায়ক। তাই বলব- যান্ত্রিক জীবনযাপনের যুগে শিশুদের বাংলার এই চিরন্তন খেলার প্রতি আগ্রহী করে তোলার দায়িত্বটা অভিভাবকদের পালন করতে হবে। বিশেষ করে মায়েরাই বাঁচিয়ে রাখতে পারেন হারিয়ে যেতে বসা এই খেলাগুলোর অস্তিত্ব।
শিহাব