গুঠিয়া মসজিদ
শিখাকে নিয়ে যখন স্কুলে যেতাম তখন কিন্তু জানতাম না ও সংখ্যালঘু সস্প্রদায়ের। শিখার মা এসে মুড়ি ভেজে দিলে মুড়িগুলো দেখতে খুব সুন্দর হতো। তার এই পারদর্শীতার কারণে তাকে ভালো লাগতো। শিখাদের বাড়ীর সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় প্রায়ই ঢুকতাম। কারন বাড়িটি ছিল বেশ পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন আর মাটির ঘরটি সবসময়ই লিপে রাখতো। সবাই চিনতো বিজেনশীলের বাড়ি নামেই। একদিন শিখার বিয়ের নিমন্ত্রণ খেতে গিয়েছিলাম। সবকিছু বেশ উপভোগ করলাম। কোনো বিভেদ ছিল না। ওদের ধর্মের নাম হিন্দু আর আমাদের মুসলিম শুধু এটা জানার মধ্যেই ছিল সীমাবদ্ধ।
মাধ্যমিক স্কুলে সাথি, বানী ছাড়াও আরো অনেক হিন্দু ধর্মের মেয়ে ছিলো, কোনোদিন পার্থক্য খুঁজে পাই নি। শুধু দেখতাম ওরা ধর্ম ক্লাসে আলাদা পাঠ্যবই পড়তে অন্য ক্লাস রুমে যায়। এটা নিয়ে কারো ভাবনাও ছিল না। এগুলো ছিলো আমাদের চলাফেরায় সহজাত বৈশিষ্ট্য। পটুয়াখালীতে এক(বন্যা) বউদির কাছে কয়েকদিন ঘুমিয়েছিলাম। কারণ দাদা ঢাকায় গেলে সে একা বাসায় থাকতে ভয় পেত। পাশেই ছিলো আমার বোনের বাসা। তাই রাতে যেয়ে সকালে চলে আসতাম। যেদিন দাদা আসতেন এত মজা করে মুরগি রান্না করতেন সেই গরম গরম মাংসের জিরার ঘ্রান আহা! না খাইয়ে ছাড়তেন না। মোবাইলের যুগ না থাকায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। আমাদের বাড়ীতেও এসেছিলেন থাকলেন, খাওয়া-দাওয়া করলেন, ঘুমালেন কখনো আলাদা মনে হয় নি।
ঢাকেশ্বরী মন্দির।
সর্বশেষ ভার্সটিতে এসে কে হিন্দু, কে মুসলিম, কে খ্রিস্টান আর কে বৌদ্ধ জানতামই না। এখন ফেইসবুকের কারনে বিভিন্ন দিবস যখন ওরা উদযাপন করে তখন জানতে পারছি ওদের ধর্ম পরিচয়। আর অন্য দেশ থেকে দাদা ও দিদিরা এসেছেন আমাদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করতে। ভুল প্রচারণার মাধ্যমে এ দেশের সার্বভৌমত্বে আঘাত করার চেষ্টা। আমরা যখন সকল ধর্মের মানুষ একত্রিত হয়ে আপনাদের দিকে তিরস্কারের তীর ছুড়বো তখন অসাম্প্রদায়িক জাতি হিসেবে হবেন লজ্জিত। প্রতিবেশী দেশের মানুষ হয়েও কি জানেন না, আমাদের একই বাজারে বিক্রি হয় গরুর মাংস ও কাকড়া। ইসলাম ধর্মের সর্বোচ্চ অনুসারী ছেলেগুলো রাত জেগে মন্দির পাহাড়া দিতেও জানে। আর বিচ্ছিন্ন ঘটনা কেন্দ্র করে গুজব ছড়িয়ে মাতামাতি করছেন দাদারা। এর থেকে সহস্রগুণ আপনাদের দেশে দৃশ্যমান। এবার সেগুলোতে নজর দিন। এদেশে কোনো সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নেই, আছে নানা ধর্মের মানুষের বসবাস। আমাদের বড় পরিচয় আমরা সবাই বাংলাদেশী।
জাফরান