বিশ্বরঙ
এসো, এসো, এসো হে বৈশাখ। তাপসনিশ্বাসবায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে, বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক। যাক পুরাতন স্মৃতি, যাক ভুলে-যাওয়া গীতি, অশ্রুবাষ্প সুদূরে মিলাক...রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বর্ষবরণের কবিতার অংশ বিশেষ। আর মাত্র দুদিন পরেই একদিনের ব্যবধানে ঈদ এবং নববর্ষ ১৪৩১ আসবে হাতধরাধরি করে। সর্বত্র চলছে উৎসবমুখর আয়োজন। ঈদের আনন্দ মুসলিমদের মধ্যে বেশি ছড়ালেও বৈশাখী উৎসব ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলে মিলে উৎসবমুখর করে তোলে। বিশ্বজুড়ে এই দিনটি আনন্দের সঙ্গে পালন করেন কোটি কোটি বাঙালি। বর্ষবরণের দিনে ফ্যাশনপ্রেমী মানুষের সাজ-পোশাকে দেখা যায় ভিন্নমাত্রা।
রঙের ক্ষেত্রে বৈশাখ মানেই লাল-সাদা। অন্যান্য রং যে পরা যাবে না, এমন নয়। লাল-সাদার পাশাপাশি হলুদ, লেমন, পার্পেল, বাসন্তীর মতো রংও বেছে নিতে পারেন। হালকা রঙের শাড়ির সঙ্গে রঙিন কারুকাজে সজ্জিত ব্লাউজ আপনাকে করে তুলতে পারে ¯িœগ্ধ, লাবণ্যময়। বাঙালি সাজ মানেই তরুণ-তরুণীরা বেছে নেয় শাড়ি-পাঞ্জাবি। আধুনিক তরুণীদের অনেকেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন নান্দনিক সালোয়ার-কামিজ, কুর্তি, টপসে। সঙ্গে থাকে ফ্যাশনেবল বটম কালেকশন।
বৈশাখ মানেই মনের মধ্যে ভেসে ওঠে হাতে মুখোশ আর গালে রং মেখে চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রা। মেলায় ঘোরা, নগরজুড়ে চলা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নাগরদোলার কটকট শব্দ, ফুচকা, চটপটি আর মাটির সানকিতে নানা পদের ভর্তা ও ইলিশ-পান্তা। আর পহেলা বৈশাখের ঐতিহ্যময় সাজ-পোশাক বলতে প্রথমেই যেটা মাথায় আসে তা হলো, আটপৌরে করে পরা লালপাড়ের সাদা শাড়ি এবং পুরুষের জন্য লাল-সাদা মিশেলের ধুতি-পাঞ্জাবি।
যেহেতু চারদিকে তপ্ত আবহাওয়া, তাই বৈশাখী পোশাকে কাপড় হিসেবে বেছে নিন কটন, এন্ডিকটন, ভয়েল কিংবা লিনেনের মতো কাপড়। আর যে পোশাকই পরুন না কেন তা যেন হয় লাল-সাদা ও বিভিন্ন রঙে বর্ণিল। যারা স্কার্ট-টপ পরতে পছন্দ করেন, তারা এই দিনের জন্য বেছে নিতে পারেন লাল-সাদা রঙের সমন্বয়ে তৈরি স্কার্ট-টপ।
পহেলা বৈশাখে ধুতি-পাঞ্জাবি যে কোনো পুরুষের লুকে আনতে পারে বাঙালিয়ানা এবং বনেদিয়ানার ছোঁয়া। আর নববর্ষের জন্য বহু পুরুষই বেছে নেন লাল ধুতি আর সাদা পাঞ্জাবি। আবার সাদা ধুতির সঙ্গে পরা যেতে পারে লালের কাজ করা সাদা পাঞ্জাবিও। অনেকেই ধুতি পরতে ঠিক স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না, তারা এই দিনটায় বেছে নিতে পারেন লাল পাঞ্জাবি আর সাদা পায়জামা। আবার এর উল্টো কম্বিনেশন অর্থাৎ লাল পায়জামার সঙ্গে সাদা পাঞ্জাবিও ট্রাই করা যেতে পারে।
অনেক পুরুষই জিনসের সঙ্গে পাঞ্জাবি পরতে পছন্দ করেন। সে ক্ষেত্রে জিনসের সঙ্গে সাদা পাঞ্জাবি বেশ মানাবে। এই পোশাক পুরুষদের লুকে আলাদা মাত্রা যোগ করবে। নারীদের পোশাকের পাশাপাশি পুরুষের পোশাকেও রঙের ক্ষেত্রে রাখতে পারেন বৈচিত্র্যের ছোঁয়া। পাঞ্জাবির বদলে ফতুয়া পরেও পালন করতে পারেন এবারের বৈশাখ। একরঙা পোশাক পরতে চাইলে বেছে নিতে পারেন নেভি ব্লু, বেগুনি, খয়েরি, বাদামি, স্কারলেট, টারকোয়াইজ বা ফিরোজা রঙের পাঞ্জাবি।
মাল্টি কালারের প্রিন্টের পাঞ্জাবিও হালের ফ্যাশনে রয়েছে। পহেলা বৈশাখের পোশাকের নক্সার ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ সবাই বেছে নিতে পারেন নকশিকাঁথার কাজ, হ্যান্ডপেইন্টিং, ব্লক, হাতের কাজ ও অ্যাম্ব্রয়ডারির কাজ, যাতে আছে বাংলা ও বাঙালির চিরায়ত সংস্কৃতির আবহ। চলমান ফ্যাশনধারায় নববর্ষের ফ্যাশনে সমানভাবে জায়গা করে নিয়েছে পশ্চিমা পোশাক। তবে পহেলা বৈশাখের সাজে যে পোশাকই হোক, তাতে আলাদা মাত্রা যোগ করে সাদা-লালের মিশেল।
সাজ : বৈশাখের প্রথম প্রহরে শুভ্রতার আলো ছড়াতে নিজেকে সাজিয়ে তুলুন মুগ্ধতার আবেশে। এ ক্ষেত্রে প্রথমে মুখের মেকাপ করে নিতে হবে। সর্বপ্রথম মুখ ধুয়ে ওয়াটার বেসড ময়েশ্চারাইজার আর সানস্ক্রিন লাগিয়ে নিন। পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করুন যাতে ময়েশ্চারাইজার আর সানস্ক্রিনটা ত্বকে বসে যায়। এবার ত্বকের রঙের সঙ্গে মানানসই টিন্টেড ময়েশ্চারাইজার বা বেবি ক্রিম লাগিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।
প্রেসড পাউডার দিয়ে সেট করে দিন মেকআপ। একটু গ্লামারাস লুকের জন্য গালের হাড়ের ওপর খুব হালকা প্যাস্টেল গোলাপি ব্লাশঅন ডাস্ট করে নিতে পারেন। এরসঙ্গে কপালে ছোট্ট একটি টিপ পরলে বাঙালিয়ানা পূর্ণতা পায়। এখন গরম যেহেতু বেশি, তাই ভারি সাজ না দিয়ে হালকা সাজ দেওয়া ভালো। বৈশাখে শাড়ির সঙ্গে মাটির গহনা বেছে নিলে অকৃত্রিম ভাব প্রকাশ পায়।
মাটির মালা হতে হবে লম্বা। আবার কাঠ, রুপা, মুক্তা বা তামার মালাও পরতে পারেন। সম্পূর্ণ বাঙালিয়ানা রূপ ফুটিয়ে তুলতে পরতে পারেন ফুলের গহনা। সবশেষে বাঙালি নারীদের শাড়ির পাড়ের সঙ্গে মিলিয়ে দুই হাতভর্তি রেশমি চুড়ি সাজে এনে দেয় পূণর্তা। তবে খোঁপা বা বেণীতে ফুল লাগাতে ভুলবেন না যেন।
বসন্তকে বিদায় জানাতে এলো নববর্ষ ১৪৩১। প্রায়ই সন্ধ্যাবেলা এক পশলা ঝড়বৃষ্টি এসে ঠান্ডা করে দেয় চারপাশ, কিন্তু বাকি দিনটার পুরোটাই চড়া রোদ আর গরমের দাপট। তাই উৎসবমুখর এ সময়ে পরিপাটি পোশাক আর হালকা সাজের মাধ্যমে আপনি হয়ে উঠুন অনন্যা।