ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

aiub
aiub

এগিয়ে চলুন দেশের জন্য

ফরিদ হোসেন

প্রকাশিত: ২১:৩২, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩

এগিয়ে চলুন দেশের জন্য

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা

স্কুলকালে তাঁর স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হবেন। সেই স্বপ্ন অধরা থেকে গেল। কারণ তিনি অঙ্কে কাঁচা ছিলেন। তাই অষ্টম শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণিতে যখন পা রাখলেন তখন তাঁকে নিতে হলো মানবিক বিভাগ। বিজ্ঞানে আর যেতে পারলেন না। ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন ছেড়ে ভাবলেন শিক্ষাজীবন শেষে হবেন শিক্ষক। নিজের আহরিত জ্ঞান ছড়িয়ে দেবেন শিক্ষার্থীদের মাঝে। একজন আদর্শ শিক্ষাগুরু হওয়ার বাসনা নিয়েই পড়াশোনায় মনোনিবেশ করলেন। শেষ পর্যন্ত তা-ও হলো না। তিনি হয়ে গেলেন রাজনীতিবিদ।
যার কথা বলছি তিনি আর কেউ নন। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের একজন সফলতম রাজনীতিবিদ। পিতা জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের পর বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল ও জনপ্রিয় রাষ্ট্রনায়ক। এ বছর ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে তিনি অর্জন করবেন এক অনন্য কীর্তি : একনাগাড়ে পনেরো বছর দেশের প্রধানমন্ত্রী। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোটে যখন তাঁর দল আওয়ামী লীগ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হলো তখন তিনি হলেন- দ্বিতীয়বারের প্রধানমন্ত্রী। তারপর জয়ী হলেন- ২০১৪ ও ২০১৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে। আসছে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে আরেকটি সাধারণ নির্বাচন। তিনি ও তাঁর দল যে আসন্ন নির্বাচনেও জয়ী হবেন তা প্রায় সুনিশ্চিত। 
রাজনীতি তাঁর স্বপ্নের মধ্যে ছিল না বটে। তবে তিনি যে বঙ্গবন্ধুর কন্যা। টুঙ্গিপাড়ার নিভৃত গাঁয়ে প্রথম দৃষ্টি মেলে তিনি দেখেছেন একজন কর্মব্যস্ত রাজনীতিবিদ পিতাকে। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকদের বিতাড়িত করার আন্দোলনে তাঁর পিতা ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন স্কুলবেলা থেকেই। টুঙ্গিপাড়ার সেই ছোট্ট খোকা পরবর্তীতে সৃষ্টি করেছিলেন একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ : বাংলাদেশ। পাকিস্তানি কারাগারে বন্দি ছিলেন বাংলার মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস। ফিরে এসেছিলেন মুক্ত স্বদেশে মহানায়কের মহিমায়। 
এমন একজন পিতার জ্যেষ্ঠ সন্তান হয়ে শেখ হাসিনার পক্ষে রাজনীতি থেকে দূরে থাকা সম্ভব ছিল না। তিনি ছিলেনও না। আপন গ্রাম টুঙ্গিপাড়া থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষে পরিবারের সঙ্গে চলে এসেছিলেন রাজধানী ঢাকায়। ভর্তি হলেন আজিমপুর গার্লস স্কুলে। সেখানেই বিজ্ঞান বিভাগ ছেড়ে মানবিক বিভাগ। আজিমপুর গার্লস স্কুল পেরিয়ে ইডেন কলেজ। সময় তখন খুব উত্তাল। স্বৈরাচারী আইয়ুববিরোধী আন্দোলন তুঙ্গে। ১৯৬৬ সালের ছয় দফার আন্দোলন। শেখ মুজিব তখন বেশিরভাগ সময় কাটান জেলখানায়। মুক্তি যখন পান তা ক্ষণ সময়ের জন্য। সেই সময় তখন ব্যয় করেন মাঠে ময়দানে, দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। জনসভায় বক্তৃতা করেন।

ছয় দফা আন্দোলনে গতি সঞ্চার করেন। অগ্নিঝরানো ভাষণে বাংলার জনগণ মুগ্ধতা কাটিয়ে ক্ষোভে জ্বলে ওঠে। ‘তোমার নেতা, আমার নেতা শেখ মুজিব, শেখ মুজিব’ স্লোগানে কাঁপছে তখন পূর্ব বাংলা। পাকিস্তানি শাসকরা ইতোমধ্যে শেখ সাহেবের বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দিয়ে আন্দোলনে পানি ঢালতে চাইছে। এই মিথ্যা মামলায় জড়িয়েছে আরও অনেককে। শেখ হাসিনাও বসে নেই। মিছিলে যোগ দিচ্ছেন। নেতৃত্ব দিচ্ছেন। স্লোগান দিচ্ছেন। ‘তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা মেঘনা যমুনা।’ শেখ হাসিনা ১৯৬৬ সালে ইডেন কলেজের ছাত্রী সংসদের ভিপি বা সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত তিনি এই পদে ছিলেন।

১৯৬৮ সালে তরুণ পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে বিয়ে হলো তার। বিয়ের পর ছাত্র রাজনীতিতে কিছুটা ভাটা পড়েছিল। তবে রাজনীতি থেকে তিনি কখনোই দূরে থাকতে পারেননি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করার সময়ও তিনি ছাত্রলীগের সক্রিয় নেতা ছিলেন। তবুও বিয়ে করার পর তিনি সংসার জীবনে ব্যস্ত হন। কোনো একদিন তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব প্রদানকারী দেশের প্রাচীন দল আওয়ামী লীগের সভাপতি হবেন তা তিনি চিন্তা করেননি। 
বাংলাদেশের এক চরম বেদনাবিধূর পরিস্থিতিতে তিনি আওয়ামী লীগের হাল ধরলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হলো। শেখ হাসিনা ও ছোট বোন শেখ রেহানা বেঁচে গেলেন ভাগ্যক্রমে। দুই বোন তখন জার্মানিতে। শেখ হাসিনা গিয়েছিলেন স্বামী ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে ছুটি কাটাতে। সঙ্গে ছিলেন ছোট বোন। পঁচাত্তর সালের নির্মম ঘটনাবলির পর আওয়ামী লীগের বড্ড দুরবস্থা। নেতৃত্বের অভ্যন্তরীণ কোন্দল। তখন দেশে চলছে জেনারেল জিয়াউর রহমানের স্বৈরশাসন। শেখ হাসিনা তখনো নির্বাসনে, ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে। ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগ ঢাকার ইডেন হোটেলে সম্মেলন করে।

সেখানেই শেখ হাসিনাকে তার অনুপস্থিতিতে দল তাকে সর্বসম্মত সভাপতি নির্বাচন করেন। হাসিনা তা গ্রহণ করলেন। ১৯৮১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি তিনি দলের সভাপতি নির্বাচিত হন। আর স্বৈরশাসক জিয়ার চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে তিনি দেশে ফিরে আসেন একই সালের ১৭ মে। সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেত্রী। সাংবাদিক হিসেবে পেশাগত কারণে তাঁকে খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। তাঁর অবিরাম সংগ্রামের সঙ্গে তাই আমরা পরিচিত। অনেক ঘটনার সাক্ষী। 
তথাকথিত তলাবিহীন ঝুড়ি বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলার কাজ শুরু করেছিলেন। তিনি শুরু করলেও ঘাতকরা তাকে শেষ করতে দেয়নি। সেই অসমাপ্ত কাজ শেষ করার দায়িত্ব নিয়েছেন তারই কন্যা শেখ হাসিনা। তিনি এখন শুধু একজন সফল জাতীয় নেতাই নন। তিনি এখন বিশ্বনেতা। দেশের মানুষ তাকে ভালোবাসেন। বিশ্ব তাকে সম্মান করে। চার দশকের সক্রিয় রাজনীতির কর্মযজ্ঞে মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন বারবার, উনিশবার তাকে হত্যা প্রচেষ্টা হয়েছে, জেল খেটেছেন। রোদ-বৃষ্টিতে তিনি আন্দোলন করেছেন স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে, গণতন্ত্রের জন্য। আজও লড়াই করে যাচ্ছেন গণতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য। এই লড়াকু নেতার প্রতি জন্মদিনের শুভেচ্ছা।  
    লেখক : সাংবাদিক

×