ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

বিশেষ সংখ্যা

একাত্তরের দেশান্তরী

একাত্তরের দেশান্তরী

ডিসেম্বর মাসের কোন একদিন। মেলবোর্নেরই এক বাড়িতে দাওয়াত। খাওয়া-দাওয়া শেষে কয়েকজন নারীর আলাপে, গল্পে মুক্তিযুদ্ধের কথা উঠলো। কেউ কেউ তাদের ছোটবেলায় ঘটে যাওয়া মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোর টুকটাক। স্মৃতি নাড়াচাড়া করছিলেন। কেউ বা মুক্তিযুদ্ধের ওপর দেখা কোন সিনেমা অথবা পড়া কোন বইয়ের কথা বলে যাচ্ছিলেন। একজন একটাও কথা না বলে চুপচাপ বসেছিলেন। অন্য কেউ তাকে উদ্দেশ করে বললেন -আপনি কিছু। বললেন নাতো? -আমি তো তখন স্কুলে; তেমন কিছুই জানি না আরেকজন রসিকতা করে বললেন হযরত মোহম্মদ (সঃ), গ্যালেলিও, সক্রেটিস, শেক্সপিয়ার তারা আমাদের জন্মেরও আগে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। তাদের কথাও কমবেশি আমরা জানি, তাই না? এই আলাপচারিতা কানে যাওয়াতে মনে হলো যে মুক্তিযুদ্ধের কথা জানার জন্য বয়স লাগে না। নিজে যুদ্ধে যেতে পারেনি, বয়স কম ছিল তাই কোন অভিজ্ঞতা অর্জন হয়নি। তাই বলে নিজের দেশের মুক্তিযুদ্ধকে জানবে না এটা কেমন কথা? আমাদের মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোর কথা নানা বইয়ে নানা ভাষায় বলা হয়েছে, এখনও হচ্ছে। আপামর দেশবাসীর সেই ভয়ঙ্করের মুখোমুখি কাটানো নয়মাস ছিল যাতনা আর বিষাদের। তার কতটুকুই বা সবার জানা হয়েছে বা কতটুকুই। বা সবাইকে জানানো হয়েছে। একেক জনের এক এক রকম দুঃস্বপ্ন আর কষ্টের মাঝে কাটানো কাল। অনেকরই জানতে মন চায় কার কেমন কেটেছে নয়মাস। কেউ চাইলে জানতেও পারে। যুদ্ধের সময়ে মার্কিন কবি আলেক্স গিন্সবার্গের ভারতের শরণার্থী শিবির ভ্রমণ শেষে লেখা কবিতা ‘এ্যালং দ্য যশোর রোড’, মৌসুমী ভৌমিকের গাওয়া গান আছে ওই কবিতা নিয়েই, তারপর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ রুমির মা জাহানারা ইমামের ‘একাত্তরের দিনগুলি’, শব্দসৈনিক এম.আর. আখতার মকুলের ‘আমি বিজয় দেখেছি’ আরও কত কত কথা ও গাঁথা আমাদের পরিচয় করায় নিষ্ঠুর ও নির্মম বাস্তবতার সাথে। পশ্চিমা পাকিদের দূরভিসন্ধিমূলক মনগড়া ধারণা আমরা বাঙালীরা যথেষ্ট মুসলমান না। তাই। ধর্ম রক্ষার বাহানায় আমাদের শায়েস্তা করতে ওরা ঝাঁপিয়ে পড়ে ১৯৭১ সালের কালো রাত্রে। তারিখটা ছিল ২৬ মার্চ। ওইদিন সপ্তাহের কি বার ছিল সাধারণ মানুষের ততটা মনে রাখার কথা নয়। তবে সন, মাস, তারিখ জানা ইতিহাসের দাবি তাই ইতিহাসবিদ জানেন অবশ্যই। তারপরের দিন থেকেই দেশের মানুষ যে যার কর্তব্য ঠিক করে ফেলে।। মায়ের ছেলেরা যুদ্ধে যায় মুক্তি ছিনিয়ে আনতে। এদিকে অধিকৃত দেশে ঘরে ঘরে মায়েরা ছোটদের নিয়ে আল্লাহর কাছে দিবারাত্রি দেশের জয়, স্বস্থি ও শান্তি চেয়ে প্রার্থনা শুরু করেন। মানুষের মুখে শুনে, বইপত্র পড়ে ওই দিনগুলোর কথা বিস্তারিত জানার আগ্রহ অনেকের মতো আমারও। ইচ্ছা দুরন্ত ছিল দেখে একজন পরবাসেও ভালবেসে একটা বই পড়তে দিয়েছিলেন আমাকে। বইটি একজন ইতিহাসবিদের রচনা। বইটিতে ২৬ মার্চ বৃহস্পতিবার ছিল বলে জানতে পারি। পরদিন ২৭ মার্চ ছিল শুক্রবার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের শিক্ষক, গবেষক ও স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস প্রণয়নের জন্য গঠিত প্রামান্যকরণ কমিটির সভাপতি ডঃ মফিজুল্লাহ কবীর তার বইতে লিখেছেন ওই শুক্রবারে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় থেকেও ঢাকার মসজিদ থেকে জুম্মার আজান ধ্বনি শুনতে পায়নি মানুষ। কি পরিহাস! ধর্ম রক্ষার নামে ওরা আজানকেই স্তব্ধ করে দিয়েছিল ওই শুক্রবারে। কারফিউ জারি ছিল শহরে। তাতে মুসল্লীদের জুম্মার নামাজে যাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। পুরো বইতে চাক্ষুষ দৃশ্যগুলো বিবৃত হয়েছে নিখুঁতভাবে। সততার সাথে নিজস্ব ভীতিকর অনুভূতিও তুলে ধরেছেন ইতিহাসবিদ শিক্ষক। দুঃসহ দুর্গতির দিনগুলোতে কিছু লিখবেন বলে একটি চটি খাতা কিনে এনেছিলেন। তার মলাটে বাংলাদেশের জনক শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি ও তার দলের প্রতীক নৌকার ছবি ছিল।। লেখকের। ভীত স্ত্রী তাকে মলাটটি ছিঁড়ে ফেলতে অনুরোধ করেন। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অনবরত পাক আর্মি টহল দিয়ে যাচ্ছিল। ওই দিনগুলোতে আল্লাহর কাছে অধ্যাপক নিজস্ব বাক্যাবলী দিয়ে প্রতিরাতে একটি প্রার্থনা করতেন। প্রতি রাতেই তিনি নিজস্ব বন্দনাটি বাংলায় লিখতেন আবার ছিঁড়েও ফেলতেন। কারণ তখন যে স্বদেশেও মানুষ পরবাসী। তখন দেশ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে হানাদার পাকবাহিনী। স্বাধীনতা নাই বাক্যেরও। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের শরণার্থী শিবিরেও দেশ থেকে পলাতক অনেক স্বদেশী ভাইবোনেরা অসহনীয় কাল কাটাচ্ছেন, যোদ্ধারাতো আছেনই। দেশের ভিতরেও মানুষ অস্বাভাবিক রকম স্বাভাবিকতার ভেক ধরে জীবন চালাচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয় খোলা ছাত্র নাই, স্কুল-কলেজও খোলা তাতেও নামমাত্র ছাত্র। পাকবাহিনীর সদম্ভ চেষ্টা সব ঠিকঠাক, সব স্বাভাবিক দেখানো আর মুক্তির জন্য মরিয়া মানুষের আপ্রাণ প্রয়াস ওদের সবকিছু ভণ্ডুল করে দেয়া। ওই নয়মাসের পরবাসে সাবালক, নাবালক, জ্যেষ্ঠ, কনিষ্ঠ সবাই এতো দীর্ঘ সময় জায়নামাজে বসে থেকেছেন, তাসবীহ্ জপেছেন হিসাব করে বের করা যাবে না। প্রার্থনা একটাই মুক্তিযোদ্ধার জয়, দেশের মুক্তি, মানুষের স্বাধীনতা। ডঃ মফিজুল্লাহ কবীর তার বইতে (ঊীঢ়বৎরবহপব ড়ভ ধহ ঊীরষব ধঃ ঐড়সব : খরভব রহ ঙপপঁঢ়রবফ ইধহমষধফবংয)। লিখছেন যে ২৬ মার্চের পরের বৃহস্পতিবার পাকবাহিনী ঢাকার কাছে জিঞ্জিরায় অভিযান চালায়। এখানে পুরো বইয়ের কাহিনী বর্ণনা নয় লেখকের কিছু কিছু পর্যবেক্ষণ উল্লেখ করাই উদ্দেশ্য। তাই লেখকের ভাষ্য মুসলমানদের কাছে পবিত্র দিনগুলোকেই তারা হত্যা-ধ্বংস ও নির্যাতন চালানোর জন্য বেছে নিতে দ্বিধা করেনি। তথ্যে ঋদ্ধ বইয়ে নিজভূমে দমবন্ধ করা পরিবেশে ইতিহাসবিদের অনুভূতিও পাঠককে নাড়া দিয়ে যায়। কিছু ছবি রয়েছে বইটিতে যা থেকে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি নারী-পুরুষ নির্বিশেষে জনগণের নিষ্ঠা-নিবেদন যেমন বোঝা যায় তেমনি আন্দাজ করা যায় আমাদের প্রতি পশ্চিমা পাকিদের নিষ্ঠুরতার মাত্রা। আলবদর, রাজাকাররা যে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছিল তাদের বেশি অংশ ছিলেন শিক্ষক। তাদের বিষয়ে তথ্যগুলো নিখুঁতভাবে আছে এই ইতিহাসবিদের লেখাতে। এবার অন্য ঘটনা বর্ণিত হচ্ছে তাও মুক্তিযুদ্ধেরই অংশ। বিদেশে বসেই শুনা। একজন স্কুল পড়ুয়া তার পরিবারের সাথে ভারতে শরণার্থী হিসেবে নয়মাস কাটিয়েছিলেন। তার বড়ভাই মুক্তিযুদ্ধে চলে গেছেন। পরিবার হুমকির মুখে এ কারনে সীমান্ত সংলগ্ন এলাকা থেকে তাদের গোটা পরিবার পালিয়ে ভারতে চলে যায়। এপারে তাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয় পাকিস্তানপন্থীরা আর ওপারেও ঘটলো করুণ ঘটনা। তার মায়ের মৃত্যু ঘটে শরণার্থী শিবিরেই। যুদ্ধ শেষে তারা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ ও ধ্বংসপ্রাপ্ত নিজ বাড়িতে ফিরে আসেন। মা ফিরলেন না সাথে তাই জীবন হলো অনেক কষ্টের। তারপরও নানা সমস্যার মাঝ দিয়ে মাতৃহীন ছেলেটি পড়াশুনা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার পেশায় যোগ দেয়। তবে তার মনে বরাবর জেগে ছিল ও আছে শরণার্থী শিবিরের দিনযাপনের কষ্ট ও শিবিরেই মাকে হারানোর দুঃখ। সবকিছু ঘটেছিল দেশের দুর্দিনের কারণে। মুক্তিযুদ্ধের ক্ষত বুকে নিয়ে জীবনযাপনকারী ওই মানুষটি বহুদিন পর একদিন ক্ষোভে ফেটে পড়লেন তারই বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বয়োজ্যেষ্ঠ ভাইয়ের ওপর। জ্যেষ্ঠ ভাই এমনিতে মানুষ নাকি মানুষ খারাপ না। তবে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তার কোন আগ্রহ বা আবেগ দেখা যেতো না। একদিন সেই ভাইয়ের এক মন্তব্য শুনে দুঃখ আর ক্রোধে ফেটে পড়লেন শরণার্থী শিবিরে মা হারানো লোকটি দৃঢ় কণ্ঠে বললেন -ভাই আপনাকে আপনার কথা উইথড্র করতেই হবে; সবাই মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতে গিয়েছিল ফায়দা আর সুবিধা লুটতে আপনার এই কথা একদম ঠিক নয়। বলতে হবে সবাই যায়নি, বলতে হবে। মতিয়ুরের পরিবার যায়নি। শেখ মতিয়ুর নামের সে শিক্ষক মেলবোর্নে বসে তার বিষাদময় এই অভিজ্ঞতা বর্ণনা করছিলেন যখন তার চোখে ছিল অসহনীয় দুঃখের ছায়া আর কণ্ঠে ছিল গভীর কান্না মাখানো ক্রোধ। এই সেই নয়মাসের ইতিহাস যার প্রতি পরতে পরতে গেঁথে আছে আবেগ অহঙ্কার, দুঃখ ও ভীতিকর অসংখ্য স্মৃতি। স্বদেশ থেকে বহুদূরে বাস করেও টের পাওয়া যায় তার রেশ।

বিশেষ সংখ্যা বিভাগের সব খবর

জনকণ্ঠ প্রতিষ্ঠাতা আতিকউল্লাহ খান মাসুদের জন্মবার্ষিকীতে দোয়া অনুষ্ঠিত

জনকণ্ঠ প্রতিষ্ঠাতা আতিকউল্লাহ খান মাসুদের জন্মবার্ষিকীতে দোয়া অনুষ্ঠিত

দৈনিক জনকণ্ঠের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আতিকউল্লাহ খান মাসুদের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বৃহস্পতিবার দোয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে।  বৃহস্পতিবার বিকেলে বনানী কবরস্থানে গ্লোব জনকণ্ঠ শিল্প পরিবারের পক্ষ থেকে মরহুমের কবর জিয়ারত করা হয়। কবর জিয়ারত করেন মরহুমের বড় ছেলে গ্লোব জনকণ্ঠ শিল্প পরিবারের প্রথম ভাইস চেয়ারম্যান মিশাল এ খানসহ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাগণ।  এ ছাড়া বাদ আছর জনকণ্ঠ ভবনে অবস্থিত মসজিদে আতিকউল্লাহ খান মাসুদের জন্য বিশেষ দোয়া করা হয়। জনকণ্ঠের বিভিন্ন বিভাগের কর্মীরা এই দোয়া অনুষ্ঠানে যোগ দেন।  বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও দৈনিক জনকণ্ঠের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক মোহাম্মদ আতিকউল্লাহ খান মাসুদ ১৯৫১ সালের ২৯ আগস্ট ভারতের বর্তমান মিজোরাম রাজ্যের লাংলী জেলার ডিমাগিরি নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মোহাম্মদ দবির উদ্দিন খান চাকরি করতেন ভারতীয় বন বিভাগে। চাকরিসূত্রে তিনি সপরিবারে থাকতেন ওখানে। তাদের পৈত্রিক বাড়ি মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং থানার মেদিনীম-ল গ্রামে।   আতিকউল্লাহ খান মাসুদ স্বাধীনতা যুদ্ধে ২নং সেক্টরে কমান্ডার হিসেবে সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধ করেন এবং অনেক বড় বড় অপারেশনে অংশ নেন। বিশিষ্ট এই মুক্তিযোদ্ধা একজন সফল শিল্পপতি হিসেবে দৈনিক জনকণ্ঠসহ বিভিন্ন শিল্প-কারখানা গড়ার পাশাপাশি অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সংগঠনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন।  তিনি সবাইকে দুঃখের সাগরে ভাসিয়ে হঠাৎ করেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ২০২১ সালের ২২ মার্চ ভোরে ইন্তেকাল করেন।

সাহসী সম্পাদক ছিলেন আতিকউল্লাহ খান মাসুদ

সাহসী সম্পাদক ছিলেন আতিকউল্লাহ খান মাসুদ

সত্য প্রকাশে দ্বিধাহীন সাহসী সাংবাদিক বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিকউল্লাহ খান মাসুদের আজ বৃহস্পতিবার ৭৩তম জন্মবার্ষিকী। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের ডিজিটাল সংবাদপত্রের জনক, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ভাস্বর, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর। তৎকালীন সফল তরুণ শিল্পপতিদের মধ্যে অন্যতম ব্যক্তিত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে তিনি বিভিন্ন শিল্প-কারখানা গড়ার পাশাপাশি অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সংগঠনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন।  ১৯৯৩ সালে তিনি তাঁর জীবনের সবচেয়ে সফল সংযোজন দেশের অত্যন্ত জনপ্রিয় জাতীয় দৈনিক পত্রিকা ‘দৈনিক জনকণ্ঠ’ প্রকাশ করেন। দেশে তখনো বাংলা ভাষাভিত্তিক বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে অন্তরে ধারণ করে এমন পত্রিকা তেমন একটা ছিল না। দৈনিক জনকণ্ঠই প্রথম বাংলাদেশের আত্মপরিচয়কে তুলে ধরতে অতুলনীয় ভূমিকা পালন করেছে। এখনো সেটা করে চলেছে জনকণ্ঠ। এটি সম্ভব হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা সম্পাদক আতিকউল্লাহ খান মাসুদের সাহসী অনুপ্রেরণার কারণে।  শুধু বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে অন্তরে ধারণই নয়, আতিকউল্লাহ খান মাসুদই দেশে প্রথম প্রযুক্তিভিত্তিক পত্রিকা বের করার কথা চিন্তা করেন। প্রযুক্তিতে ৩২৪ বছর পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশের জন্য এটি ছিল এক অনন্য অগ্রযাত্রা। কারণ, তখনো দেশে অনলাইন ইন্টারনেটের যুগ শুরু হয়নি।

এই অরূপ সন্ধ্যার কাছে

এই অরূপ সন্ধ্যার কাছে

ফাগুনের প্রথম দিন ছিল সেদিন। আরও ছিল ‘ভালোবাসা দিবস’। দুটিই ছিল আমার জন্য কাকতালীয় ঘটনা। আমার আসন্ন সান্ধ্য কর্মকা-ের জন্য এই দিনটিকে সজ্ঞানে বেছে নিই নি। এই সমাপতন দৈবাৎ ঘটে গেছে। সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের বইমেলা ছেড়ে যখন শাহবাগের মোড়ে এসে দাঁড়িয়েছি, তখন বিকাল প্রায় পাঁচটা। এমন সময় মেলা থেকে দুই বন্ধু ফোন করল।  বইমেলা চত্বরটা আমার প্রিয় জায়গা। ফেব্রুয়ারি মাস এলে সন্ধ্যা অব্দি সচরাচর ওখানেই কাটাই। অন্য কোনো দিন হলে বন্ধু-আহ্বান ফেরাতে পারতাম না। তবে আজকের দিনের কথা আলাদা। কারণ, তোমার সঙ্গে দেখা করার সময়টা আগে থেকেই স্থির করা আছে। হাতে তোমার অনেক কাজ এবং আমারও অনেক অকাজের ব্যস্ততা। ক’দিন আগে বাহকের মারফত বেশকিছু দামি ঊপহার পাঠিয়েছিলে। একটা শোভন প্রতিক্রিয়ায় আজকের এই সৌজন্য সাক্ষাতের সময় ও স্থান নির্ধারণ করেছি। তাতে তোমার সম্মতি ছিল।    ফার্মগেটে নিউ স্টার কাবাব রেস্টুরেন্টের দোতলায় জানালার পাশে বসে অপেক্ষা তোমার জন্য। যেখান থেকে রাস্তায় লোকচলাচল ও সড়কে চলমান জীবন সহজে নজরে আসে, রেস্টুরেন্টের এরকম কোনও জায়গায় এককোণে বসা আমার অভ্যাস। সেদিন আরও একটা উদ্দেশ্য ছিল —- তুমি হেঁটে আসছ, উপর থেকে তাকিয়ে এই প্রিয় দৃশ্য অবলোকন করা।  তোমার আসতে তখনো পনেরো মিনিট বাকি। “ঠিক সাড়ে পাঁচটায় আসব,” তোমার কণ্ঠটা আগের চেয়ে আরো মিষ্টি, আরো সুরেলা। “ঠিক সাড়ে পাঁচটা!” কথাগুলি হুবহু প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল আমার মনে। হুঁ! কিছু আগে-পরে নয় কেন!  মেলায়-আসা আমার সদ্য প্রকাশিত বইয়ের একটি কপি সঙ্গে এনেছিলাম তোমাকে দেব ব’লে। সময় কাটাতে সেটিরই পৃষ্ঠাগুলি উল্টে দেখতে শুরু করলাম। যত দেখছিলাম, ততই প্রুফ রীডারের যোগ্যতায় আমার গভীর আস্থা জাগছিল। এক জায়গায় দেখলাম, আমার লেখা ‘কুতূহলী’ শব্দটার বদলে মুদ্রিত হয়েছে ‘কৌতূহলী’।

পান্নার চেয়ে দামি

পান্নার চেয়ে দামি

ওর আসল নাম কি, তা আমি জানি না। জানলেও আজ আর মনে নেই। কণা নামেই ওকে আমি ডাকতাম। আমার দেওয়া নামটা না কি তার ভারি ভালো লাগত। আমার প্রশস্ত বুকের মাঝে মুখ লুকিয়ে যেন পরম নির্ভরতার সঙ্গে ও বলত, ‘ভোরের একটি বিন্দু শিশিরের সত্তায় তোমার জীবনে শুধু একটি কণা হয়ে আমি যে বেঁচে থাকতে চাই শিশিরদা।’ আমি বলতাম, ‘কণা হতেই যদি এত সাধ, তবে তা শিশিরের না হয়ে মহাসমুদ্রের হওয়াটাতেই তো বেশি সার্থকতা।’ প্রতিবাদ করে ও বলত, ‘না শিশিরদা, সমুদ্রের জলে অনেক হিং¯্র প্রাণীর বাসা। আর তা দূষিত হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি। তার সত্তার কণা হয়ে নিজে দূষিত হওয়ার ভয়ও অমূলক নয়। তার চাইতে শিশিরের কণা হতে পারাটাতেই সার্থকতা অনেক বেশি। কারণ শিশিরের মাঝে আর যা কিছুই থাকুক না কেন, অন্তত হিং¯্র প্রাণীর বাসা সেখানে নেই। আর দূষিত হওয়ার সম্ভাবনাও সেখানে অনেক কম।’ পাল্টা যুক্তি উপস্থাপন করে আমি বলতাম, ‘কিন্তু সমুদ্রের জল কোনোদিন তো শেষ হয় না কণা। জীবন যে সেখানে অবিনশ্বর।’ কণা প্রতিবাদ করে বলত, ‘শিশিরের বিন্দু নশ্বর, এ কথা তোমাকে কে বললে শিশিরদা?’ আমি বলি, ‘দেখো না, ভোর হওয়ার পরে সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই কেমন করে মিলিয়ে যায় সে শিশিরের বিন্দু।’ ও বলে, ‘এ তোমার ভুল ধারণা শিশিরদা। তাতে যে শিশিরের জীবন অস্তিত্বহীন হয়ে যায়, তোমাকে তা কে বললে? চন্দ্র যখন অস্তমিত হয় নীল আকাশের বুকে, অনেক সাধনায় রচিত ছোট্ট বাসাটাতে কপোতের বুকে মুখ লুকিয়ে পরম নিশ্চিন্তের সঙ্গে ঘুমিয়ে পড়ে শ্রান্ত কপোতি, আকাশে তারকার বাসর সাজাতে মিটিমিটি ফুটে ওঠে এক ঝাঁক তারকার মালিকা, বনের মধ্যে বরণমালা সাজাতে ঝিরঝির ঝরে পড়ে গুচ্ছ গুচ্ছ শুভ্র শেফালি সবুজ তৃণের শীর্ষেÑ তখনই স্বর্গের প্রশান্তি নিয়ে আকাশ থেকে নেমে আসে কয়েক ফোঁটা শিশিরের বিন্দু।

লোকবাংলার ঈদ উৎসব

লোকবাংলার ঈদ উৎসব

বাংলাদেশের অনেক উৎসব রয়েছে কৃত্যাচার কেন্দ্রিক। অর্থাৎ বিশেষ উপলক্ষে, যেমনÑ জন্মাষ্টমী কিংবা মহররম। কিন্তু মুসলমানদের জন্য দুটি ধর্মীয় উৎসব ঈদ যুক্ত রমজান মাসের এক মাস রোজা রাখার সঙ্গে, যাÑ ঈদুল ফিতর এবং আরেকটি পবিত্র হজব্রতের সঙ্গে, যাÑ ঈদুল আজহা। শাওয়াল চাঁদের প্রথম দিবসে রমজানের রোজা ভঙ্গের উৎসব ঈদুল ফিতর। আর জিলহজ চান্দ মাসের ১০ তারিখে কোরবানি উৎসব ঈদুল আজহা।  গ্রাম-বাংলায় দুটি ঈদেরই আনন্দ উৎসবে এসেছে পরিবর্তন। টেলিভিশনের প্রবেশ যখন গ্রাম-বাংলায় ঘটেনি তখন রেডিও ছিল ইলেকট্রনিকস মিডিয়ার সংবাদ শোনা ও বিনোদন উপভোগের একমাত্র অবলম্বন। ঈদুল ফিতর উদযাপন করার জন্য ঈদের আগের দিন সবাই অপেক্ষায় থাকত সন্ধ্যার সঙ্গে সঙ্গে কখন রেডিওতে নজরুলের গানটি বেজে উঠবেÑ ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ/তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে শোন্ আসমানি তাগিদ।/তোর শোনা-দানা বলাখানা সব রাহেলিল্লাহ।/দে জাকাত মুর্দা মুসলিমের আজ ভাঙাইতে নিদ। আজ পড়বি ঈদের নামাজ রে মন সেই সে ঈদগাহে॥/যে ময়দানে সব গাজী মুসলিম হয়েছে শহীদ॥/আজ ভুলে যা তোর দোস্ত ও দুশমন হাত মিলাও হাতে॥/তোর প্রেম দিয়ে কর বিশ^ নিখিল ইসলামে মুরিদ॥/ঢাল হৃদয়ের তোর তশ্তরিতে র্শিনি তৌহিদের।/তোর দাওয়াত কবুল করবে হজরত হয় মনে উম্মীদ॥’ ওই গানটি শিশু-কিশোরদের মাঝে ঈদ উৎসবের অন্যরকম আনন্দ উৎসব ছিল। ঈদুল আজহার আগের দিন রেডিওর মাধ্যমেই জানা যেত আরবে ঈদ উৎসব পালিত হয়েছে।  ঈদ মানে খুশি, আনন্দ, উৎসব। এই আনন্দ গ্রাম-বাংলার শিশু-কিশোরদের পোশাক-আশাকে প্রকাশ পেত। প্রকাশ পেতো হৈ-হুল্লোড়, লোকমেলা এবং বাড়িতে খাবার-দাবারের আয়োজনের মাধ্যমে; এখনো পাচ্ছে। তবে সময়ের সঙ্গে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিকাশের সঙ্গে পরিবর্তন ঘটেছে বিস্তার। একসময় ঈদ এলেই শিশু-কিশোরদের জন্যে তৈরি হতো কাগজের রঙিন টুপি। আমরা গত শতকের আশির দশক পর্যন্ত কাগজের টুপির প্রচলন দেখেছি। বর্তমানে নেই বললেই চলে। গ্রামের শিশু-কিশোরী থেকে শুরু করে বয়স্ক নারীরাও পা ও আঙুল সাজাতো আলতায় এবং নখ পালিশ ব্যবহার করত হাতের-পায়ের নখে। অনেকেই নখ রঙিন করত মেহেদী পাতায়। বর্তমানে আলতার প্রচলন নেই বললেই চলে। গ্রামে এক ধরনের ফেরিওয়ালার দেখা মিলত। এক ধরনের ছোট পুটলি অর্থাৎ নাপা টেবলেটের সাইজে এক প্রকারের রঙিন পুটলি ফেরিওয়ালা বিক্রি করতেন। ওই পুটলি গুলিয়ে আলতা তৈরি করা হতো।  লোকবাংলার ঈদ উৎসব মানেই সকালে ঢেঁকিতে কুটা চালের গুঁড়ার রুটি ও চালের গুঁড়ার হাতে তৈরি সেমাই পিঠা এবং ঈদের মাঠ শেষে কিশোর-কিশোরীরা এ বাড়ি থেকে ও বাড়ি ঘুরে বেড়ানো। আর সেমাই রুটি খাওয়া। বর্তমানে গ্রাম-বাংলায় চালের গুঁড়ার সেমাই পাওয়া ভার। ঈদের খুশি মানে নতুন জামা, নতুন পাঞ্জাবি, নতুন শাড়ি, নতুন ফ্রক, সালোয়ার কামিজ। তবে নতুন কাপড়গুলো সুন্দর করে ভাঁজের জন্য ছিল চিরায়ত কৌশল। ইস্ত্রি করার জন্য লন্ড্রি তেমন ছিল না। থাকলেও ভিড় ভাটটা এবং টাকার জন্যই চিরায়ত কৌশল ব্যবহার করা হতো। জামা-কাপড় ভাঁজ করে বালিশের নিচে রেখে ঘুম যেত শিশু-কিশোররা। বালিশের নিচে মাথার চাপে সারারাত ধরে থাকায় একটি সুন্দর ভঁাঁজ তৈরি হতো পরার কাপড়ের। আবার কেউ কেউ পিতল বা কাসার ঘড়ায় গরম করা কয়লা ঢুকিয়ে সেই গরম হওয়া ঘড়া কাপড়-চোপড় ইস্ত্রি করে নেওয়া হতো। সময়ের প্রয়োজনে তা আর করা হয় না। বর্তমানে বিদ্যুতায়নের ফলে লোকবাংলায়ও বিদ্যুতে সমৃদ্ধ। সবার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় আগেকার দিনের লোকায়ত জ্ঞানের যে ইস্ত্রি তা আর প্রয়োজন হয় না তাছাড়া এখন তো হাটে বাজারে বিদ্যুতিক ইস্ত্রি বা লন্ড্রি ঘরের অভাব নেই। ঈদুল আহজার যে কোরবানি উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ ছিল, যে গরু বা ছাগলটিকে কোরবানি দেওয়া হবে তার পরিচর্যা করা। ঈদের তিন চার দিন বা দুই-তিন দিন আগে যদি কেনা হয়ে যেত তাহলে তার কাছে গিয়ে একটু আদর করা, গোলস করানো এসবে খুবই মজা পাওয়া যেত। ছাগলকে কাঁঠাল পাতা খাওয়ানোর মধ্য দিয়ে শিশু-কিশোরদের আনন্দের বন্যা বয়ে যেত। সম্প্রদায়িক-সম্প্রীতির যে বন্ধন তার পাশাপাশি অন্যতম আরেকটি বিশেষ দিকের কথা বলতেই হয় ধনী-দরিদ্রের ভেদাভেদ ঘোচানো হয়ে যেত কোরবানির মাংস বিতরণের মধ্য দিয়ে। আমার আব্বার কাছে শুনেছি। আমাদের ময়মনসিংহের ঈশ^রগঞ্জের খৈরাটি গ্রামের যে ঈদগাটি আছে এখানে সবার গরু জবাই করা হতো। পাড়ার বা গ্রামের যারা কোরবানি দিতে পারতো না, তাদের জন্যও সমানভাবে গোস্ত বণ্টন করে দেওয়া হতো।  এমন প্রতিবেশীবান্ধব সংস্কৃতি প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে লোকবাংলায়। এরই ধারাবাহিককতার রেশ বাড়িতে বাড়িতে কোরবানি দেওয়া জনদের মধ্যে দেখা যেত বেশ কিছুকাল। (এরপর ১৮ পৃষ্ঠায়) কোরবানির তিন ভাগ গোস্তের এক ভাগ বণ্টন করে দেওয়া হতো দরিদ্রদের মধ্যে। কিন্তু এমন পরম্পরাও আর নেই। বণ্টন হয় তবে তা ঘরের ভেতর নেওয়ার পর। গ্রাম-বাংলায় ঈদের মেলা বসত ঈদকে কেন্দ্র করে। তবে ঈদের মেলা বর্তমানে তেমন চোখে পড়ে না। লোকবাংলার প্রাণ বিভিন্ন উপলক্ষ্যকে কেন্দ্র করে লোকমেলা। আবার লোকবাংলার ঐতিহ্য ঈদ লোকমেলার ঐতিহ্যের পুনর্নির্মাণ হতে পারে। লোক-পোশাকের যে ঐতিহ্য তাকে আবার ধরে রাখা সম্ভব এই মেলার মধ্য দিয়ে।      ঈদ উপলক্ষে হা-ডু-ডু খেলার দারুণ প্রচলন ছিল। এপাড়া বনাম ওপাড়া, ওমুকের দল বনাম তমুকের দল, বিয়াত্য বনাম অবিয়াত্য (বিবাহিত বনাম অবিবাহিত)Ñএসব বিভিন্ন নামে দল বিভাজন থাকত। বিনোদনের অন্যতম খোরাক জোগাত গ্রাম-বাংলায় হা-ডু-ডু। বর্তমানে খুব একটা চোখে পড়ে না। গ্রাম-বাংলার সিনেমার হলগুলোর সামনে ঈদ উপলক্ষে বিশেষ সিনেমার বড় বড় ব্যানার টানানো থাকত। সিনেমা ব্যানার আর্টিস্টদের হাতে আঁকা সিনেমার কেন্দ্রীয় চরিত্রগুলোর ছবি বিশেষভাবে আকর্ষণ করত। ফলে কিশোর-কিশোরী থেকে শুরু করে সবধরনের বয়সের লোকদের ঈদ উপলক্ষে সিনেমা দেখার হিড়িক  থাকত। বর্তমানে মোবাইলেই বিনোদনের নানান উপকরণ দেখতে পাওয়া যায়। উপলক্ষের সিনেমা আর দেখা হয়ে ওঠে না গ্রাম-বাংলার মানুষের।  অবশ্য মানতেই হবে এখনো লোকবাংলার ঈদকে আনন্দমুখর ও উৎসবে পরিণত করে রেখেছে শহর থেকে গ্রামমুখী মানুষেরা। মধ্যবিত্ত ও নি¤œমধ্য শ্রেণির অনেক মানুষ শহরে চাকরি বা ব্যবসা সূত্রে বসবাস করলেও নাড়ির টান থেকে গেছে গ্রাম-বাংলাতেই। ফলে আমরা দেখবÑপরিবার-পরিজন আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে ঈদ করতে ছুটে গেছেন তারা। শিশু-কিশোররা গ্রামের বাড়িতে দাদা-দাদি ও নানা নানির সঙ্গে ঈদ আনন্দে যুক্ত হচ্ছে।  এই সময়ের গ্রাম-বাংলায় ঈদ আনন্দকে উপভোগ করতে ছুটে যাওয়া মানুষদের মধ্যে অন্যতম একটি পেশাজীবী শ্রেণি হচ্ছে গার্মেন্টস শ্রমিক। মা-বাবা, ভাই-বোন, স্বামীর বাড়ির বা স্ত্রীর বাড়ির লোকজনরাও অপেক্ষায় থাকেন তাদের নিয়ে ঈদ করার জন্য। গ্রাম-বাংলায় ঈদ উৎসব পালনের পরিবর্তন ঘটেছে সত্য কিন্তু আনন্দ উৎসবের কমতি ঘটেনি।

তবু বড় স্বপ্ন বাংলাদেশের

তবু বড় স্বপ্ন বাংলাদেশের

অন্য বড় দলগুলোর মতোই বাংলাদেশ ক্রিকেট দল সবগুলো টি২০ বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছে। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ আগের ৮ টি২০ বিশ্বকাপের সবগুলোই খেলেছে। নবম দল হিসেবে সব বিশ্বকাপেই অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ দল। জিম্বাবুইয়ে, আয়ারল্যান্ড, আফগানিস্তান, নেদারল্যান্ডস, স্কটল্যান্ড পরবর্তী পর্যায়ের শীর্ষ দল হিসেবে সব বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পায়নি। কিন্তু সব আসরে অংশ নিলেও এবার সাদামাটা দল বাংলাদেশ। দলটিকে নিয়ে সারাবিশে^¦ই কোনো আলোচনা নেই, আগ্রহ নেই এবং ভালো কিছু করবে এমন কথাও কোনো ক্রিকেট বোদ্ধার বিশ্লেষণে আসেনি। খোদ বাংলাদেশের মানুষেরই এ দলটিকে ঘিরে কোনো প্রত্যাশা নেই। তবে ক্ষীণ একটি আশা মনের কোণে ছিল সবারই।