ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২

স্টারলিংককে টেক্কা দিতে মহাকাশে অ্যামাজনের কুইপার স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ!

প্রকাশিত: ১১:৫০, ২৯ এপ্রিল ২০২৫

স্টারলিংককে টেক্কা দিতে মহাকাশে অ্যামাজনের কুইপার স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ!

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভেরাল স্পেস ফোর্স স্টেশন থেকে অ্যামাজনের ‘প্রজেক্ট কুইপার’ ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক স্যাটেলাইট বহনকারী ইউনাইটেড

বহুল প্রতীক্ষিত মহাকাশ ইন্টারনেট প্রকল্প ‘প্রজেক্ট কুইপার’-এর প্রথম ২৭টি স্যাটেলাইট সফলভাবে উৎক্ষেপণ করল অ্যামাজন। সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভেরাল স্পেস ফোর্স স্টেশন থেকে মহাকাশে যাত্রা শুরু করে এই স্যাটেলাইটগুলো। এই প্রকল্পের মধ্য দিয়ে অ্যামাজন এবার সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু করল ইলন মাস্কের স্টারলিংকের সঙ্গে।

২০১৯ সালে ঘোষণা দেওয়া এই প্রকল্পে অ্যামাজনের লক্ষ্য হলো পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তে, বিশেষ করে দুর্গম ও সংযোগহীন অঞ্চলে, সাশ্রয়ী মূল্যে উচ্চগতির ইন্টারনেট পৌঁছে দেওয়া। প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে বাস্তবায়নাধীন ‘প্রজেক্ট কুইপার’-এর আওতায় অ্যামাজন মহাকাশে মোট ৩,২৩৬টি স্যাটেলাইট পাঠানোর পরিকল্পনা করেছে। এবারের উৎক্ষেপণ সেই পথচলারই সূচনা।

বোয়িং ও লকহিড মার্টিনের যৌথ উদ্যোগ ইউনাইটেড লঞ্চ অ্যালায়েন্সের (ULA) ‘অ্যাটলাস ভি’ রকেটের মাধ্যমে সন্ধ্যা ৭টায় স্যাটেলাইটগুলো মহাকাশে পাঠানো হয়। এর আগে আবহাওয়ার কারণে ৯ এপ্রিল নির্ধারিত উৎক্ষেপণ বাতিল করা হয়েছিল।

এই উৎক্ষেপণ অ্যামাজনের ইতিহাসে অন্যতম বড় প্রযুক্তিগত উদ্যোগ, যা স্টারলিংক ছাড়াও বৈশ্বিক টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠান যেমন AT&T ও T-Mobile-এর সাথেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। অ্যামাজন বিশেষভাবে এই সেবাটিকে গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের জন্য আশীর্বাদ হিসেবে তুলে ধরছে।

মূলত এক বছর আগে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও নানা কারণে এই উৎক্ষেপণ পিছিয়ে যায়। মার্কিন ফেডারেল কমিউনিকেশনস কমিশনের (FCC) নিয়ম অনুযায়ী ২০২৬ সালের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে অন্তত ১,৬১৮টি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে অ্যামাজনের। তবে ধীরগতির সূচনার কারণে প্রতিষ্ঠানটি সময়সীমা বাড়ানোর আবেদন করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অ্যামাজন জানিয়েছে, উৎক্ষেপণের কয়েক ঘণ্টা বা এক-দুদিনের মধ্যেই ওয়াশিংটনের রেডমন্ডে অবস্থিত মিশন অপারেশন সেন্টার থেকে প্রতিটি স্যাটেলাইটের সঙ্গে সফল যোগাযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে। সবকিছু ঠিকঠাক চললে চলতি বছরেই সাধারণ গ্রাহকদের জন্য ইন্টারনেট সেবা চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।

ULA প্রধান নির্বাহী টরি ব্রুনো জানিয়েছেন, এ বছর আরও পাঁচটি কুইপার উৎক্ষেপণের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ২০২০ সালে FCC-তে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মাত্র ৫৭৮টি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পরই কিছু উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে সেবা চালু করা সম্ভব হবে। পর্যায়ক্রমে স্যাটেলাইট বাড়লে, ইকুয়েটরের দিকেও সংযোগ সম্প্রসারিত হবে।

অ্যামাজন ২০২৩ সালে দুটি প্রোটোটাইপ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করে সফল পরীক্ষা চালায়, যা ২০২৪ সালে কক্ষপথ থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। এরপর দীর্ঘ সময় চুপ থাকলেও চলতি মাসেই তারা তাদের প্রথম পূর্ণাঙ্গ উৎক্ষেপণের ঘোষণা দেয়।

"প্রতিযোগিতার জন্য জায়গা আছে সবার"

২০১৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত স্পেসএক্স তার ফ্যালকন ৯ রকেটের মাধ্যমে ৮,০০০টিরও বেশি স্টারলিংক স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠিয়েছে। তাদের বর্তমান গতি প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে একটি করে উৎক্ষেপণ, যেখানে প্রতিবার প্রায় দুই ডজন স্যাটেলাইট পাঠানো হয়। এই গতির কারণে ইতোমধ্যে স্টারলিংকের গ্রাহক সংখ্যা ১২৫টিরও বেশি দেশে ৫০ লাখ ছাড়িয়েছে।

এখন প্রতিরক্ষা ও গোয়েন্দা সংস্থারাও স্টারলিংককে জাতীয় নিরাপত্তার কাজে ব্যবহারের চিন্তাভাবনা করছে।

অন্যদিকে অ্যামাজনের নির্বাহী চেয়ারম্যান জেফ বেজোস এই প্রতিযোগিতায় আত্মবিশ্বাসী। জানুয়ারিতে রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন,
"ইন্টারনেটের জন্য মানুষের চাহিদা অশেষ। এখানে অনেক সফলতার জায়গা আছে। আমি বিশ্বাস করি, স্টারলিংক সফল থাকবে, কুইপারও সফল হবে।"
তিনি আরও যোগ করেন,
"মূলত এটি একটি বাণিজ্যিক প্রকল্প হলেও, কম কক্ষপথে (LEO) পরিচালিত এসব স্যাটেলাইটের প্রতিরক্ষা ব্যবহারের সুযোগও রয়েছে।"

২০২৩ সালে অ্যামাজন তাদের কুইপার টার্মিনালের নকশা প্রকাশ করে। এটি একটি এলপি রেকর্ডের মতো আকারের অ্যান্টেনা, যা কুইপার স্যাটেলাইটের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করবে। এছাড়াও একটি ছোট সংস্করণ রয়েছে, যা দেখতে অনেকটা কাইন্ডল ই-রিডারের মতো। প্রত্যেকটি ডিভাইস ৪০০ ডলারের নিচে বিক্রি করার লক্ষ্য রয়েছে অ্যামাজনের।

২০২২ সালেই অ্যামাজন ৮৩টি রকেট উৎক্ষেপণের চুক্তি করে ফ্রান্সের অ্যারিয়ানস্পেস, ইউএলএ এবং বেজোসের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান ব্লু অরিজিনের সঙ্গে, যা মহাকাশ উৎক্ষেপণ ইতিহাসে অন্যতম বড় বাণিজ্যিক চুক্তি।

 

সূত্র:রয়টার্স

আফরোজা

×