ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২১ এপ্রিল ২০২৫, ৮ বৈশাখ ১৪৩২

ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপ বিক্রির মুখে মেটা, যুক্তরাষ্ট্রে চলছে প্রতিযোগিতা বিরোধী মামলা

প্রকাশিত: ২৩:৩৭, ২০ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ২৩:৩৭, ২০ এপ্রিল ২০২৫

ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপ বিক্রির মুখে মেটা, যুক্তরাষ্ট্রে চলছে প্রতিযোগিতা বিরোধী মামলা

ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপ বিক্রি করতে হতে পারে মেটাকে, যুক্তরাষ্ট্রে চলছে বড় মামলা এফটিসি’র অভিযোগ: প্রতিযোগিতা রুখতেই কিনেছিল মেটা, ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ট্রেড কমিশন (FTC) প্রযুক্তি জায়ান্ট মেটা—যেটা আগে ফেসবুক নামে পরিচিত ছিল—এর বিরুদ্ধে একটি বড় ধরনের প্রতিযোগিতা বিরোধী মামলা দায়ের করেছে। এই মামলার মূল অভিযোগ হলো, মেটা ২০১২ সালে ইনস্টাগ্রাম এবং ২০১৪ সালে হোয়াটসঅ্যাপ কিনে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটে একক আধিপত্য (monopoly) প্রতিষ্ঠা করেছে এবং এর ফলে প্রতিযোগিতা কমে গেছে, যা ভোক্তাদের জন্য ক্ষতিকর।

মামলার পেছনের অভিযোগ
FTC-এর দাবি অনুযায়ী, মেটা চাইলেই ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামতে পারতো নিজস্ব অ্যাপ তৈরি করে। কিন্তু তারা সহজ পথ বেছে নিয়ে এই দুটি সম্ভাবনাময় অ্যাপকে কিনে নিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখে। FTC এই কেনাকাটাকে এক ধরনের ‘কৌশলগত দমননীতি’ হিসেবে দেখছে—যার লক্ষ্য হলো “কিনে নাও, না হলে ধ্বংস করো।”

মামলার প্রেক্ষাপট ও বর্তমান অবস্থা
প্রথমবার FTC ২০২০ সালে মামলাটি করে, তখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রথমে সেটি খারিজ হয়ে গেলেও, ২০২১ সালে আরও শক্তিশালী তথ্য-প্রমাণ নিয়ে আবার মামলা করা হয়। বর্তমানে, ২০২৫ সালের এপ্রিল থেকে ওয়াশিংটন ডিসিতে মামলার শুনানি শুরু হয়েছে এবং এটি প্রায় দুই মাস ধরে চলতে পারে।

FTC চায়, আদালত যেন মেটাকে ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপ আলাদা কোম্পানি হিসেবে পরিচালনা করতে বা বিক্রি করতে বাধ্য করে। যদি FTC মামলায় জিতে যায়, তাহলে মেটাকে এই দুই প্ল্যাটফর্ম থেকে বিদায় নিতে হতে পারে, যা কোম্পানির জন্য বড় ধাক্কা হবে।

মেটার পাল্টা যুক্তি
মেটার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তারা এককভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে না। TikTok, YouTube, X (সাবেক Twitter)–এর মতো শক্তিশালী প্রতিযোগী এখনো মার্কেটে আছে। তাই FTC-এর মনোপলির অভিযোগ তেমনভাবে টিকবে না।
তাদের আরও যুক্তি, Instagram ও WhatsApp কেনার ফলে অ্যাপদুটি আরও উন্নত হয়েছে—ইনস্টাগ্রামে এসেছে নতুন ফিচার, WhatsApp হয়ে উঠেছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মেসেজিং অ্যাপ। তারা বলছে, ভোক্তারা এতে উপকৃতই হয়েছে, ক্ষতি হয়নি।

মেটা এ-ও বলছে, ১০ বছর আগে FTC-ই তাদের Instagram ও WhatsApp কেনার অনুমোদন দিয়েছিল। এখন সেই সিদ্ধান্তকে অবৈধ বলা আইনগত দিক থেকে প্রশ্নবিদ্ধ।

রাজনৈতিক প্রভাবের গুঞ্জন
বিশ্লেষকরা বলছেন, মামলার পেছনে রাজনৈতিক প্রভাব থাকতে পারে। কারণ মেটার সিইও মার্ক জাকারবার্গ ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্ক রেখেছেন এবং তার প্রচারণা তহবিলে অর্থও দিয়েছেন। অনেকের ধারণা, ট্রাম্প FTC-এর উপর চাপ প্রয়োগ করতে পারেন মামলা বন্ধ করার জন্য।

ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ
এফটিসি যদি মামলায় জিতেও যায়, তাহলে ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপ বিক্রির প্রক্রিয়া দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে। মেটা আপিল করতে পারে, যার ফলে পুরো বিষয়টি কয়েক বছর পর্যন্ত গড়াতে পারে।

সবমিলিয়ে, প্রযুক্তি দুনিয়ায় এই মামলাটি নজরকাড়া ঘটনা হয়ে উঠেছে। FTC তাদের অভিযোগ প্রমাণ করতে পারবে কি না, সেটা সময়ই বলবে। তবে এটা নিশ্চিত, মেটার জন্য এটি একটি বড় আইনি ও ব্যবসায়িক চ্যালেঞ্জ।

রাজু

×