
ছবি: সংগৃহীত।
স্মার্টফোনে এখন এক ট্যাপে পাওয়া যাচ্ছে চ্যাটজিপিটি, ডিপসিক, বার্ডসহ নানা ধরনের এআই চ্যাটবট। প্রশ্ন করলেই মিলছে উত্তর। দিন দিন এগুলোর প্রতি মানুষের নির্ভরতা যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে গোপন তথ্য ফাঁসের ঝুঁকিও।
বলা হচ্ছে, চ্যাটজিপিটির মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-ভিত্তিক চ্যাটবটগুলিকে যতখুশি ব্যবহার করুন, কিন্তু ভুলেও কিছু তথ্য কখনো শেয়ার করবেন না। কারণ আপনি হয়তো জানতেও পারবেন না, কখন কোন তথ্য চলে গেছে তৃতীয় পক্ষের হাতে!
চলুন দেখে নেওয়া যাক, কী কী তথ্য চ্যাটজিপিটিকে জানানো একেবারেই অনুচিত:
ব্যক্তিগত পরিচয়
নিজের নাম, বয়স, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর বা ইমেইল আইডি—এসব তথ্য চ্যাটবটকে জানানো মানেই ঝুঁকির দোরগোড়ায় পা রাখা। এআই চ্যাটবটের আলোচনায় এসব ডেটা সংরক্ষিত থেকে যেতে পারে, যা পরে সাইবার অপরাধীরা অপব্যবহার করতে পারে।
আর্থিক তথ্য
ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর, কার্ডের তথ্য, বিকাশ-নগদের বিবরণ বা পেনশন–বিমা–লভ্যাংশের তথ্য কখনোই চ্যাটজিপিটিতে জানাবেন না। আপনি যতই নির্ভরশীল হোন না কেন, এইসব তথ্য চলে যেতে পারে হ্যাকারদের হাতে।
পাসওয়ার্ড বা লগইন তথ্য
অফিসের বা ব্যক্তিগত কোনো অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড দিয়ে চ্যাটবটের সাহায্য চাইবেন না। এসব তথ্য অনলাইনে একবার ফাঁস হলে তা দিয়ে অনায়াসেই করা যেতে পারে ডিজিটাল প্রতারণা।
ব্যক্তিগত সমস্যা বা গোপন তথ্য
মন খারাপ হলে, বা জীবনের জটিলতার সময় চ্যাটজিপিটি অনেকের কাছেই হয়ে ওঠে 'ডিজিটাল বন্ধু'। কিন্তু গোপন সম্পর্ক, দাম্পত্য কলহ, পারিবারিক কেলেঙ্কারি কিংবা অফিসের অন্দরমহলের কথা—এসব জানিয়ে ফেললে তা হতে পারে আপনার জন্য ভবিষ্যতের ব্ল্যাকমেইল বা সামাজিক লজ্জার কারণ।
স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য
আপনার স্বাস্থ্যগত জটিলতা, মেডিকেল রিপোর্ট, ওষুধ বা ইনস্যুরেন্স সম্পর্কিত তথ্য কখনোই শেয়ার করবেন না। এগুলোর অনেকটাই বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের জন্য আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে পারে।
চ্যাটজিপিটি কীভাবে হতে পারে বিপজ্জনক?
চ্যাটজিপিটি কিংবা যেকোনো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পরিচালিত টুল ব্যবহৃত হয় পূর্ব-প্রোগ্রাম করা নীতিমালার মাধ্যমে। যদিও এগুলো ‘নিরাপদ’ বলে দাবি করা হয়, তবু এগুলোর উপর সবসময় নজরদারি রাখে মানুষের দল। তাই আপনি যা বলছেন, তা কেউ না কেউ দেখতে পাচ্ছে—এটা মনে রাখাই উত্তম।
সাইবার অপরাধীরাও সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। আপনার দেওয়া তথ্য যদি কখনো ডার্ক ওয়েবের হাতে পড়ে, তবে প্রতারণার শিকার হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। সাম্প্রতিক সময়ে এমন কিছু ঘটনাও ঘটেছে, যেখানে এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে 'ডিপফেক' ভিডিও, ভুয়া পরিচয়পত্র এবং এমনকি কোনো ব্যক্তির ক্লোনড ভার্সন তৈরি করা হয়েছে।
সত্যজিৎ রায়ের ভবিষ্যদ্বাণী?
সত্যজিৎ রায়ের বিখ্যাত শঙ্কু কাহিনিতে ‘কম্পু’ নামের সুপারকম্পিউটারই ছিল জ্ঞান ও বিপদের এক দ্বৈত প্রতীক। ‘শঙ্কুর শনির দশা’ গল্পে দেখা যায়, শঙ্কুর মতো আরেকজন শঙ্কু তৈরি করে ফেলে একটি মেশিন—যে জানে শঙ্কুর সব কিছু। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জগতে সেই গল্প যেন আজ বাস্তব হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আপনি যদি আপনার সমস্ত জীবনচরিত, আবেগ, সিদ্ধান্ত ও দুর্বলতা একটি চ্যাটবটে তুলে ধরেন, তবে ভবিষ্যতে সেই ‘ডেটা ক্লোন’ আপনার নামে অন্য কেউ কি না হয়ে ওঠে—সেটাই এখন সবচেয়ে বড় আতঙ্ক।
তাহলে কী করবেন?
- এআই ব্যবহার করুন কেবল তথ্য সংগ্রহ ও গবেষণার উদ্দেশ্যে
- ব্যক্তিগত পরিচয়, আর্থিক তথ্য, পাসওয়ার্ড বা গোপন তথ্য কখনো শেয়ার করবেন না
- অজানা ওয়েবসাইট বা থার্ড পার্টি এআই অ্যাপে সতর্ক থাকুন
- প্রয়োজনে এআই-নিরাপত্তা নীতিমালা পড়ে নিন
স্মার্ট ব্যবহারই ভবিষ্যতের ডিজিটাল ঝুঁকি থেকে রক্ষা করতে পারে। প্রযুক্তিকে সহায় হিসেবে রাখুন, আত্মজীবন উন্মুক্ত করে নয়।
নুসরাত