ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২

ডেটা সেন্টার ব্যবসায় মালয়েশিয়ার শীর্ষ ধনকুবেররা

প্রকাশিত: ১৫:৪১, ১৭ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ১৬:০৫, ১৭ এপ্রিল ২০২৫

ডেটা সেন্টার ব্যবসায় মালয়েশিয়ার শীর্ষ ধনকুবেররা

ছবি: প্রতিকী

বিশ্বজুড়ে যখন হাইপারস্কেল এআই ডেটা সেন্টার নির্মাণে প্রতিযোগিতা চলছে, তখন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়া সেই দৌড়ে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে উঠে এসেছে। বর্তমানে দেশটিতে ডেটা সেন্টারের অভূতপূর্ব উত্থান দেখা যাচ্ছে, যার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে আগে ঘুমন্ত শহর হিসেবে পরিচিত জোহর রাজ্যযা সিঙ্গাপুরের সন্নিকটে অবস্থিত। একসময় যেখানে ছিল পাম রাবার বাগান, সেখানে এখন গড়ে উঠছে আধুনিক টেক পার্ক।

২০১৯ সালে সিঙ্গাপুরে ডেটা সেন্টার নির্মাণে স্থগিতাদেশ আরোপ ২০২১ সালে তার আংশিক প্রত্যাহারের পর, মালয়েশিয়া হয়ে উঠেছে অঞ্চলের ডিজিটাল অবকাঠামোর নতুন কেন্দ্র। বৈশ্বিক সম্পত্তি পরামর্শ প্রতিষ্ঠান নাইট ফ্র্যাঙ্ক-এর তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে দেশটিতে ২৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ এসেছে, যা পুরো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এই খাতে অনুমেয় ৪৪ বিলিয়ন ডলারের অর্ধেকেরও বেশি। এই অর্থ এসেছে অ্যামাজন, গুগল ওরাকল-এর মতো প্রযুক্তি জায়ান্টদের কাছ থেকে।

ধনকুবেরদের নতুন খাত

ডেটা স্টোরেজের ব্যাপক চাহিদা এবং ক্লাউড কম্পিউটিং এআই প্রযুক্তির দ্রুত প্রসারের ফলে মালয়েশিয়ার বহু শিল্পপতি (বিশেষত যারা আগে কৃষিভিত্তিক ব্যবসায় যুক্ত ছিলেন) এই খাতে ঝুঁকছেন। কেউ কেউ সরাসরি ডেটা সেন্টার নির্মাণে লিপ্ত হয়েছেন, আবার কেউ জমি বিক্রি করে লাভ করছেন।

দেশটির শীর্ষ ধনকুবের রবার্ট কুয়োক তাঁর সিঙ্গাপুরভিত্তিক নাতি কুয়োক মেং ওয়েইয়ের নেতৃত্বাধীন কে-২ স্ট্র্যাটেজিক বিনিয়োগ করেছেন, যারা দ্রুত তাদের কার্যক্ষমতা চারগুণ বাড়িয়ে ২৪০ মেগাওয়াট করতে যাচ্ছে।

ফ্রান্সিস ইয়ো মালিকানাধীন ওয়াইটিএল (YTL) যার ব্যবসা সিমেন্ট, বিদ্যুৎ হোটেল খাতে বিস্তৃতএআই চিপ নির্মাতা এনভিডিয়ার সঙ্গে যৌথভাবে জোহর রাজ্যে ৫০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি বিশাল ডেটা সেন্টার নির্মাণ করছে, যা চলবে কাছের একটি সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে।

আরো অনেক নির্মাণ প্রকৌশল প্রতিষ্ঠানও এতে যুক্ত হয়েছে। যেমন, ধনকুবের জেফ্রি চেয়াহর মালিকানাধীন সানওয়ে কনস্ট্রাকশন ইতোমধ্যে প্রায় ২২৭ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি পেয়েছে কে-২ স্ট্র্যাটেজিকের জন্য ডেটা সেন্টার নির্মাণে।

বিনিয়োগের হুড়োহুড়ি

মাইক্রোসফট, ওরাকলসহ বিশ্বের বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো মালয়েশিয়ায় ডেটা সেন্টার গড়তে ২৩ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি বিনিয়োগ করেছে।

মেব্যাংক-এর বিশ্লেষক হুসাইনি সাইফি জানান, এআই প্রযুক্তি এবং ক্লাউড সেবার ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে খাতে চাহিদা অব্যাহতভাবে বাড়ছে। মেব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এখন থেকে ২০২৮ সালের মধ্যে মালয়েশিয়ায় গিগাওয়াট ক্ষমতার নতুন ডেটা সেন্টার নির্মিত হবে।

জমির ব্যবসাতেও লাভবান ধনকুবেররা

পাম অয়েল নির্মাণ খাতের ব্যবসায়ী গুই সিয়ং লিম ২০২৩ সাল থেকে ৪০ হেক্টরের বেশি জমি বিক্রি করে প্রায় ১৩৭ মিলিয়ন ডলার আয় করেছেন। সেই জমিতে মাইক্রোসফট তাদের . বিলিয়ন ডলারের প্রকল্প শুরু করেছে। এছাড়াও, লিয়ং কক ওয়াহ-এর ইকো ওয়ার্ল্ড ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি প্রায় ১৫০ মিলিয়ন ডলারে ৫৯ হেক্টর জমি বিক্রি করেছে, যার প্রভাবে কোম্পানিটির শেয়ার বেড়ে গেছে।

ইকো ওয়ার্ল্ড শুধু গত বছর থেকেই জমি বিক্রি করে ১৮০ মিলিয়ন ডলারের বেশি আয় করেছে। এদিকে, ড্যানি ট্যান চি সিং-এর ট্রপিকানা ৪৩ হেক্টর জমি বিক্রি করে ১৪০ মিলিয়ন ডলার পেয়েছে জাপানের এনটিটি গ্লোবাল ডেটা সেন্টারস চীনের জেডডেটা টেকনোলজিস-এর কাছে।

কেন জোহর?

কম দামে বিপুল জমি, প্রচুর বিদ্যুৎ পানি সরবরাহের সুবিধাসব মিলিয়ে জোহর ডেটা সেন্টার নির্মাণে আদর্শ স্থান হয়ে উঠেছে। নাইট ফ্র্যাঙ্ক-এর তথ্য মতে, ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ জোহরেই ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ডেটা সেন্টার ছিল, যেখানে কুয়ালালামপুর ক্লাং ভ্যালিতে ছিল মাত্র ১০৭ মেগাওয়াট।

 

এদিকে, চীনের -কমার্স জায়ান্ট আলিবাবা সহ-প্রতিষ্ঠাতা জোসেফ সাই হংকংয়ের এক আলোচনায় অতিরিক্ত নির্মাণ নিয়ে "বাবল" (অর্থাৎ একসময় ধসে পড়ার আশঙ্কা) হওয়ার বিষয়ে সতর্ক করেছেন। তবে মেব্যাংকের সাইফি বলছেন, এখনো চাহিদা তুঙ্গে, এবং TikTok-এর মতো কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ বাড়ছে। তাঁর ভাষায়, “মালয়েশিয়ায় এখনো পর্যাপ্ত জমি বিদ্যুৎ-পানির ব্যবস্থা রয়েছে।

 

সূত্র: ফোর্বস

রবিউল হাসান

×