ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৪ এপ্রিল ২০২৫, ১ বৈশাখ ১৪৩২

চোখের মণি আর শ্বাসপ্রশ্বাসের গভীর সম্পর্ক! বিজ্ঞানীদের অবিশ্বাস্য আবিষ্কার

প্রকাশিত: ০৮:১০, ১৩ এপ্রিল ২০২৫; আপডেট: ০৮:১১, ১৩ এপ্রিল ২০২৫

চোখের মণি আর শ্বাসপ্রশ্বাসের গভীর সম্পর্ক! বিজ্ঞানীদের অবিশ্বাস্য আবিষ্কার

সংগৃহীত

চোখ নাকি আত্মার জানালা,এ কথা তো শোনা যায় প্রায়ই। তবে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় বিজ্ঞানীরা জানালেন, চোখ আমাদের অনুভূতির জানালাই নয়, বরং শ্বাসপ্রশ্বাসের ছন্দের সঙ্গেও রয়েছে এর গভীর এক যোগসূত্র।সুইডেনের কারোলিনস্কা ইনস্টিটিউট এবং নেদারল্যান্ডসের গ্রোনিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা নতুন এক গবেষণায় দেখিয়েছেন, আমাদের চোখের মণি,যা আমরা pupil হিসেবে জানি,তা শুধু আলো কিংবা আবেগে নয়, বরং নিশ্বাস নেওয়া ও ছাড়ার সঙ্গেও তাল মিলিয়ে আকার বদলায়।

 

চোখের মণি আর শুধু আলোর প্রতিক্রিয়া নয়
চোখের মণির মূল কাজ হল আলো নিয়ন্ত্রণ করা। যেমন,অন্ধকারে বড় হয়ে আলো ধরতে চায়, আর আলোতে ছোট হয়ে চোখকে রক্ষা করে। কিন্তু এটিই সব নয়। আবেগ, মনোযোগ, মানসিক চাপ এমনকি কাছে বা দূরের দিকে তাকানো-সব কিছুর সঙ্গেই চোখের মণি প্রতিক্রিয়া দেখায়।

জার্মান গবেষক আইরিন লোয়েনফেল্ড এক সময় বলেছিলেন, “মানুষ আবেগে লজ্জায় লাল হতে পারে কিংবা ভয় পেয়ে ফ্যাকাসে হয়ে যেতে পারে, কিন্তু তার চোখের মণি সবসময় প্রশস্ত হয়।”

নতুন সংযোজন: নিশ্বাস-নির্ভর প্রতিক্রিয়া
গবেষকেরা এখন বলছেন, চোখের মণির একটি চতুর্থ প্রকারের প্রতিক্রিয়া রয়েছে, যার নাম দিয়েছেন “Pupillary Respiratory Phase Response”। পরীক্ষায় দেখা গেছে, আমাদের চোখের মণি সবচেয়ে বড় হয় নিশ্বাস ছাড়ার সময় এবং সবচেয়ে ছোট থাকে নিশ্বাস নেওয়ার শুরুতে।

এই প্রতিক্রিয়াটি অন্য সব প্রতিক্রিয়ার মতো বাহ্যিক নয়; বরং এটি শরীরের অভ্যন্তরীণ ছন্দের সঙ্গে গড়ে ওঠে। এটি সবসময়ই ঘটে এবং একসঙ্গে মণি বড় হওয়া ও ছোট হওয়া,দুই প্রক্রিয়ারই প্রতিনিধিত্ব করে।

পরীক্ষা কী বলছে?
এই আবিষ্কারের জন্য গবেষকেরা পাঁচটি আলাদা পরীক্ষা চালিয়েছেন ২০০ জনের বেশি মানুষের ওপর। অংশগ্রহণকারীদের বিশ্রাম অবস্থায় বা নির্দিষ্ট কিছু কাজ করার সময় তাদের শ্বাসপ্রশ্বাসের ছন্দ ও চোখের মণির আকার একই সঙ্গে রেকর্ড করা হয়। আলোর তারতম্য, দৃষ্টির দূরত্ব, মানসিক চাপ,সব কিছু বদলানোর পরও দেখা যায়, শ্বাস নেওয়া ও ছাড়ার সঙ্গে মণির আকার পরিবর্তনের এই ধারাটি একইভাবে চলেছে।

 

নাক বা মুখ দিয়ে শ্বাস নেওয়া কিংবা শ্বাসের গতি কমানো-বাড়ানো,সব ক্ষেত্রেই ফলাফল এক: শ্বাস নেওয়ার সময় মণি ছোট, আর ছাড়ার সময় বড়।

কী বদলাবে এই আবিষ্কারে?
এই প্রতিক্রিয়ার মাত্রা খুবই ক্ষুদ্র,মাত্র মিলিমিটারের ভগ্নাংশ। কিন্তু তা যথেষ্ট আমাদের দৃষ্টিশক্তিকে প্রভাবিত করার জন্য। যেমন, বড় মণি ঝাপসা আলো বা দূরের বস্তু ধরতে সাহায্য করে, আর ছোট মণি সূক্ষ্মতা বাড়ায়—যেমন লেখাপড়ার সময় প্রয়োজন হয়।

গবেষকদের ধারণা, একেকটি শ্বাসের মধ্যে দিয়েই আমাদের দৃষ্টিশক্তি সূক্ষ্মতা ও সংবেদনশীলতার মধ্যে দোল খায়।


চোখের আলো প্রতিক্রিয়া যেমন চিকিৎসায় কাজে লাগে, তেমনি এই শ্বাসপ্রশ্বাস-নির্ভর প্রতিক্রিয়াও হতে পারে কোনো স্নায়বিক রোগ বা মানসিক সমস্যার আগাম সংকেত।এটি আমাদের বোঝায়,শুধু বাইরের জগৎ নয়, আমাদের দেহের অভ্যন্তরীণ ছন্দও গোপনে প্রভাব ফেলে আমাদের উপলব্ধি ও দৃষ্টিভঙ্গিতে।

হৃদস্পন্দন, হজম প্রক্রিয়া কিংবা এখন এই শ্বাসপ্রশ্বাস,সবই জানান দিচ্ছে, শরীর আর মন একে অপরের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত।

তাহলে প্রশ্ন থেকেই যায়,একটি নিঃশ্বাস কি বদলে দিতে পারে আপনি কীভাবে দেখছেন এই পৃথিবীকে?সম্ভবত হ্যাঁ। আর বিজ্ঞান এখন বলছে, সেটা হচ্ছে প্রতিটি শ্বাসে, প্রতিটি দৃষ্টিতে।

 


সূত্র:https://tinyurl.com/4nb9y6wa

আফরোজা

×