
ছবি: সংগৃহীত
বিজ্ঞানীদের সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, ব্ল্যাক হোলের কাছে সময়ের প্রবাহ এতটাই ধীর হয়ে যায় যে পৃথিবীর হাজার বছর সেখানে মাত্র কয়েক ঘণ্টার মতো অনুভূত হতে পারে। আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতাবাদ অনুসারে, মাধ্যাকর্ষণ শুধু স্থানকেই নয়, সময়কেও বাঁকিয়ে দেয়। আর ব্ল্যাক হোলের বিশাল মাধ্যাকর্ষণ শক্তি এটিকে একধরনের প্রাকৃতিক টাইম মেশিনে পরিণত করতে পারে।
যত বেশি মাধ্যাকর্ষণ শক্তিশালী হয়, তত বেশি স্পেসটাইম বাঁকানো হয়, ফলে সময় ধীর গতিতে প্রবাহিত হয়। বিজ্ঞানীদের মতে, যদি কেউ ব্ল্যাক হোলের আশেপাশে গিয়ে ফিরে আসে, তাহলে সে পৃথিবীর তুলনায় ভবিষ্যতে অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারে। অর্থাৎ, এটি সময় ভ্রমণের একটি বাস্তবসম্ভব উপায়, যা পদার্থবিজ্ঞানের নিয়মের বিরোধিতা করে না।
বিস্ময়করভাবে, পবিত্র কোরআনেও সময়ের আপেক্ষিকতার ধারণা পাওয়া যায়। সুরা হাজ্জ (২২:৪৭) ও সুরা সাজদা (৩২:৫)-তে বলা হয়েছে, “আল্লাহর কাছে একদিন তোমাদের গণনার হাজার বছরের সমান।”
একইভাবে, সুরা মা’আরিজের ৪নং আয়াতের ব্যাখ্যায় অধিকাংশ মুফাসসির বলেছেনঃ এখানে কিয়ামত দিবসের পরিমাণই উদ্যেশ্য নেয়া হয়েছে। অর্থাৎ উল্লেখিত আযাব সেই সংঘটিত হবে, যে দিনের পরিমাণ পঞ্চাশ হাজার বছর। আর এই মতটির পক্ষে হাদিস রয়েছে। বিভিন্ন হাদিসে কিয়ামত দিবসের পরিমাণ ৫০,০০০ বছর বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন, যাকাত না প্রদানকারীর শাস্তির মেয়াদ বর্ণনার হাদিসে বলা হয়েছেঃ “তার এ শাস্তি চলতে থাকবে এমন এক দিনে যার পরিমাণ হবে পঞ্চাশ হাজার বছর, তারপর তার ভাগ্য নির্ধারণ হবে হয় জান্নাতের দিকে না হয় জাহান্নামের দিকে।” (মুসলিম ৯৮৭, আবু দাউদ ১৬৫৮, নাসাঈ ২৪৪২, মুসনাদ আহমাদ ২/৩৮৩)।
বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন, ব্ল্যাক হোলের আশেপাশে সময়ের প্রবাহ অত্যন্ত ধীর হয়ে যায়, যা কোরআনে উল্লেখিত আপেক্ষিক সময়ের ধারণার সঙ্গে হুবহু মিলে যায়। মহাকাশে ব্ল্যাক হোলের নিকটবর্তী অঞ্চলে সময়ের এমন প্রবাহকে পদার্থবিদরা ‘টাইম ডাইলেশন’ বা সময় সম্প্রসারণ বলে থাকেন। এ প্রসঙ্গে বিজ্ঞানীরা বলছেন, মহাবিশ্বে সময়ের এই আপেক্ষিক প্রকৃতি সম্পর্কে আধুনিক বিজ্ঞান যতই নতুন তথ্য উদঘাটন করছে, ততই তা কোরআনের বহু আগের উক্তির সঙ্গে মিলে যাচ্ছে।
তবে ব্ল্যাক হোলের ইভেন্ট হরাইজন অতিক্রম করা অত্যন্ত বিপজ্জনক, কারণ এতে প্রবেশ করলে কেউ আর ফিরে আসতে পারবে না। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, ব্ল্যাক হোলের গভীরে “ক্লোজড টাইমলাইক কার্ভ” নামক সময়ের লুপ থাকতে পারে, যা অতীতে ভ্রমণের সম্ভাবনাও তৈরি করতে পারে।
এই গবেষণা আবারও দেখিয়ে দিল যে আধুনিক বিজ্ঞান সময় সম্পর্কে যে সত্য উদ্ঘাটন করছে, তা কোরআনের বক্তব্যের সঙ্গে অভূতপূর্বভাবে মিলে যাচ্ছে। এতে বিস্মিত বিজ্ঞানীরাও বলছেন, সময়ের এই আপেক্ষিকতা সম্পর্কে হাজার বছর আগেই কোরআনে যে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল, তা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ!
সূত্র: এস্ট্রোনমি ডট কম এবং কোরআন ও হাদীসের তথ্যের আলোকে
মেহেদী কাউসার