ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ৩১ মার্চ ২০২৫, ১৭ চৈত্র ১৪৩১

কিন্ডল প্রজন্মের পাঠাভ্যাস

শেরিফ ফারুকী

প্রকাশিত: ১৯:১১, ২৮ মার্চ ২০২৫

কিন্ডল প্রজন্মের পাঠাভ্যাস

ঢাকার মতো যানজটের শহরে বাসে বসে বসে যখন ফোন স্ক্রল করছেন, ঠিক একই সময় আরেকজন পড়ছে বই। কিন্তু বই বহন করে নিয়ে যাওয়া কি সহজ? বই বহন না করেও যদি বইয়ের কাছাকাছি অনুভূতি পাওয়া যায়? এই জায়গাতেই আসে কিন্ডল, বই পড়ার যন্ত্র।
কেন কিন্ডল?
ফোনে পিডিএফ পড়ার চেয়ে কিন্ডলে পড়া আরামদায়ক। কারণ ফোন থেকে নির্গত রশ্মি চোখের ক্ষতি করে, আর কিন্ডল ডিজাইন করা হয়েছে চোখের জন্য আরামদায়কভাবে। এটি ব্যবহার করলে কাগজের বইয়ের মতোই অনুভূতি পাওয়া যায়। কিন্ডল মানেই একটি গোটা লাইব্রেরি হাতে নিয়ে হাঁটার সুযোগ। তবে এখানে কিছু বই ফ্রি থাকলেও বেশিরভাগ বই কিনতে হয়।
কেন কিন্ডল আলাদা? অন্যান্য ডিজিটাল ডিভাইস মনোযোগ বিচ্ছিন্ন করে, কিন্তু কিন্ডল মনোযোগ ধরে রাখে। গবেষণা বলছে, ২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা প্রতিদিন গড়ে ৬ ঘণ্টা ৩৬ মিনিট অনলাইনে কাটিয়েছেন, যার বড় অংশ গেছে নোটিফিকেশন চেক করতে। কিন্ডল এমন এক ডিজিটাল ডিভাইস, যা নোটিফিকেশন মুক্ত, ফলে একটানা পড়তে কোনো সমস্যা হয় না।
কিন্ডলের রকমফের

হ ই-ইঙ্ক প্রযুক্তি: কিন্ডল ই-ইঙ্ক ডিসপ্লে ব্যবহার করে, যা সাধারণ স্ক্রিনের মতো চোখের উপর চাপ ফেলে না। সূর্যের আলোতেও কাগজের বইয়ের মতো স্বাভাবিকভাবে পড়া যায়।
হ বেসিক কিন্ডল (১০ম জেনারেশন): ৮ গিগাবাইট স্টোরেজ, যেখানে প্রায় ৫,০০০ বই সংরক্ষণ করা যায়। বাস্তব কাগজের বইয়ের মতোই অনুভূতি দেয়।
হ কিন্ডল পেপারহোয়াইট ফোর: ৮-৩২ গিগাবাইট স্টোরেজ। রাতে পড়ার সুবিধার জন্য ভেতর থেকে আলো দেয়, যা চোখের ক্ষতি করে না।
হ কিন্ডল পেপারহোয়াইট ফাইভ: তুলনামূলক পাতলা, ৬.৮ ইঞ্চি ডিসপ্লে, একবার চার্জ দিলে ১ মাস বা তার বেশি সময় চলে।
হ কিন্ডল স্ক্রাইব: উন্নত ফিচারসহ ডিজিটাল নোট নেওয়ার সুবিধা।
হ চোখের জন্য নিরাপদ ও স্বস্তিকর ফন্ট: ফোন বা ট্যাবের স্ক্রিনের ব্লু লাইট চোখের উপর চাপ ফেলে, ঘুমের সমস্যা করে। কিন্ডলে কোনো ব্লু লাইট নেই, ফলে দীর্ঘক্ষণ পড়লেও চোখের উপর চাপ পড়ে না। গবেষণা বা অধ্যয়নের জন্য এটি আদর্শ। আবার যাদের একটু বয়স বেশি তাদের জন্য একটু বড় অক্ষরের দরকার হতে পারে। কিন্ডলে সহজেই ফন্ট সাইজ বড় করা যায়, ফলে বয়স্ক মানুষদের জন্যও এটি উপযোগী।
বই কেনা ও ধার নেওয়া
আগে দোকান থেকে সিডি ক্যাসেট, মাসুদ রানা সিরিজ ইত্যাদি ধার করে পড়তো লোকে। কিন্ডলে সেই সুবিধাও আছে। ওভারড্রাইভ ও লিব্বি প্ল্যাটফর্ম থেকে লাইব্রেরির মতো ই-বুক ধার নেওয়া যায়। এছাড়া, যারা আরও কাস্টমাইজেশন চায়, তারা কোবো লিবরা বা কোবো এলিপসা বেছে নেয়। কোবোতে পিডিএফ ফাইল সহজে ব্যবহার করা যায় এবং নোট নেওয়ার সুযোগ বেশি।
বাংলাদেশে কিন্ডল
বাংলাদেশে কিন্ডল অফিসিয়ালি আসে না, তবে কিছু দোকানে আমদানি করা হয়। পাওয়া যায় ফেসবুক গ্রুপ ও পেজে, যেমন ‘কিন্ডল বাংলাদেশ’, যেখানে নতুন ও সেকেন্ড-হ্যান্ড কিন্ডল কেনাবেচা হয়। এছাড়া দারাজ, আজকের ডিল, আলিবাবা থেকেও কেনা যায়।
কিন্ডল কি সবার জন্য?
যদি নিয়মিত বই কিনতে হয়, তবে লং-টার্মে কিন্ডল সাশ্রয়ী। প্রিন্টেড বইয়ের তুলনায় ই-বুক অনেক সস্তা। যারা মাসে ২-৩টা বই কিনেন, তারা কয়েক মাসেই কিন্ডলের দাম পুষিয়ে ফেলতে পারেন। একবার কিন্ডল অভ্যাস হয়ে গেলে কাগজের বইয়ে ফেরা কঠিন। বিশেষ করে গবেষণা বা নিয়মিত পড়ার ক্ষেত্রে এটি অসাধারণ।
কিন্ডলের দরদাম
কিন্ডলের দাম মডেল অনুযায়ী ভিন্ন হয়। সেকেন্ড-হ্যান্ড কিন্ডল তুলনামূলক সস্তা, তবে কেনার আগে ব্যাটারি ও স্ক্রিন ভালোভাবে দেখে নেওয়া দরকার। কিন্ডল বাংলাদেশের ওয়েবসাইটে সর্বনিম্ন দাম ‘কিন্ডল কি-বোর্ড সিক্স’ মডেলের, দাম রাখা হয়েছে ৭ হাজার। আর সর্বোচ্চ  ‘কিন্ডল স্ক্রাইব’, এর দাম রাখা হয়েছে ৪৭ হাজার টাকা।

×