ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ৩১ মার্চ ২০২৫, ১৭ চৈত্র ১৪৩১

মানুষের শরীরে শূকরের লিভার প্রতিস্থাপন করে চীনের নজির স্থাপন

প্রকাশিত: ১২:০৯, ২৭ মার্চ ২০২৫; আপডেট: ১২:৩৩, ২৭ মার্চ ২০২৫

মানুষের শরীরে শূকরের লিভার প্রতিস্থাপন করে চীনের নজির স্থাপন

ছবি: সংগৃহীত।

চীনের চিকিৎসকরা বুধবার ঘোষণা করেছেন যে, তারা প্রথমবারের মতো একটি জিনগতভাবে পরিবর্তিত শূকরের লিভার একজন মস্তিষ্ক-মৃত মানুষের শরীরে সফলভাবে প্রতিস্থাপন করেছেন। এই ঘটনাটি চিকিৎসা ক্ষেত্রে একটি বড় দিগন্ত উন্মোচন করেছে এবং ভবিষ্যতে জীবন রক্ষাকারী অঙ্গদানের নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। শূকরের অঙ্গগুলোকে এখন পৃথিবীর সবচেয়ে উপযুক্ত প্রাণীজ দাতা হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। গত কয়েক বছরে যুক্তরাষ্ট্রে বেশ কয়েকটি সফল শূকরের কিডনি বা হৃদয় প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। তবে শূকরের লিভার প্রতিস্থাপন বেশ জটিল ছিল এবং এর আগে কোনো পরীক্ষামূলক প্রতিস্থাপন মানুষের শরীরে করা হয়নি।

বিশ্বজুড়ে লিভার দানের চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে, এবং এই পরিস্থিতিতে গবেষকরা আশাবাদী যে, জিন-সম্পাদিত শূকরের লিভার গুরুতর অসুস্থ রোগীদের জন্য অন্তত সাময়িক স্বস্তি এনে দিতে সক্ষম হবে, যারা দীর্ঘ সময় ধরে মানব দাতার অপেক্ষায় রয়েছেন। চীনের শিয়ান শহরে অবস্থিত ফোর্থ মিলিটারি মেডিকেল ইউনিভার্সিটির চিকিৎসকরা ‘নেচার’ নামক বিশ্ববিখ্যাত জার্নালে এই গবেষণার সাফল্য প্রকাশ করেছেন।

গবেষণা অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ১০ মার্চ শিয়ানের ওই হাসপাতালে একটি ক্ষুদ্রাকৃতির শূকরের লিভার একজন মস্তিষ্ক-মৃত প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়। এই শূকরের লিভারের ছয়টি জিন সম্পাদনা করা হয়েছিল, যাতে এটি মানুষের শরীরে দাতা হিসেবে আরও উপযুক্ত হয়ে ওঠে। পরীক্ষাটি ১০ দিন পর রোগীর পরিবারের অনুরোধে সমাপ্ত করা হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এই প্রক্রিয়ায় তারা কঠোর নৈতিক নির্দেশিকা অনুসরণ করেছেন।

অন্যান্য গবেষকরা এই সাফল্যের প্রশংসা করলেও সতর্ক করে বলেছেন যে, এটি একটি প্রাথমিক পর্যায়ের পদক্ষেপ। এই পরীক্ষাটি এখনও নিশ্চিত করতে পারেনি যে শূকরের লিভার মানুষের লিভারের পূর্ণাঙ্গ বিকল্প হতে পারবে কি না। লিন ওয়াং ব্যাখ্যা করেন, "হৃদয় যেখানে শুধু রক্ত পাম্প করে, সেখানে লিভারের কার্যকারিতা অনেক বেশি জটিল।" লিভার শরীরের রক্ত ফিল্টার করে, ওষুধ বা অ্যালকোহলের মতো উপাদান ভেঙে ফেলে এবং পিত্ত উৎপাদন করে, যা বর্জ্য দূর করে এবং চর্বি ভাঙতে সাহায্য করে।

এই পরীক্ষায় দেখা গেছে, শূকরের লিভার মানুষের লিভারের তুলনায় অনেক কম পরিমাণে পিত্ত এবং অ্যালবুমিন উৎপাদন করেছে। লিন জানিয়েছেন, এ বিষয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন এবং বিশেষভাবে ১০ দিনের বেশি সময় ধরে শূকরের লিভারের কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণ করা উচিত। তিনি জানান, পরবর্তী ধাপে তারা জীবিত মানুষের শরীরে এই জিন-সম্পাদিত শূকরের লিভার পরীক্ষা করার পরিকল্পনা করছেন।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিস্থাপন বিশেষজ্ঞ পিটার ফ্রেন্ড, যিনি এই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না, এই ফলাফলকে "মূল্যবান এবং চিত্তাকর্ষক" বলে অভিহিত করেছেন। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, “এটি নিকট ভবিষ্যতে মানব দাতার লিভারের প্রতিস্থাপন হতে পারে না। তবে এটি জিনগতভাবে পরিবর্তিত লিভারের মানুষের সঙ্গে সামঞ্জস্যতা পরীক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ এবং ভবিষ্যতে লিভার বিকল রোগীদের সহায়তা প্রদানের সম্ভাবনা দেখায়।”

নুসরাত

×