
ছবি: সংগৃহীত।
বিদ্যুৎ শক্তি আধুনিক বিশ্বের সবচেয়ে অপরিহার্য সম্পদ। এর বিকল্প এখনো কল্পনার বাইরে, কারণ বিদ্যুৎ ছাড়া মানবসভ্যতা কার্যত স্থবির হয়ে পড়বে। তবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রচুর জ্বালানির প্রয়োজন হয়, যা পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এই ক্ষতি কমানোর জন্য বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন সময়ে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। সৌর ও বায়ুশক্তির মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রচলিত পদ্ধতি কিছুটা পরিবেশবান্ধব হলেও, তাতেও কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
পৃথিবীর ঘূর্ণন শক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের নতুন আবিষ্কার
সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী বিদ্যুৎ উৎপাদনের নতুন এক কৌশল আবিষ্কার করেছেন, যা বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। তারা পৃথিবীর ঘূর্ণন শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের একটি পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন।
২০১৬ সালে প্রথম পৃথিবীর চুম্বক ক্ষেত্র ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা নিয়ে একটি গবেষণা প্রকাশিত হয়। তবে তখন এটি বিশেষ গুরুত্ব পায়নি। এবার প্রিন্সটনের বিজ্ঞানীরা ম্যাঙ্গানিজ-জিংক ফেরাইট নামক পদার্থ দিয়ে একটি সিলিন্ডার আকৃতির যন্ত্র তৈরি করেছেন, যার দৈর্ঘ্য মাত্র এক ফুট। পরীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে, এই যন্ত্রটি পৃথিবীর ঘূর্ণন শক্তি ব্যবহার করে ১৭ মাইক্রোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছে।
নতুন আবিষ্কার সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের মতামত
প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী ক্রিস্টোফার সাইবা বলেন, "পৃথিবীর পৃষ্ঠের সাপেক্ষে স্থির থাকা কোনো পরিবাহীর চুম্বক ক্ষেত্র থেকে শক্তি উৎপন্ন করতে পারে না—এই প্রচলিত ধারণাকে ভুল প্রমাণ করেছে আমাদের যন্ত্রটি।"
বিদ্যুৎ উৎপাদনের এই নতুন কৌশলটি ফিজিক্যাল রিভিউ রিসার্চ সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে এবং প্রযুক্তি বিশ্বের জন্য এটি এক বিপ্লবাত্মক আবিষ্কার হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
ভবিষ্যতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা
যদি এই প্রযুক্তি সফলভাবে কাজে লাগানো যায়, তবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে। এতে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমবে এবং পরিবেশের ক্ষতিও হ্রাস পাবে। বিশেষ করে, নবায়নযোগ্য শক্তির ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হতে পারে।
বিজ্ঞানীদের মতে, এই প্রযুক্তি ভবিষ্যতে বিশ্বব্যাপী শক্তির অন্যতম প্রধান উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে, যা পরিবেশবান্ধব এবং টেকসই উন্নয়নের পথে এক গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি আনবে।
শিলা ইসলাম