ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৩ মার্চ ২০২৫, ৯ চৈত্র ১৪৩১

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সমাজের জন্য ভালো কি না?

প্রকাশিত: ২০:২৭, ২২ মার্চ ২০২৫

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সমাজের জন্য ভালো কি না?

ছবি: সংগৃহীত

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এ আই) সমাজের জন্য ভালো নাকি খারাপ, তা নির্ভর করে এটি কীভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে তার ওপর। 

( আই বি এম)-এর মতে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা  বলতে বোঝায়কম্পিউটার এবং মেশিনের মাধ্যমে মানব মস্তিষ্কের সমস্যা সমাধান এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতাকে অনুকরণ করা

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এর ধারণা কমপক্ষে ,৭০০ বছর আগের।ইতিহাসবিদ এডরিন মেয়র ও  ইন্টার্ন্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের-গবেষক, লোককাহিনীবিদ, এবং বিজ্ঞান ইতিহাসবিদ ব্যাখ্যা করেছেন: “কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কল্পনা করার ক্ষমতা আমাদের প্রাচীনকাল থেকেই আছে। প্রযুক্তিগত অগ্রগতি হওয়ার বহু আগেই, কৃত্রিম জীবন রোবট তৈরি করার ধারণা প্রাচীন মিথে পাওয়া যায়।

উদাহরণস্বরূপ, গ্রিক দেবতা হিপেয়াসটাস-এর মিথে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা -এর পূর্বসূরি হিসেবে কিছু কাহিনি রয়েছে। তিনি তৈরি করেছিলেন ব্রোঞ্জের বিশাল মানব টেলস, যার মধ্যে ছিল দেবতাদের দেওয়া এক রহস্যময় জীবনশক্তি।

মেয়র ব্যাখ্যা করেন, “এসব মিথে কখনোই ভালো পরিণতি দেখা যায় না, যখন কৃত্রিম সৃষ্টি পৃথিবীতে পাঠানো হয়। যা দেবতাদের জন্য ভাল হলেও মানুষদের সাথে মিশলে তা বিশৃঙ্খলা আর ধ্বংস ডেকে আনে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার-এর জনক হিসেবে পরিচিত জন ম্যাকারর্থী  “এআই”  শব্দটি তৈরি করেন, এবং তিনি এআইকে সংজ্ঞায়িত করেনবুদ্ধিমান মেশিন তৈরির বিজ্ঞান প্রকৌশল’’ হিসেবে।

১৯৫০-এর দশকে এই প্রযুক্তির দ্রুত বিকাশ ঘটে। ১৯৬০ এবং ৭০-এর দশকে কম্পিউটার সস্তা হওয়ায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রোগ্রাম আরও প্রসার লাভ করে, এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা উন্নয়ন গবেষণা সংস্থা (ডারপা) কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কিত গবেষণায় তহবিল দেওয়া শুরু করে। তবে, কম্পিউটার তখনো গবেষকদের চাহিদা মাফিক ভাষাগত কাজ সম্পন্ন করতে সক্ষম ছিল না। পরবর্তী সময়ে, ১৯৮০ ৯০-এর দশকে নতুন করে তহবিল আসায় (এ আই)গবেষণার গতি বৃদ্ধি পায়।

আধুনিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার-এর ধারণা মূলত শুরু হয়েছিল অ্যালান  টারিং-এর মাধ্যমে, যিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাজি এনিগমা কোড ভেঙে দিয়েছিলেন। তিনি তৈরি করেছিলেনটারিং টেস্ট”, যা যাচাই করে একটি কম্পিউটারচিন্তাকরতে সক্ষম কি না। এই পরীক্ষার মূল্য এবং বৈধতা নিয়ে আজও বিতর্ক রয়েছে।

সাম্প্রতিককালে, কম্পিউটার স্টোরেজ এবং প্রসেসিং ক্ষমতার উন্নতির ফলে (এ আই)গবেষণা প্রয়োগের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। এটি বৈজ্ঞানিক গবেষণা, রোগ নির্ণয়, রোবটিক সার্জারি, এবং ওষুধ উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। আজ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আমাদের জীবনের বহু ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে।

মুখ শনাক্তকরণ সফটওয়্যার, অনলাইন শপিং, অ্যালগরিদম সার্চ ইঞ্জিন, ডিজিটাল সহকারী, স্বয়ংক্রিয় গাড়ির নিরাপত্তা ব্যবস্থা, সাইবার নিরাপত্তা, বিমানবন্দরে দেহ স্ক্যানিং প্রযুক্তি, পোকারের কৌশলগত খেলা, সামাজিক মাধ্যমে ভুয়া তথ্যের বিরুদ্ধে লড়াই। কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায়: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি সমাজের জন্য ভালো? 

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে, তবে এটি কিছু চ্যালেঞ্জও তৈরি করেছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যদি মানব সমাজের কল্যাণের জন্য ব্যবহার করা হয়, তবে এটি সমাজে বিপ্লব ঘটাতে পারে। তবে, এর অতি ব্যবহারে কাজ হারানোর ঝুঁকি, গোপনীয়তা লঙ্ঘন, এবং নৈতিক প্রশ্ন তৈরি হতে পারে।

 

মেহেদী হাসান

×