
ছবি: সংগৃহীত
ফেসবুক রিলস এখন ডিজিটাল দুনিয়ার অন্যতম জনপ্রিয় মাধ্যম। ছোট ছোট ভিডিও ক্লিপের মাধ্যমে বিনোদন দেওয়ার পাশাপাশি এটি আমাদের মনস্তত্ত্বেও গভীর প্রভাব ফেলছে। আপনি কি কখনো ভেবেছেন, কেন একবার রিলস দেখা শুরু করলে তা থামানো কঠিন হয়ে যায়? এর পেছনে রয়েছে আমাদের মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট কার্যপ্রক্রিয়া, যা প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো সুচতুরভাবে ব্যবহার করছে।
ডোপামিনের খেলায় আটকে যাওয়া
আমাদের মস্তিষ্কের ‘রিওয়ার্ড সিস্টেম’ বা পুরস্কার প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে ডোপামিন নামক এক ধরনের নিউরোট্রান্সমিটার। যুক্তরাষ্ট্রের মনোবিজ্ঞানী ড্যানিয়েল জে. লেভিটিন তার গবেষণায় উল্লেখ করেন, "ছোট ছোট ভিডিও ক্লিপ বা স্ন্যাকেবল কনটেন্ট আমাদের মস্তিষ্কে একধরনের ক্ষণস্থায়ী আনন্দ তৈরি করে, যা আমাদের বারবার স্ক্রল করতে বাধ্য করে।" এই অনুভূতিকে বলা হয় ডোপামিন লুপ। অর্থাৎ, যতবার আমরা নতুন কিছু দেখি, ততবার মস্তিষ্ক একটি ক্ষুদ্র পরিমাণ ডোপামিন নিঃসরণ করে, যা আমাদের আনন্দ দেয় এবং আরও দেখতে উদ্বুদ্ধ করে।
মনোযোগ কমিয়ে দিচ্ছে ফাস্ট কনটেন্ট
শর্ট ভিডিওর প্রতি অতিরিক্ত আসক্তি আমাদের মনোযোগের স্থায়িত্ব কমিয়ে দিচ্ছে। ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞানী গ্লোরিয়া মার্ক তার গবেষণায় দেখিয়েছেন, একজন ব্যক্তি যখন ক্রমাগত ছোট ভিডিও দেখে, তখন তার মনোযোগ খুব দ্রুত এক বিষয় থেকে অন্য বিষয়ের দিকে সরতে থাকে। এর ফলে দীর্ঘমেয়াদি মনোযোগের দক্ষতা হ্রাস পায়, যা পড়াশোনা বা কাজের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
ব্যবহারকারীদের নিয়ন্ত্রণ করছে অ্যালগরিদম
ফেসবুক ও অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোর অ্যালগরিদম এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, যাতে ব্যবহারকারীরা যত বেশি সময় প্ল্যাটফর্মে থাকে, তত বেশি বিজ্ঞাপন দেখানো যায়। ট্রিস্টান হ্যারিস, যিনি একসময় গুগলের নীতিনির্ধারক ছিলেন এবং এখন ‘Center for Humane Technology’-এর প্রতিষ্ঠাতা, বলেন, “সোশ্যাল মিডিয়ার অ্যালগরিদম এমনভাবে কাজ করে, যা মানুষের প্রাকৃতিক কৌতূহলকে কাজে লাগিয়ে তাদের স্ক্রিনের সামনে আটকে রাখে।” তিনি এটিকে “Attention Economy” বা মনোযোগ-ভিত্তিক অর্থনীতি হিসেবে উল্লেখ করেন, যেখানে আমাদের সময়ই মূল পণ্য।
আপনার করণীয় কী?
আপনার যদি মনে হয়, আপনি ফেসবুক রিলসে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করছেন, তাহলে কিছু পদক্ষেপ নিতে পারেন—
✔ নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করুন: দৈনিক কতক্ষণ সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করবেন, তা আগেই ঠিক করে নিন।
✔ ডিজিটাল ডিটক্স করুন: সপ্তাহে একদিন বা নির্দিষ্ট সময়ে ফোন থেকে দূরে থাকুন।
✔ মস্তিষ্ককে প্রশিক্ষিত করুন: বই পড়া, গভীর চিন্তা করা বা কোনো নতুন দক্ষতা অর্জনে সময় দিন, যা মনোযোগ বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
✔ নোটিফিকেশন বন্ধ করুন: রিলস দেখার প্রতি আকর্ষণ কমানোর জন্য অপ্রয়োজনীয় নোটিফিকেশন বন্ধ করুন।
আসিফ